Ahmedabad Plane Crash

ভেঙে পড়া বিমানের ‘ককপিট ভয়েস রেকর্ডার’ উদ্ধার, ৮৭ দেহ শনাক্ত

জাতীয়

গত বৃহস্পতিবার যেখানে বিমান ভেঙে পড়ে, সেই বিজে মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলের ছাদ থেকে শুক্রবার ‘ডিজিটাল ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার’ পাওয়া যায়। একটি ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার হয়েছিল। কিন্তু ‘ককপিট ভয়েস রেকর্ডার’ সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি। রবিবার এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনার তদন্তকারী আধিকারিকরা নিশ্চিত করেছেন ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে ‘ককপিট ভয়েস রেকর্ডার’ উদ্ধার হয়েছে। ইঞ্জিনের শব্দের মধ্যেও পাইলটদের কথোপকথন, রেডিও ট্রান্সমিশন, ককপিটের অন্যান্য শব্দ রেকর্ড হয় ওই যন্ত্রে। দুর্ঘটনার তদন্তে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আধিকারিকরা প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব পি কে মিশ্রকে ‘ককপিট ভয়েস রেকর্ডার’ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে বিমানের ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার উদ্ধার হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছিল এয়ারক্রাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো। দুই ব্ল্যাক বক্স তদন্তে গতি আনবে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে দু’টো নাগাদ রানওয়ে ছেড়ে ওড়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মাটিতে ধপ করে নেমে এসেছিল এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮। তারপরও সতর্ক না হয়ে লন্ডনের উদ্দেশে উড়ে যাওয়ার সবুজ সঙ্কেত দেয় আমেদাবাদ বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু’কয়েক মিনিটের মধ্যেই পাইলটের ‘মে ডে কল’ এবং আকাশে ওড়ার আগেই বিমানবন্দর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে মেঘানিনগরে এক মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলের ছাদ ঘেঁষে ভেঙে পড়ল বিমানটি। বিকট শব্দ, সঙ্গে দাউদাউ আগুনে জ্বলে গেল চারপাশ। মাটি থেকে তখন বিমানটি মাত্র ৮২৫ ফুট উঁচুতে ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে সব থেকে বৃহৎ বিমান-দুর্ঘটনা এটিই। বিমানে ২৩০ জন যাত্রী এবং ১২ জন বিমানকর্মী ছিলেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ নাগরিকের বেঁচে যাওয়ার খবর মিললেও এই ভয়াবহতায় বাকি সকলেরই মৃত্যু হয়েছে। শুধু বিমান যাত্রী নয়, যে হস্টেলের উপর বিমানটি ভেঙে পড়েছে, সেখানকার পাঁচ আবাসিক প্রাণ হারিয়েছেন। জখম হয়েছেন অনেকে। হস্টেলের ডাইনিং হলে অনেকেই তখন খাচ্ছিলেন। কেউ বা পড়ছিলেন, কেউ কথা বলছিলেন বাড়িতে। শুক্রবার সকালে বিজে মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলের ছাদ থেকে উদ্ধার হয় ভেঙে পড়া বিমানের একটি ব্ল্যাকবক্স। ‘ডিজিটাল ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার’ পাওয়া যায় বিজে মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলের ছাদ থেকে। সরকারি ভাবে ঘোষণা করা হয় বিমান যাত্রী, দু’জন পাইলট, দশ জন ক্রু সদস্য ছাড়াও ওই হস্টেলের পাঁচ জন চিকিৎসক পড়ুয়া সহ আরও ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। 
সরকারি হাসপাতালের লাশ কাটা ঘরের সামনে থিকথিকে ভিড়। কেউ ডিএনএ পরীক্ষার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। কেউ ডিএনএ ‘ম্যাচ’ করলে পরিজনের দেহের টুকরোটুকু দেখার অপেক্ষায়। গত চারদিন ধরে এই একই দৃশ্য আমেদাবাদের সরকারি হাসপাতালের বাইরে। ঘটনার পর চার দিন কেটে গেলেও নিহত ২৭৪ জনের মধ্যে মাত্র ৮৭ জনের দেহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৪৭ জনের দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসনের এক আধিকারিক সোমবার সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন। বিমান দুর্ঘটনায় ছিন্নভিন্ন এবং ঝলসে গিয়েছে যাত্রীদের দেহ। এখনও পর্যন্ত বহু যাত্রীর দেহ শনাক্ত করা যায়নি। মৃত যাত্রীদের দেহ ফেরানো নিয়ে নাজেহাল অবস্থা প্রশাসনের। নিহতদের মধ্যে যাঁদের ডিএনএ পরিবারের কারোর সঙ্গে মিলে যাচ্ছে, তাঁদের দেহের টুকরোটুকুই দেওয়া যাচ্ছে। এই ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে দুর্ঘটনার পরের দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মেঘানিনগরে দুর্ঘটনার জায়গায় গিয়ে বিভিন্ন পোজে ছবি তুলেছেন। হাসপাতালে এসেছিলেন দুর্ঘটনায় একমাত্র জীবিত বিশ্বাসকুমার রমেশের সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু যে মানুষগুলো হাসপাতালের দরজার বাইরে প্রিয়জনের দেহের টুকরোর জন্য অপেক্ষা করছেন, তাঁদের মাঝে এসে দাঁড়ানোর সাহস করে উঠতে পারেননি।
বিশ্বের প্রথম বোইং বিমান ভেঙে পড়া এবং ভারতের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবথেকে ভয়াবহ ও বৃহৎ বিমান দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ এখনও স্পষ্টভাবে বলতে পারছে না কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক। তবে স্থানীয় এক কিশোরের বিমান ভেঙে পড়ার ভিডিও দেখে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন রকমের জল্পনার কথাই বলছেন। পাখির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে বিমানটি ভেঙে পড়েছে বলে প্রথম থেকে একটি তত্ত্ব খাড়া করা হয়। কিন্তু ভিডিও খতিয়ে দেখেও কোনও পাখির অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে না। আবার একইসঙ্গে দু’টি ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ার ঘটনাও চূড়ান্ত ব্যতিক্রম বলেই মনে করছেন তাঁরা। পাইলট যখন মে ডে কল দিয়েছিলেন, তখন বলেছিলেন, শক্তি পাচ্ছি না। ভিডিও’তেও দেখা গিয়েছে যে, বিমানটি উপরে ওঠার চেষ্টা করলেও পারছিল না এবং দুর্ঘটনার পর একমাত্র জীবিত বিশ্বাস কুমার রমেশও জানিয়েছেন, আচমকাই সবুজ আলো জ্বলে উঠেছিল। খুব জোরে শব্দও হয়। এর থেকে বিশেষজ্ঞদের অনুমান, বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার কনসোলের ঠিক পিছনে থাকা র্যাুট বা বায়ু টারবাইন কাজ কারছিল না। বিমানের প্রাথমিক এবং দ্বিতীয় শক্তির উৎস কাজ না করলে র্যানট থেকে শক্তি সঞ্চারিত হয়ে থাকে।

Comments :0

Login to leave a comment