নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে ভোটে কারচুপি করাতে চাইছে বিজেপি, তাই বড় ব্যবধানে বাম-কংগ্রেস প্রার্থীদের জেতানোর আবেদন করলেন সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। বৃহস্পতিবার যাদবপুর সুকান্ত সেতুর সামনে একটি বিরাট নির্বাচনী জনসভায় তিনি বলেছেন, ভোটে হারলে ভোটসংখ্যা বাড়িয়ে জেতার তাল করছেন মোদী। তার জন্য নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে প্রথম দুই দফায় ভোটগ্রহণের পরে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ১ কোটি ৬০ লক্ষ বাড়িয়েছে। তাই এদের হারাতে হলে প্রতি লোকসভা কেন্দ্রে ‘ইন্ডিয়া’র প্রার্থীদের বড় ব্যবধানে জয়ী করতে হবে।
ইয়েচুরির অভিযোগ, ভোটগ্রহণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কত ভোট পড়েছে সেটা জানানোই নিয়ম। কিন্তু মোদীর চারশো আসন জেতার ফানুস ফেটে গেছে। উনি এখন নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে কারচুপি করতে চাইছেন। আমাদের সংবিধান অনুসারে দেশের আইনসভা, বিচারবিভাগ এবং সরকার তিনটি স্তম্ভই সমান ক্ষমতাশালী, কোনও একটা অন্য দুটোর থেকে বেশি ক্ষমতাশালী নয়। কিন্তু মোদী ‘চরম ক্ষমতাশালী’ হতে চাইছেন, তাই নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের প্যানেল থেকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়েছেন। সেই নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে এখন ভোটে জেতার চেষ্টা করছেন।
এদিন রাতে যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস সমর্থিত বামফ্রন্ট প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্যের সমর্থনে সুকান্ত সেতুর সামনে বিরাট জনসভায় ইয়েচুরি ভাষণ দেন। বাংলার বুকে বাম কংগ্রেসের লড়াইটাই যে দেশ বাঁচাতে বিজেপি’র বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া ‘ইন্ডিয়া’র লড়াই সেটা স্পষ্ট করে দিয়ে তিনি বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল এবং বিজেপি’র মধ্যে কি ডিল হয়েছে তা জানি না, তবে চোখে চোখে ওদের মধ্যে ইশারা হয়ে গেছে তো বটেই। নীতিশ কুমার ইন্ডিয়া ছেড়ে গেছেন, মমতা ব্যানার্জিও বলেছেন উনি ইন্ডিয়াকে বাইরে থেকে সমর্থন করবেন। পরে আবার বলেছেন যে সরকারে শামিলও হবেন। কিন্তু আসল কথা হলো এই যে বাংলার বুকে বাম কংগ্রেসের জোটবদ্ধ লড়াইটাই ইন্ডিয়ার লড়াই, দেশকে বিজেপি’র হাত থেকে বাঁচাতে এবং বাংলাকে তৃণমূল-বিজেপি’র হাত থেকে বাঁচাতে পারে কেবল বাম-কংগ্রেসই। এই লড়াইতে কোনও দোদুল্যমানতার সুযোগ নেই।
দেশবাসীর জীবনে মোদী সরকার যে সঙ্কট নামিয়েছে তা নিয়ে বিজেপি এবং তৃণমূল কেউই রাজনৈতিক চর্চা করছে না বলেও অভিযোগ করেছেন ইয়েচুরি। তিনি বলেছেন, মোদী নিজেকে স্বয়ম্ভু বলছেন, মানে ভগবান নাকি ওঁকে কাজ করতে পাঠিয়েছেন। দশ বছরে উনি কী কাজ করেছেন? স্বাধীনতার পরে দেশের বেকারি সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেছেন, ৪২ শতাংশ স্নাতক বেকার, কর্মরতদের বেতন স্থির হয়ে আছে, মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে লাফিয়ে লাফিয়ে, পরিবারগুলির সঞ্চয় তলানিতে, ঋণগ্রস্ততা সর্বোচ্চ। সরকার ১৬ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ মকুব করেছে বন্ধু কর্পোরেটদের, আর কৃষকরা ঋণের চাপে আত্মহত্যা করছে। আদানি আম্বানিদের খোলা লুটের সুযোগ করে দিয়েছেন মোদী, দেশের সব সম্পদ লুট হয়ে যাচ্ছে, মাটির তলার খনিজ লুট করতে বনাঞ্চল লুট হয়ে যাচ্ছে, নদী, জলাভূমি লুট হয়ে যাচ্ছে। এসবের প্রভাবেই পরিবেশ এবং আবহাওয়া বিপন্ন, আমজনতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাতে। এই যে তাপপ্রবাহ, খরা, বন্যা দেখা যাচ্ছে তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে তো কৃষকদেরই। এই সব বিষয় নিয়ে বিজেপি এবং তৃণমূলকে কোনও কথা বলতে শুনেছেন?
বাংলার নবজাগরণের ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিয়ে ইয়েচুরি বলেন, জেতার জন্য সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছড়াচ্ছেন মোদী। এই বিষাক্ত প্রচারই তাঁর শেষ হাতিয়ার। এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বাংলার নবজাগরণের পরম্পরা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। রামমোহন বিদ্যাসাগরের বাংলায় দেশভাগের মুখে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছিল, গান্ধীজী তখন কলকাতায় অনশনে বসেছিলেন। পরবর্তীতে সেই বাংলায় বামপন্থীদের রাজনীতি সাম্প্রদায়িকতাকে মাথা তুলতে দেয়নি। এমনকি বাবরি মসজিদ ভাঙার পরেও জ্যোতি বসুর বাংলা সম্প্রীতির নজির দেখিয়েছিল। মানবতার সেই সম্মিলিত সচেতনতা ফিরিয়ে এনেই সাম্প্রদায়িকতাকে রুখতে হবে। তার জন্য বাম ও কংগ্রেস প্রার্থীদের জয়ী করুন।
এদিনের সভায় সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রবীন দেব বলেন, প্রধানমন্ত্রী এখন মোদী গ্যারান্টির প্রচারের আগে জবাব দিন, দশ বছরে চিট ফান্ড তদন্তের প্রতিশ্রুতির কী হলো? কোভিডে মোদী দেশবাসীকে থালা বাজাতে বলেছিলেন, আর মমতা ব্যানার্জি কোমর্বিডিটি আউড়ে মৃত্যুর সংখ্যা আড়াল করেছিলেন। সেদিন ঝুঁকি নিয়েও মানুষের পাশে ছিলেন এই রেড ভলান্টিয়াররা। যারা সরকারে ছিল না, তারা দরকারে ছিল, সংসদেও তাদেরকেই পাঠাতে হবে।
সুকান্ত সেতুর সামনে এই জনসভায় বহু মানুষ সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি বসেছিলেন। সভায় এছাড়াও ভাষণ দেন ডিওয়াইএফআই’র রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি, সিপিআই(এম) প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্য, সিপিআই(এম) নেতা উৎপল দত্ত, খোকন ঘোষ দস্তিদার, কংগ্রেস নেতা সৌম্য আইচ রায় প্রমুখ।
Comments :0