Mamata banerjee

মোদীর পথেই ধর্ম নিয়ে ভোটে মমতাও

রাজ্য

বিজেপি’র মতো ধর্মীয় স্থান বানানোর কেরামতি দাবি করে মমতা ব্যানার্জি লোকসভা নির্বাচনে নামছেন। বৃহস্পতিবার চাকলার অনুষ্ঠানে সেই কৌশল স্পষ্ট করে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘‘রাজ্যে আরও তীর্থস্থান হবে। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে তীর্থস্থানের জন্য আমরা ৪০০ কোটির বেশি টাকা খরচ করেছি। আরও হবে।’’

দলের নেতা, কর্মীদের কাছে মমতা ব্যানার্জির বার্তা— ‘‘এই সব কাজের কথা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ুন।’’

একই লাইনে কয়েক দিন আগে দলের কর্মীদের এগিয়ে যেতে বলে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, বিজেপি’র দু’ নম্বর নেতা অমিত শাহ। জাতীয় গ্রন্থাগারের সভায় শাহ বলে গিয়েছেন, রামমন্দির উদ্বোধনের প্রচারে জোর দিতে হবে।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, তীর্থস্থানে সরকারি উদ্যোগের পথই বিজেপি’র পথ। আগামী লোকসভা নির্বাচনে মন্দির বানানো যেমন বিজেপি’র প্রচারের একটি বিষয় হবে, তেমনই জ্ঞানবাপী মসজিদ, মথুরার মতো নানা জায়গায় মন্দিরের প্রচার নিয়ে উত্তেজনা আরও বাড়াবে তারা। রাজ্যেও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নানা ধর্মীয় স্থান খুঁজে বের করার একটি ‘কর্মসূচি’ নিয়েছে। এমন পরিবেশে কর্মসংস্থান, কৃষির সঙ্কট, জিনিসের দামের মতো বিষয়ে বিজেপি-কে আক্রমণের কোনও কথাই তৃণমূল নেত্রী এদিন তোলেননি। 

এদিন বিজেপি’রই চটি পায়ে তিনি বলেছেন, ‘‘তীর্থস্থান উন্নয়নে আমরা বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছি। ঠাকুরবাড়ির উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মধ্যমগ্রামে অনুকূলচন্দ্রের সৎসঙ্গ আশ্রমের জন্য আমরা বিনা খরচে ৫ একর জমি দিয়েছি। ডানলপে ওঙ্কারনাথ মন্দিরের সামনের রাস্তাকে আমরা ওঙ্কারনাথ সরণি নাম দিয়েছি। ওঙ্কারনাথ তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। তার জন্য ৩ কোটি ২০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। ৪০০ কোটি টাকার বেশি তীর্থস্থানগুলির জন্য খরচ করেছি।’’ অবশ্য তাঁর নিজের মনে হয়েছে, তাঁর সরকার ধর্মীয় স্থানের জন্য আরও বেশি খরচ করেছে। তাই শুধরে নেওয়ার সুরে বলেছেন, ‘‘মনে হচ্ছে সংখ্যাটি আরও বেশি। একটাতেই মনে হয় ৩০০কোটি করেছি। ববি (ফিরহাদ হাকিম) দক্ষিণেশ্বর স্কাইওয়াকে কত খরচ করেছি?’’ ‘ববি’ কয়েক মুহূর্ত পরে পিছন থেকে জবাব দিলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘দক্ষিণেশ্বর স্কাইওয়াকের জন্য ৮০-৯০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কালীঘাটেও স্কাইওয়াক হচ্ছে। তারাপীঠ মন্দিরের জন্য সব করেছি। পাথঁচাপড়ি, ফুরফুরা শরিফের জন্য অনেক কাজ করেছি।’’ তিনি এদিন মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘আপনারা জানেন দীঘাতে আমরা একটা জগন্নাথ মন্দির বানাচ্ছি। পুরীর মন্দিরের সমান উঁচু। আগামী ৬ মাসের মধ্যে সেটার উদ্বোধন হয়ে যাবে।’’

