Shameless

লজ্জাহীন

সম্পাদকীয় বিভাগ

শেষপর্যন্ত সর্বোচ্চ আদালতে কার্যত কেঁদে কেটে হাতে-পায়ে ধরে ৯ মাসের জন্য আপাতত যোগ্য শিক্ষকদের চাকরি ও বেতনের বন্দোবস্ত করে ক্ষণিকের স্বস্তি  পেয়েছে রাজ্য সরকার এবং স্কুল সার্ভিস কমিশন। এমন কাকুতি মিনতিতে সর্বোচ্চ আদালত সায় দিয়েছে শুধুমাত্র রাজ্যের লক্ষ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রীদের কথা ভেবে। নতুন নিয়োগের আগে এক ধাক্কায় প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি চলে গেলে অন্ধকার নেমে আসবে পঠন-পাঠনে। এমনিতেই অপদার্থ সরকারের কল্যাণে এরাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার মুখে। ধুঁকতে ধুঁকতে কোনোরকমে টিকে থাকা বিদ্যালয় শিক্ষায় পুরোপুরি বিপর্যয়‌ নেমে আসে গত ৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টে চাকরি বাতিলের ঐতিহাসিক রায়ে।
এই অবস্থায় আপাদমস্তক দুর্নীতিতে ভরা নিয়োগ প্রক্রিয়ার দায় মাথায় নিয়ে যখন মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ করার কথা তখন তিনি তা না করে নির্লজ্জের মতো গলাবাজি করছেন। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন এবং পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছেন। সরকার তথা এসএসসি এবং পর্যদ যদি যোগ্য-অযোগ্য শিক্ষকদের আলাদা তালিকা জমা দিত তাহলে সেই তালিকা অনুযায়ী অযোগ্যদের চাকরি বাতিল করে যোগ্যদের চাকরি বহাল রাখত সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু সরকার তা করেনি। ফলে অযোগ্যদের সঙ্গে চলে গেছে যোগ্যদেরও চাকরি এবং ভয়াবহ অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে বিদ্যালয় শিক্ষায়। আর এর সবটাই করা হয়েছে ছক কষে পরিকল্পিতভাবে। শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে যে হাজার হাজার অবৈধ নিয়োগ হয়েছে সেটা আড়াল করার জন্য ওএমআর শিট সহ যাবতীয় প্রমাণও লোপাট করা হয়েছে অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে। এখন চাকরিহারা শিক্ষকদের জন্য ন্যাকা কান্না কেঁদে দায় চাপাচ্ছেন আইনজীবী ও বিরোধী দলের ওপর। সকলেই জানেন কোটি কোটি টাকা তুলে অবৈধ নিয়োগ হয়েছে।  এসএসসি, পর্ষদ, শিক্ষা দপ্তর সহ গোটা রাজ্য সরকার এবং শাসকদল নিবিড়ভাবে এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। তাদের সীমাহীন ও ক্ষমাহীন অপরাধের কারণেই এত শিক্ষকের চাকরি গেছে।
চাকরি বাতিলের নির্দেশের পর মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন এটা মানা যায় না। অর্থাৎ লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে অবৈধ চাকরিকে আদালত বৈধ বললে তিনি খুশি হয়ে মেনে নিতেন। বাংলায় এমনই এক মুখ্যমন্ত্রী দুঃশাসন চালাচ্ছেন। অথচ এসএসএস যথারীতি রায় শিরোধার্য করে ৯ মাস সময় চেয়েছে নতুন নিয়োগ পর্ব শেষ করার আগে বিপর্যয় থেকে পঠন-পাঠন রক্ষা করতে। এর থেকে শিক্ষা ব্যবস্থার কঙ্কালসার চেহারা প্রকাশ্যে স্বীকার করে নিয়েছে রাজ্য। গোটা দেশের সামনে মমতার সরকার তথ্য দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে এরাজ্যে সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা কার্যত ভেন্টিলেশনে চলে গেছে। যেখানে প্রতি ৩০ ছাত্র পিছু একজন শিক্ষক থাকার কথা সেখানে ৫২ জন পিছু একজন। এখন ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল হওয়ায় অনুপাত দাঁড়াচ্ছে ৫৮:১। অর্থাৎ বিদ্যালয়গুলি ‘হরি ঘোষের গোয়ালে’ পরিণত হয়েছে। সরকার কতটা অযোগ্য ও অপদার্থ হ‍‌লে এমনটা হতে পারে।
২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর পাঁচ বছর কোনও শিক্ষক নিয়োগ করেনি। ২০১৬ সালে প্রথম এসএসসি পরীক্ষা হয়। এটাই প্রথম এটাই শেষ। ২০১৬ সালের প্যানেল থেকে ধাপে ধাপে পাঁচ-ছয় বছর ধরে ২৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। সেটাও বেশিটা টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে। গত ১৪ বছরে কার্যত কোনও শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। অথচ এই সময়ে হাজার হাজার শিক্ষক অবসর নিয়েছেন। ফলে ১৯২৬ ছাত্রীর এক স্কুলে শিক্ষক মাত্র দু’জনে ঠেকেছে। এরপরও মুখ্যমন্ত্রী গলার শিরা ফুলিয়ে কথা বলেন কোন লজ্জায়!
 

Comments :0

Login to leave a comment