১৯৯৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ। প্রতিযোগিতা চলকালীন ইংল্যান্ডে বসেই বাবার মৃত্যুর খবর পান শচীন তেন্ডুলকর। তৎকালীন টিম ম্যানেজমেন্টের আশ্বাসে তড়িঘড়ি দেশে ফিরে আসেন শচীন। বাবার শেষকৃত্য সম্পন্ন করেই দলের সঙ্গে যোগ দেন তিনি। পরের ম্যাচেই কেনিয়ার বিরুদ্ধে তাঁর ১৪০ রানের ইনিংস ভারতীয় ক্রিকেটের লোকগাথা। ক’দিন আগেই এরকম একটি ঘটনা ঘটেছিল ভারতীয় ক্রিকেটে।
ভারত-ইংল্যান্ডের তৃতীয় টেস্টের চলাকালীন, স্ত্রী’র মারফত, মায়ের গভীর অসুস্থতার খবর পান স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। সেদিনই অশ্বিন টেস্টে ক্রিকেটে ৫০০তম উইকেট নেওয়ার মাইলফলক গড়েছিলেন। খেলা শেষে ড্রেসিংরুমে ফিরে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বলার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু যোগাযোগ করতে পারছিলেন না কারোর সঙ্গেই। খানিকটা বিচলিত হয়ে পড়েন তিনি। কিছুক্ষণ পর, তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ হয় স্ত্রীর। তিনিই অশ্বিনকে খবর দেন, মায়ের অবস্থা খুব খারাপ। সেই খবর শুনে অসাড় হয়ে পড়েছিলেন অশ্বিন। ওই অবস্থায় কী করবেন ঠিক বুঝে উঠে পারছিলেন না? মুশকিল আসান করেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। সেদিন রোহিতের এমন সংবেদনশীল আচরণে বিস্মিত অশ্বিন। রোহিতই তাঁকে বলেন, তুমি বাড়ি ফিরে যাও। পরিবারের পাশে গিয়ে দাঁড়াও। তাঁর সঙ্গে দলের ফিজিও কমলেশকে পাঠিয়ে দেন। মাকে দেখে ফিরে এসে দলের সঙ্গে যোগ দিয়ে, দলের জয়ের অবদানও রাখেন অশ্বিন।
এদিন নিজের ইউটিউব চ্যানেলে পুরো ঘটনাটি খোলসা করলেন ভারতের কিংবদন্তি এই স্পিনার। অশ্বিন বলেন, ‘আমার ক্রিকেট কেরিয়ারে অনেক অধিনায়কের অধীনে খেলেছি। অধিনায়ক হিসাবে রোহিত আজ যে জায়গায় রয়েছে, সেটা একমাত্র রোহিতের মানসিকতার জন্য। রোহিত নিজে এসে আমাকে বলে তুমি কী ভাবছো? এখনই তৈরি হয়ে বাড়ি ফিরে যাও। ওই ঘটনার পর থেকেই রোহিতের প্রতি আমার সম্মান আরও বেড়ে গিয়েছিল। লিডার হিসাবে কতটা শ্রেষ্ঠ বুঝিয়ে দিয়েছিল সেদিন। রোহিত যেভাবে কিছু না ভেবে ক্রিকেটারদের পাশে দাঁড়ায়, তা খুবই বিরল। এমনটা করতো ধোনি। ক্রিকেটার হিসাবে রোহিত এই জায়গায় আরও দশ ধাপ এগিয়ে। এই কারণেই ক্রিকেটাররা মাঠে তাঁর জন্য জীবনও অবধি দিয়ে দিতে পারে।’
সেদিন খেলা শেষে পরিবারের কাছে থেকে শুভেচ্ছাবার্তার অপেক্ষা করছিলেন অশ্বিন। একটা ভেবেছিলেন, পরিবারের সদস্যরা হয়তো ব্যস্ত রয়েছে, সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে। তাঁদেরকে সাক্ষাৎকার দিতে। স্ত্রী তাঁকে ফোন করে বলেন খবরটি। সিরিজে এমন জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল দল, ১-১। দ্বিতীয় দিন ইংল্যান্ড বেশ জায়গায় ছিল। মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে যদি দল ছেড়ে দেন, তাহলে বিপাকে পড়বে ভারত। দশজনে খেলতে হবে ভারতকে। একটা বোলার কম নিয়ে খেলতে হবে। যে কারণে তিনি দল ছাড়তে চাইছিলেন না। অশ্বিন বলছেন, ‘ রাহুল দ্রাবিড় ও রোহিত শর্মা দু’জনই আমার ঘরে আসেন, আমার সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরাই আমাকে বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা বলে। ফিজিও কমলেশ আমার বন্ধু যেহেতু, রোহিতই তাঁকেও আমার সঙ্গে চেন্নাই যেতে বলে। চেতেশ্বর পূজারা নিজের সোর্স কাজে লাগিয়ে চার্টাড বিমানের ব্যবস্থা করে দেন, আমি তৈরি হয়ে হোটেল থেকে বাইরে বেরোই, একজন নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে কমলেশ দাঁড়িয়ে আছেন। আমি কমলেশ দলের সঙ্গে থেকে যেতে বলি। বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে কমলেশ রোহিতের সঙ্গে কথা বলতে ব্যস্ত ছিল। পরের দিন আমার ও মায়ের ব্যাপারে প্রতিটি আপডেট রেখেছে রোহিত।’
Ravichandran Ashwin
রোহিতের সংবেদনশীল আচরণে মুগ্ধ অশ্বিন
×
Comments :0