জিয়াগঞ্জে সপরিবারে শিক্ষক খুনের ঘটনায় অপরাধীকে ফাঁসির সাজা শোনাল আদালত। বহরমপুর ফাস্টট্রাক কোর্টদের বিচারপরতি সন্তোষ কুমার পাঠক এদিন ফাঁসির সাজা ঘোষোণা করেন।
মঙ্গলবার দোষী সাব্যস্ত হয়ছিল ধৃত উৎপল বেহরা। ২০১৯ সালের ৮ অক্টোবর, দশমীর দুপুরে জিয়াগঞ্জের লেবুবাগান এলাকায় নিজের বাড়িতে খুন হন ৪১ বছরের বন্ধু প্রকাশ পাল, শিক্ষকের স্ত্রী ৩১ বছরের বিউটি পাল মণ্ডল ও তাদের ৭ বছরের সন্তান বন্ধু অঙ্গন পাল। সেই সময় ৮ মাসের অন্তস্বত্বা ছিলেন শিক্ষকের স্ত্রী। দীর্ঘ তদন্তের পর আগেই আইপিসি’র আগেই ৩০২ ও ২০১ ধারায় দায়ের হয়েছে চার্জশিট। এদিন হল রায় ঘোষণা।
এদিন সরকারি আইনজীবি বিভাস চ্যাটার্জি জানান, ২০২০ সালে মামলার দায়িত্ব নেন তিনি। যে কোর্টে মামলা ছিল সেই কোর্টেও দীর্ঘদিন কোন বিচারপতি ছিলেন না। তাই দেরী হল রায়দানে। এই রকম জঘন্য অপরাধের জন্য আপরাধীর ফাঁসির হুকুম দিয়েছে আদালত।
আইনজীবি জানান, এই রকম অপরাধ নজিরবিহীন। শুধু শিক্ষক, তার স্ত্রীকে খুনই নয়। হত্যাকান্ডের ফলে বিউটি পাল মণ্ডলের গর্ভস্থ শিশুও দিনের আলো দেখতে পায় নি। খুন করা হয়েছে সাত বছরের শিশুকেও। এই খুন ছিল পুর্বপরিকল্পিত।
এই কেসে ঘটনার দিনের জিয়াগঞ্জে ভাগীরথী নদীর জেটিঘাটের সিসিটিভি ফুটেজ আদালতে দেখানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল ‘রাইট ব্লকার’। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, বন্ধু প্রকাশের বাড়ি যাওয়ার আগে ঘাট পেড়োচ্ছে অভিযুক্ত, সাথে ছিল ব্যাগ। আরে ঘটনার পর ব্যাগ, টিশার্ট ছাড়াই শুধুমাত্র স্যান্ডো গেঞ্জি, বারমুডা পরে ঘাট পেরিয়ে নৌকায় উঠছেন অভিযুক্ত।
তদন্তে উঠে এসেছিল হত্যার নৃশংসতাও। তদন্তে জানা গিয়েছে, খুনের পর ধারালো অস্ত্র, ব্যাগ, জুতো ঘটনাস্থলেই ফেলে পালিয়েছিল খুনী। ঘাট পার হওয়ার জন্য নৌকায় ওঠার আগে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল টিশার্টও। নৌকা থেকে আজিমগঞ্জে নেমে টিশার্ট কিনে বাড়ি ফেরে ওই যুবক। তদন্ত সূত্রে উঠে এসেছে, আগে থেকেই খুনের পরিকল্পনা করেছিল অভিযুক্ত। কেনা হয়েছিল ধারালো অস্ত্র। তদন্তে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা নিয়েছে সিসিটিভি ফুটেজও। ঘটনাস্থল থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া অস্ত্রে ছিল ধৃতের আঙুলের ছাপ। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, ব্যাগ নিয়ে ঘটনাস্থলের দিকে যাচ্ছেন অভিযুক্ত। কিন্তু সেখান থেকে বেড়িয়ে আসার সময় তার কাছে ছিল না ব্যাগ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে ইনস্যুরেন্সের কাগজ নিয়েই চলছিল বিবাদ। সেখান থেকেই এই খুন। ঘটনাস্থল থেকে বাজেয়াপ্ত হয়েছে ইনস্যুরেন্সের কাগজ। সেখানেই দেখা যাচ্ছে, সেই কাগজে লেগেছিল রক্তের দাগ। তদন্তে থেকে উঠে এসেছে, ল্যাপস হয়ে গিয়েছিল সেই বীমা। যদিও বন্ধু প্রকাশকে বীমার জন্য টাকা দিয়েছিলেন অভিযুক্ত। তদন্তে আরও উঠে এসেছে বন্ধু প্রকাশকের সম্মতিতেই বাড়িতে ঢুকেছিল আততায়ী। ঘটনার ৭৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪২ জনকে হাজিরা দিতে হয়েছে আদালতে। এদিন হল সাজা ঘোষণা। আদালতে উপস্থিত ছিলেন বন্ধুপ্রকাশ পালের মা মায়ারানি পাল। অপরাধীর ফাঁসির দাবিই করেছিল পরিবার। যদিও এদিন পুলিশ ভ্যান থেকে আদালতে যাওয়ার সময় উৎপল বেহরা দাবি করেছেন, তিনি নিরাপরাধ। তার দাবি, পুলিশ ফাঁসিয়েছে তাকে।
Comments :0