Opinion poll

নিজেদের উত্তর নিজেরাই গুলিয়ে ফেলেছে ‘সমীক্ষা’

রাজ্য

তৃণমূল হারছে। গ্রামে গ্রামে মানুষের প্রতিক্রিয়ায় তা স্পষ্ট। এখন নতুন কৌশল নেওয়া হচ্ছে। সমীক্ষার নামে দেখানো হচ্ছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানুষ খুবই ক্ষুব্ধ ঠিকই। কিন্তু তবু তারা বেশিরভাগ আসনে জিতবে। আর তৃণমূলের চুরি, স্বজনপোষণ, অত্যাচারে ক্ষুব্ধ মানুষের একাংশ বিজেপি-কেই তাদের প্রধান পছন্দ হিসাবে চাইছেন। যদিও তৃণমূল এবং বিজেপি’র মধ্যে চমৎকার সেটিং আছে — তাও জানাচ্ছেন মানুষ।
সমীক্ষার নামে আসলে বামফ্রন্ট এবং তাদের সহযোগীদের হতাশ করার চক্রান্ত হচ্ছে। আর গ্রামে পিছু হটা, কোথাও কোথাও রীতিমতো তাড়া খাওয়া তৃণমূলের কর্মীদের সাহস জোগানোর চেষ্টা হচ্ছে সেই সমীক্ষার নামে।
তেমনই একটি সমীক্ষার রিপোর্ট শুক্রবার প্রকাশিত হয়েছে। রিপোর্টে জানানো হয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদেই বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং তাদের সহযোগীদের ফলাফল তুলনামূলক ভালো হবে। তাও সেখানে নাকি তৃণমূলের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে তাদের। বাকি সব জেলাতেই অনেক পিছিয়ে বামফ্রন্ট এবং তাদের সহযোগীরা। প্রায় সব জেলা পরিষদেই বিজেপি দ্বিতীয় শক্তি — তাই নাকি সমীক্ষায় জানা গেছে।
কিন্তু যে সমীক্ষায় এই ফল জানা গেল, সেখানে প্রশ্ন কেমন ছিল? প্রশ্ন ছিল ইডি, সিবিআই’র তদন্ত কি মাথা পর্যন্ত পৌঁছবে? নাকি রাজনীতির খেলায় ধামাচাপা পড়বে? ৫৩% বলছেন ‘ধামাচাপা পড়বে।’ অর্থাৎ তৃণমূল-বিজেপি’র সেটিংয়ের যে দাবি বামফ্রন্ট বরাবর করে আসছে, তাকে সত্যি মানছেন ৫৩%। ১৩% মতামত দেননি। এর মধ্যেও একটি অংশ নিশ্চিতভাবেই ‘দিদি-মোদী সেটিং’- র সত্যটি বুঝে গেছেন। অবধারিতভাবেই ইডি, সিবিআই’র তদন্তে এই মানুষের অখুশি হওয়ার কথা। কারণ, ‘মাথা’রা ধরা পড়েনি। চুনোপুঁটি নিয়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি টানা হেঁচড়া করছে। কিন্তু না ! সমীক্ষার আর একটি এই সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব রীতিমতো বিভ্রান্তিকর। সেখানে প্রশ্ন ছিল ইডি, সিবিআই যে গতিতে দুর্নীতির তদন্ত করছে, তাতে আপনি খুশি? ‘হ্যাঁ’ নাকি বলেছেন ৫৬%। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার কাজে খুশি, কিন্তু তারা তৃণমূল-বিজেপি’র সেটিং মেনেই চলছে — দুটি সম্পূর্ণ বিপরীত মনোভাব কী করে একই ভোটদাতার মাথায় থাকতে পারে? 
থাকতে পারে সমীক্ষক দলের মাথায়। তাঁরা গুলিয়ে ফেলেছেন। আসলে তৃণমূলকে টাইট দিতে পারে বিজেপি’ই — এই ধারণা যদি মানুষের মধ্যে এখনও আছে প্রমাণ করতে হয়, তাহলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কাজে মানুষের সিংহভাগ খুশি দেখাতেই হবে। 
বিভ্রান্তি ছড়ানোর আরও চেষ্টা হয়েছে। যেমন, প্রশ্ন নাকি ছিল, সিপিআই(এম)-কংগ্রেসের তোলা মমতা-মোদী সেটিং তত্ত্ব কি পঞ্চায়েত ভোটে প্রভাব ফেলবে? এর উত্তরে নাকি ৪৭%, সিংহভাগ মানুষ ‘না’ বলেছেন। ‘হ্যাঁ’ বলা মানুষ নাকি ৩২%। ২১% নাকি কিছু বলতেই পারেননি। অথচ তাঁদেরই সিংহভাগ নাকি আবার ইডি, সিবিআই’র তদন্ত তৃণমূলের বড় নেতা, নেত্রীদের ধরবে না বলে নিশ্চিত।
