বুধবার ধর্মতলায় ধুমধাম করে সভা করেছে বিজেপি। ভাষণ দিয়েছেন খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন। অতএব নির্বাচনী তোড়জোড়ের সেই ভাষণে তিনি যে ফের ধর্মীয় বিভাজনের উত্তেজনা চরমে তুলতে চাইবেন এটা বোঝা খুব একটা কঠিন নয়।
সংক্ষিপ্ত ভাষণ, কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) এনেছেন মুখ্য বিষয় হিসাবে। দেশভাগ আর দাঙ্গার স্মৃতিও উসকে দিয়েছেন আরএসএস-র উদ্দেশ্য মোতাবেক। ধর্মের নামে ভাগের কথা বলে গেলেন কিন্তু রোজগারের কথা কিছু বললেন না। একই সঙ্গে অমিত শাহ তৃণমূল নিয়ে দিব্যি লুকোচুরি খেলে গেলেন অভ্যস্ত কায়দায়।
তৃণমূলের দুর্নীতির প্রসঙ্গে কিছু বললেন, কিন্তু জেলে ভরার কথা তেমন তুললেন না। আরও চমকপ্রদ যে বিষয়, ‘ভাইপো’-কে সযত্নে এড়িয়ে গিয়ে বিজেপি’র নেতাদের কি কোনও বার্তা দিয়ে গেলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী?
অমিত শাহ সরাসরি এনেছেন অনুপ্রবেশকারীদের প্রসঙ্গ। এবং যা ছিল তাঁর মুখ্য প্রতিপাদ্য। একসময় লোকসভায় লালকৃষ্ণ আদবানির বক্তব্যের সুর ধরে পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ নিয়ে চিৎকার করেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। উপাধ্যক্ষকে লক্ষ্য করে কাগজের বান্ডিল ছুঁড়েছিলেন। সেই ঘটনা উল্লেখ করতে ভোলেননি অমিত শাহ।
একই সঙ্গে তাঁর কথা, এখন সেসব ভুলে গিয়ে মমতার রাজ্যে আজ অনুপ্রবেশকারীদের আধার কার্ড, ভোটার কার্ড করার জন্য সোশাল মিডিয়ায় প্রচার করেন তাঁর দলের প্রতিনিধিরা।
পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের দীর্ঘদিনের অ্যাজেন্ডা। মমতা ব্যানার্জি রাজ্যে বিরোধীদলে থাকাকালীন আরএসএস’র এই ইস্যুটির মুখপাত্র হয়ে উঠেছিলেন।
অমিত শাহ এদিন মনে করিয়ে দিয়েছেন সেকথাও। আবার,লোকসভা নির্বাচনের আগে সংখ্যালঘু বিদ্বেষ জাগিয়ে তুলতে চেয়েছেন অমিত শাহ। যে ইস্যু উঠে এলে উলটোদিকে মমতা ব্যানার্জিও বেশ স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। আবার রামমন্দির প্রসঙ্গে মমতা ব্যানার্জিকে খানিকটা আড়াল করার চেষ্টা করেছেন শাহ। এ এক অদ্ভুত লুকোচুরি খেলা।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, সিএএ-এনআরসি নিয়ে হুমকির আগে দেশের জনগণনা হলো না কেন, তার জবাব কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে নেই। নাগরিকদের পঞ্জীকরণ তো পরের কথা, আগে তো চাই জনগণনা। জনগণনা হোক, জাতিভিত্তিক গণনা হোক এবং আর্থ সামাজিক সমীক্ষা হোক। দেশবাসীর প্রকৃত অবস্থা প্রকাশিত হোক। সে প্রশ্নে অমিত শাহর জবাব নেই।
বিজেপি নেতারা পোশাক আর খাদ্য দেখে অনুপ্রবেশকারি চিনতে বলেছিলেন। উদ্দেশ্য স্পষ্ট। কিন্তু দেশের কোথাও অনুপ্রবেশ হয়ে থাকলে তার জন্য দায়ী কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ব্যর্থতা। বিএসএফ সহ বর্ডার ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব।
তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপি সাজানো তরজা একটানা করেই চলেছে। অন্যদিকে বামপন্থীদের সম্পর্কে দু’তরফেরই একই বয়ান। অমিত শাহ এবং মমতা ব্যানার্জি দু’জনেই বামপন্থীদের শত্রু বলছেন। আরএসএস-বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে লাল ঝান্ডা মুছে দিতে তৃণমূলকেই ঠিকা দিয়েছিল। এখন বিজেপি’র নিজেদের মধ্যে মারামারি হচ্ছে, আর তৃণমূলের ভিতরে খুনোখুনি চলছে।
বেকারি ও মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে অমিত শাহ এবং মমতা ব্যানার্জি কিছু বলেছেন? না, কোনও কথা শোন গেলো না। অথচ ওগুলোই আসল সমস্যা মানুষের। অমিত শাহের মন্ত্রকের দায়িত্ব দেশে ঘৃণা, বিদ্বেষ, হিংসা রোখা। পেরছেন মণিপুরে?
ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আগে কি ক্ষমা চাইবেন তার জন্য। বাংলায় বিজেপি-কে আনার দায়িত্ব তৃণমূলকে দেওয়া হয়েছিল। সে কাজ তৃণমূল করেছে। এখন বিজেপি বাংলার ক্ষমতা দখল করতে চাইছে মহারাষ্ট্রের কায়দায় দল ভাঙিয়ে। কিন্তু বাংলার মানুষই বাংলার ভবিষ্যৎ ঠিক করবেন, অমিত শাহরা নন, মমতা ব্যানার্জিরাও নন।
Comments :0