Indians in Foreign Armed Forces'

দেশে বেকার তাই বিদেশে যুদ্ধে

সম্পাদকীয় বিভাগ

ক্ষমতায় আসার পর থেকে অর্থনীতির বিকাশের নাম করে গুচ্ছ গুচ্ছ প্রকল্প ঘোষণা করেছেন এবং চালু করেছেন। তার জন্য লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা খরচও হয়ে গেছে। কিন্তু দশ বছর কেটে যাবার পরও প্রত্যা‍‌শিত কোনও অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। কাগজে কলমে সংখ্যাতত্ত্ব হাজির করে বৃদ্ধির হার খানিকটা উজ্জ্বল দেখানো হচ্ছে বটে, তবে সেই উজ্জ্বলতার প্রতিফলন মানুষের জীবনমানে ঘটছে না। ফলে প্রচারের জন্য বৃদ্ধির হার কার্যকরী‍‌ হলেও মানুষের কোনও কাজে লাগছে না। তাই বৃদ্ধির হার বিশ্বে সর্বোচ্চ বলে গলা ফাটালেও সাধারণ মানুষের রুজি রোজগারে সেটা অস্তিত্বহীন।
অর্থনতির বোদ্ধা হোন বা না হোন সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের এই সাধারণ জ্ঞান থাকে যে অর্থনীতির বিকাশ ঘটলে বা দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন যদি বাড়ে তার সুফল তাদের জীবনেও প্রতিফলিত হবে। উন্নয়ন যদি দে‍‌শের হয় তাহলে তার ভাগ দেশের সব মানুষের প্রাপ্য। যদি বিকাশ বা বৃদ্ধি হওয়া সত্ত্বেও সাধারণ মানুষ তার ভাগ না পায় তাহলে বুঝতে হবে সেই উন্নয়ন নির্দিষ্টভাবে কিছু সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর জন্য। সরকার সকলের জন্য উন্নয়ন ও বিকা‍‌শের কথা বলে আসলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। আড়ালে দেশের বিত্তবানদের অর্থ ও সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে যাবতীয় সরকারি প্রকল্পের রূপরেখা তৈরি হচ্ছে। তারফলে বিত্তবান অংশে সম্পদ ক্রমাগত বাড়ছে আর থেমে আছে বা কমে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের আয়। ফলত অর্থ ও সম্পদের ব্যবধান দ্রুত বাড়ছে। তুলনামূলকভাবে অনুন্নত বিকাশমান দেশ হওয়া সত্ত্বেও বি‍‌শ্বের সবচেয়ে বে‍‌‍‌শি বৈষম্যের দেশের অন্যতম ভারত।
সত্যি সত্যি যদি কোনও দে‍‌শের অর্থনীতি বিকশিত হয় তাহলে বাস্তবের মাটিতে তার ছাপ অবশ্যই পড়বে। অর্থনীতিতে কোনও দেশ এগিয়ে যাওয়া মানে দেশে কর্মসংস্থান বাড়বে, বেকারি কমে যাবে। ন্যূনতম মজুরি যেমন বাড়বে তেমনি সর্বস্তরে উল্লেখযোগ্য হারে বেতন বৃদ্ধি পাবে। তার অর্থ মানুষের আয় বাড়বে। আয় বাড়লে একদিকে সঞ্চয় যেমন বাড়ে অন্যদিকে ভোগব্যয় বাড়ে। তাতে বাজারে পণ্য পরিষেবার চাহিদা বাড়ে। চাহিদা বাড়লে জোগান বাড়াতে উৎপাদন বাড়াতে হয়। উৎপাদন বাড়াতে দরকার নতুন বিনিয়োগ ও শিল্প-পরিষেবায় সম্প্রসারণ। মানুষের সঞ্চয় বাড়লে সেই সঞ্চয় ব্যাঙ্ক বা আর্থিক সংস্থার মাধ্যমে নতুন বিনিয়োগের ঋণের জোগান দেয়। এক্ষেত্রে তার কিছুই লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বরং ঘটছে উলটোটাই।
দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতিতে মানুষের আয় অবশ্যই বাড়বে। আয় যদি বাড়ে তখন অল্প মূল্যবৃদ্ধির হার সহনশীলতার মধ্যে থাকে। ভারতে বর্তমানে মানুষের আয় বাড়ছে না, তাদের ক্রয়ক্ষমতা নেই, বাজারে চাহিদা নেই অথচ অতি উচ্চহারে মূল্যবৃদ্ধি ঘটে চলেছে। পাশাপাশি কর্মসংস্থান না হওয়ায় বিপুল সংখ্যক বেকারের চাপ পরিবারগুলিকে সহ্য করতে হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই তথ্য পরিসংখ্যান দেখিয়ে মোদীরা যে দাবিই করুন না কেন দেশের মানুষ ভালো নেই। ক্রমাগত পারিবারিক বিপন্নতা, অনিশ্চয়তা, অসহায়তা বাড়ছে।
দেশে কাজ নেই, আয় নেই। তাই বাধ্য হয়ে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ভারতীয় আইনি-বেআইনি, যে যেভাবে পারছে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে। উচ্চ শিক্ষার জন্য যে ছেলে‍‌-মেয়েরা বিদেশে যায় তাদের বেশিরভাগ আর ফেরে না। কারণ দেশে তার জন্য কাজ নেই। থাকলেও সেটা অতি নিম্ন আয়ের। কাজের খোঁজে বিদেশে যাওয়ায় মদত দেয় সরকারও। বিদেশে কাজ করে ভারতীয়রা যে বিপুল অর্থ দেশে পাঠায় সেটা দে‍‌শের বিদেশী মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস। বিদেশে কাজ করে দেশে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাঠায় ভারতীয়রা। বিদেশে কাজ করতে গিয়ে বহু ঝুঁকি নিতে হয়, বিপদ বিস্তর। প্রায়সই ঘটে জীবনহানির ঘটনা। ইদানিং বিদেশের হয়ে যুদ্ধ করে প্রাণ দিচ্ছে ভারতের বেকাররা। রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনে, ইজরায়েলের হয়ে প্যালেস্তাইনে যুদ্ধ করে প্রাণ দিচ্ছে অসহায় ভারতের বেকার যুবক।

Comments :0

Login to leave a comment