পুরোটাই গোলমেলে। বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা। 
দুর্নীতি এবং কাজের দাবিতে লাগাতার লড়াই করছেন বামপন্থীরা। বামপন্থী ছাত্র, যুব, মহিলা সংগঠন বড় বড় সমাবেশ করেছে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়। কাজের দাবিতে আন্দোলনকারী মইদুল মিদ্যাকে কলকাতা পুলিশ লাঠি মেরে খুন করেছে। সিঙ্গুরে কারখানার সম্ভাবনা মমতা ব্যানার্জির ধ্বংস করা এই নির্বাচনেও ইস্যু। আবার ‘চোর তাড়াও’ আন্দোলনকে গ্রামে গ্রামে নিয়ে গেছে সিপিআই(এম)। রাজ্যে কাজের অভাব নিয়ে বিজেপি’র কোনও আন্দোলন নেই। দুর্নীতি নিয়েও তারা কোনও আন্দোলন করেনি। বরং বিভিন্ন জেলায় তৃণমূলের সঙ্গে মিলেমিশে পঞ্চায়েত চালাতে গিয়ে চুরি, দুর্নীতি করেছে বিজেপি’র পঞ্চায়েত সদস্যরাও। এমন পরিস্থিতিতে সমীক্ষায় ‘বড় ফ্যাক্টর কী’, এই প্রশ্নের জবাবে ২৫% দুর্নীতির কথা বলেছেন। ২১% কাজের অভাব, বেকারির কথা বলেছেন। অথচ সেই ভোটদাতারাই মনে করছেন জেলায় জেলায় তৃণমূল জিতবে! 
শুধু কি তাই? প্রশ্ন নাকি ছিল তৃণমূল সরকারের পারফরম্যান্স নিয়ে। সেখানে ভোটদাতারা খারাপ বলছেন ৪০%। বলতে চাননি ৯%। মাঝারি বলছেন ১৬%। অর্থাৎ মমতা ব্যানার্জির সরকারের ভূমিকার বিরুদ্ধে বেশিরভাগ মানুষ। তবু তৃণমূলকে বেশিরভাগ জেলা পরিষদে জেতাবেন মানুষ! আর তৃণমূলের সঙ্গে বোঝাপড়া করে বসে আছে বিজেপি, ভোটদাতাদের সিংহভাগ তা মনে করেও বিজেপি-কে রাজ্যে দ্বিতীয় স্থানে নিয়ে যাবেন।
পুরোটাই মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা। গুলিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ। সমীক্ষার আসল লক্ষ্য মার খেতে শুরু করা তৃণমূল, অর্থাৎ চোরদের সাহস জোগানো। যে তৃণমূল অনেক জায়গায় প্রচারেই নামতে পারছে না। অনেক জায়গায় মানুষ তাড়াও করেছেন। সেই তৃণমূল বিরোধী মানুষকে বিজেপি’র দিকে প্রভাবিত করার উদ্যোগ আছে সমীক্ষার নামে। বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে চান? আচ্ছা। তাহলে আপনি শুভেন্দুকে ভোট দিন। কিন্তু লাল ঝান্ডাকে দেবেন না। ওদের কোনও সম্ভাবনা নেই। 
এই প্রচারই গত লোকসভা নির্বাচন থেকে রাজ্যে সুকৌশলে করা হয়েছে। বিভিন্ন সংগঠন, নানা নামে, সংবাদ মাধ্যমের একাংশ সেই কথাই সমাজে গেঁথে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। ‘আগে রাম পরে বাম’ — আরএসএস-এর সেই প্রচারকে তারাই ছড়িয়েছিল। এবার সেই কথা বলা যাচ্ছে না। সবাই ধরে ফেলবে। তাই পুরানো মদ নতুন সমীক্ষার বোতলে, নানা প্রশ্ন, শতাংশের কৌশলে হাজির করা হয়েছে।
লক্ষ্য কী? 
দুর্নীতির বিরুদ্ধে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে এবং বিজেপি’র সাম্প্রদায়িকতা, মূল্যবৃদ্ধির অর্থনীতির বিরুদ্ধে লড়াকু বামপন্থী এবং তাদের সহযোগীদের দুর্বল করা।
সাতদিন বাকি। তৃণমূল হারবেই। গ্রাম তাই জানাচ্ছে। বিজেপিকেও রুখতে হবে। এই রাজ্যে বিজেপিকে ভোট মানে তৃণমূলকেই ভোট। বামফ্রন্টের শক্তি আরও বাড়বে। অনেকগুলো জেলা পরিষদ বামফ্রন্ট এবং তাদের সহযোগীরা পাবেন।
গ্রাম বলছে। আগে থেকে কী দেখাবো ঠিক করে বানানো সমীক্ষা নয়।

Comments :0

Login to leave a comment