Teachers eligibility test

৫ বছর পরে আজ টেট, বিঘ্নহীন রাখতে পর্ষদ কড়া

রাজ্য

 দীর্ঘ পাঁচ বছর পর রবিবার রাজ্য জুড়ে হতে চলেছে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা টেট। পরীক্ষা নির্বিঘ্নে হওয়া থেকে শুরু করে পরীক্ষার স্বচ্ছতা, প্রশ্নপত্র ফাঁস— এমন বহু অনিশ্চয়তা নিয়েই চাকরিপ্রার্থীরা এই পরীক্ষা দিতে চলেছেন এই বছর। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তরফে টেট সুসম্পন্ন করতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ ঘোষণা করা হলেও মন থেকে সম্পূর্ণভাবে উৎকণ্ঠা দূর হচ্ছে না পরীক্ষার্থীদের। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রবিবার বেলা ১২টা থেকে বেলা ২টো ৩০ মিনিট পর্যন্ত টেট চলবে। রাজ্য জুড়ে ১ হাজার ৪৫৩টি পরীক্ষা কেন্দ্রে টেট নেওয়া হবে। মোট পরীক্ষা দেবেন ৬ লক্ষ ৯০ হাজার ৯৩১ জন। ওই দিন টেটের প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে ১৪৪ ধারা জারি থাকবে বলেও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ জানিয়েছে।
কয়েক দিন আগেই ডিএলএড পরীক্ষা শুরুর দিনেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে গিয়েছিল। কড়াকড়ি সত্ত্বেও প্রশ্নপত্র ফাঁস রুখতে পারেনি প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। সেই অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতা থেকে এবার টেটের প্রশ্নপত্র নিয়ে যাতে কোনও অঘটন না ঘটে, তার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে পর্ষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে টেটের প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে সিসিটিভি থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। স্বচ্ছভাবে পরীক্ষা পরিচালনা করতে পরীক্ষাকেন্দ্রের ঢোকা এবং বেরনোর পথে সিসিটিভি লাগানোর ব্যবস্থা থাকবে। পাশাপাশি পরীক্ষার্থীদের বায়োমেট্রিক পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হয়েছে। রবিবার টেটের জন্য অতিরিক্ত ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ। জানা গিয়েছে, পরীক্ষা শুরুর আগে ৭ মিনিট অন্তর মেট্রো মিলবে। পরীক্ষা শেষের পর অর্থাৎ বিকেলের দিকে ১০ মিনিট অন্তর মেট্রো পাওয়া যাবে। থাকবে পর্যাপ্ত বাসও। 
গত কয়েক বছরে রাজ্য জুড়ে শিক্ষক নিয়োগে চলেছে দুর্নীতি। তার সঙ্গে আইনগত নানা জটিলতার অভিজ্ঞতা রয়েছে এই রাজ্যের চাকরিপ্রার্থীদের। অভিযোগের পর অভিযোগে জর্জরিত পর্ষদ। সেই অস্বস্তি কাটাতে স্বচ্ছভাবে টেট সম্পন্ন করার জন্য আগেভাগে তাই বেশ কিছু কড়া বিধি জারি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। যেমন, পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র পাঠানো হবে পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগে। থাকছে ডুপ্লিকেট ওএমআর শিট, অর্থাৎ পরীক্ষার্থীদের জমা দেওয়া উত্তরপত্রের ২টি করে কপি থাকবে। পরীক্ষা কেন্দ্রে কর্তব্যরত শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের প্রত্যেকের গলায় বৈধ পরিচয়পত্র ঝোলানো থাকতে হবে। পরীক্ষার্থীরা মোবাইল এবং ধাতব কোনও জিনিস নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকতে পারবেন না। পরীক্ষা শুরু হওয়ার অন্তত ২ ঘণ্টা আগে পরীক্ষার হলে পৌঁছাতে হবে প্রার্থীদের। পরীক্ষা শুরু হয়ে গেলে প্রার্থীদের আর প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না পরীক্ষা কেন্দ্রে। তেমনই অত্যন্ত জরুরি কারণ ছাড়া কোনও পরীক্ষার্থী হল বা পরীক্ষা কেন্দ্র ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারবেন না। সেই কারণ খতিয়ে দেখে তবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।  