‘তীর্থস্থানের রাজনীতি’-তে বিজেপি-কে এইভাবে টক্কর নেওয়ার ভাষণের মধ্যেই বামফ্রন্টকে তীব্র আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি চাকলায় অনুষ্ঠানের পরে দেগঙ্গায় দলের কর্মীসভায় বলেন, ‘‘সাগর মেলা এসে গেছে। আগে সাগরে কিছু ছিল না। আমাদের আগে ৩৪ বছর একটা বদমাশ, অচল, পাথর চলেছিল। কিচ্ছু করেনি।’’ 

এই বক্তব্যেই স্পষ্ট মমতা ব্যানার্জির লোকসভা নির্বাচনের কৌশল কী? তিনি বলেছেন, ‘‘সারা দেশে ‘ইন্ডিয়া’ থাকবে। বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেস লড়াই করবে। কারণ তৃণমূলই পারে রাজ্যে বিজেপি-কে শিক্ষা দিতে। সারা দেশকে পথ দেখাতে।’’ অর্থাৎ রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গেও কোনও নির্বাচনী বোঝাপড়া চাইছেন না মমতা ব্যানার্জি। প্রসঙ্গত, সিপিআই(এম) অনেক দিন আগেই তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে। পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়ে দিয়েছেন যে, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধেই লড়াই হবে।

চুরি রাজ্যে গুরুত্বপূর্ণ সঙ্কট হয়ে উঠেছে মমতা-শাসনে। সিপিআই(এম) এবং বামপন্থী গণ সংগঠনগুলি তৃণমূলের এবং বিজেপির দুর্নীতির বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী এদিন সেই চুরির প্রসঙ্গেও বলেছেন। তবে আগের মতোই দলের নেতাদের আড়াল করেছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘তৃণমূল করলেই জেলে ভরছে, যাতে ইলেকশান করতে না পারে। বিজেপির কত নেতা গ্রেপ্তার হয়েছে?’’ যেহেতু উত্তর ২৪ পরগনায় তৃণমূলের নেতা ছিলেন রাজ্যের বন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালু, সেই জেলার কর্মীসভায় বালুর কথা তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, ‘‘বালুকে অ্যারেস্ট করেছে। কেন করেছে? যাতে ও পার্টির কাজ করতে না পারে। ইলেকশন করতে না পারে। আর তা নিয়ে বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেস রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে।’’ মুখ্যমন্ত্রী বিজেপিধর নাম না করে বলেছেন, ‘‘কিন্তু বড় চোর তো ওরা। আপনি একটার জায়গায় দুটো বিড়ি খেলেন। আপনি হয়ে গেলেন চোর। আর ওরা যে কোটি কোটি টাকা চুরি করেছে। ওরা সবচেয়ে বড় ডাকাত। আর কিছু আছে গদ্দার। রাজাকার। চোরের জ্যাঠামশাই। চোরের কুম্ভকর্ণ। তাদের ধরছে না কেন?’’

অর্থাৎ দলের চুরি, নেতাদের চুরি মাফ। ‘চোরদের’ পাশেই থাকছেন মমতা ব্যানার্জি।

সংখ্যালঘুদের নিয়ে তিনি বেশ আশঙ্কায় আছেন, বোঝা গিয়েছে তাঁর বক্তব্যে। তিনি দাবি করেছেন, ‘‘ওবিসি-দের ১৭ শতাংশ সংরক্ষণ আমরা করেছি। সেখানে ৯৭ শতাংশ সংখ্যালঘু ঢুকে গেছে। সংখ্যালঘুদের জন্য অনেক কাজ করেছি। কিছু লোক তাদের ভুল বোঝাতে গ্রামে গ্রামে ঘুরছে। আমি বলছি সাবধান। ক্ষমতায় কিন্তু আমরাই থাকব। সব নজরে রাখব।’’ 

প্রচ্ছন্ন হুমকি। 

দলের নেতাদের মাতব্বর হয়ে ওঠা মেনে নিয়ে মমতা ব্যানার্জি এদিন বলেছেন, ‘‘লোকালি কেউ কেউ যদি ভাবেন বড় নেতা হয়ে গেছি, এসব তৃণমূলে হবে না। আমি অ্যালাউ করব না। শুনছি কেউ কেউ কেউকেটা হয়ে গেছে। মনে রাখবেনড বাংলাকে টিএমসির হাতে রাখতে হবে।’’

Comments :0

Login to leave a comment