পর্ষদের তরফে জানানো হয়েছে, কোনও লেখা বা ছাপানো কাগজ, পেনসিল বাক্স, প্লাস্টিকের পাউচ, ক্যালকুলেটর, স্কেল, নোট প্যাড, পেন ড্রাইভ, রবার, ইলেকট্রনিক পেন, স্ক্যানার, কাড বোর্ড নিয়ে পরীক্ষার হলে যেতে পারবেন না পরীক্ষার্থীরা। সঙ্গে রাখা যাবে না মোবাইল ফোন,  ব্লু টুথ, ইয়ারফোন, মাইক্রোফোন, পেজার বা হেল্থ ব্যান্ড। ক্যামেরা, সানগ্লাস, হাতের ব্যাগ, সোনার গয়না নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা থাকছে। ইনভিজিলেটরের অনুমতি ছাড়া পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগে কোনও প্রার্থী হল থেকে বেরতে পারবেন না। পরীক্ষা হলে বসে ধূমপান করা বা তামাক চিবানো যাবে না। পরীক্ষা চলাকালীন কোনও পানীয়, খাদ্য, চা বা কফি ভিতরে নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না বলেও বিধি জারি করা হয়েছে। 
পর্ষদের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার মতোই টেট চলাকালীন পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশের জেরক্সের দোকানগুলি বন্ধ থাকবে। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার মতোই লাউডস্পিকার ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। পর্যাপ্ত পানীয় জল ও শৌচাগারের জন্য প্রত্যেকটি পরীক্ষা কেন্দ্রে ব্যবস্থা থাকবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে প্রত্যেকটি পরীক্ষা কেন্দ্রে। প্রশ্নপত্র পৌঁছানোর আগেই প্রত্যেকটি পরীক্ষা কেন্দ্রে পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা মোতায়েন করতে হবে। পরীক্ষার দিনে পর্যাপ্ত পরিবহণ ব্যবস্থা রাখতে হবে, যাতে পরীক্ষার্থীদের কোনও সমস্যা না হয়।
টেট নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকদেরও মোতায়েন করতে হবে। কোনও পরীক্ষার্থীর যদি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনও সমস্যা হয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স সহ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। অগ্নি সুরক্ষা দপ্তরের আধিকারিকদের সতর্ক থাকতে হবে ওই দিন। পাশাপাশি পরীক্ষার দিন যাতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন না হয়, তার জন্য বিদ্যুৎ দপ্তরকে বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, পরীক্ষার দিনে ট্রাফিক ব্যবস্থার উপর বিশেষভাবে নজর দিতে হবে পুলিশকে। সর্বক্ষণ খোলা থাকবে পর্ষদের কন্ট্রোল রুম। জেলাগুলিতে প্রশাসনকে পরীক্ষা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ ও দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে। পরীক্ষা শুরুর আগে প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে নজরদারি চালানো হবে।  
কিন্তু এত বিধিনিষেধের পরেও কি পরীক্ষা নিয়ে কোনও গোলমালের আশঙ্কা করছে পর্ষদ? রবিবার সাংবাদিক বৈঠকে সেই সুরই শোনা গেল পর্ষদ সভাপতি গৌতম পালের কণ্ঠে। তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা জেনেছি রবিবারের টেটকে বিঘ্নিত করার চেষ্টা চলছে। কেউ কেউ সে চেষ্টা করছে। পর্ষদ সতর্ক আছে, নজর রাখছে।’’ তবে ‘কেউ কেউ’ বলতে পর্ষদ সভাপতি কাকে বা কাদের ইঙ্গিত করেছেন, তা অবশ্য স্পষ্ট হয়নি এদিন।  

 

Comments :0

Login to leave a comment