বড়সড় অনিশ্চয়তার মুখে বন সহায়ক নিয়োগের প্রক্রিয়া। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে আপাতত স্থগিত গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়াটাই। বৃহস্পতিবার এই রায় দিয়েছে বিচারপতি রাই চট্টোপাধ্যায় এবং বিচারপতি ভিএম ভেলুমণির ডিভিশন বেঞ্চ। একইসঙ্গে নিয়োগ হওয়া ২ হাজার কর্মীর চাকরি বাতিলের রায়েও জারি হয়েছে স্থগিতাদেশ।
চলতি বছরের ১৯ মে থেকে শুরু হয়েছিল ২ হাজার চুক্তি ভিত্তিক বনসহায়ক নিয়োগের প্রক্রিয়া। কিন্তু প্রক্রিয়াগত ত্রুটির জন্য আটকে গেল সমস্তটাই।
২০২০ সালের ৩০ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের মখ্য বন সংরক্ষকের দপ্তর থেকে ২ হাজার চুক্তি ভিত্তিক বন সহায়কের নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ২ হাজার পদের জন্য প্রায় ১ লক্ষ চাকরিপ্রার্থী আবেদন জানান। নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষে দেখা যায়, ২ হাজার পদে মধ্যে ১৮৭৮টি পদে নিয়োগ হয়েছে।
কিন্তু এই নিয়োগ প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ২০২১ সালে কলকাতা হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন একাংশের চাকরি প্রার্থী।
তাঁদের অভিযোগ, গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব ছিল। নিজেদের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অগ্রাহ্য করেই হয়েছে নিয়োগ। তারফলে ৩ সদস্যের বদলে ২ সদস্যের বোর্ড ইন্টারভিউ নিয়েছে। একইসঙ্গে বয়স সীমা অগ্রাহ্য করে কম বয়সীদের নিয়োগ করা হয়েছে।
এই পিটিশনের ভিত্তিতে চলতি বছরের ৩ মে কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, নতুন করে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ২ হাজার পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। পুরনো বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ হওয়া প্রার্থীদের নিয়োগ রদ করতে হবে। নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া হুবহু বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী করতে হবে। এবং সফল চাকরিপ্রার্থীদের নামের তালিকা বন দপ্তরের সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ১৯ মে নতুন করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে শুরু হয় বন সহায়ক নিয়োগ প্রক্রিয়া।
কিন্তু এই প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতের দ্বারস্থ হন ২০২০ সালের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী চাকরি পাওয়া বন সহায়কদের একাংশ। তাঁদের আইনজীবী আদালতে ৩ মে’র রায়ে স্থগিতাদেশের আবেদন জানিয়ে বলেন, ২০২০ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস থেকে বন দপ্তরে কর্মরত রয়েছেন তাঁরা। ২০২১ সালের রিট পিটিশনে তাঁদের পার্টি করা হয়নি। কার্যত তাঁদের না জানিয়েই তাঁদের নিয়োগ খারিজের আবেদন করা হয় আদালতে। এরপর ৩ মে’র রায়ের ভিত্তিতে জারি হওয়া নতুন বিজ্ঞপ্তির ফলে তাঁদের অস্তিত্ব সঙ্কটের মুখে। নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত হলে সমস্যার মুখে পড়বেন ২০২০’র প্যানেলে নাম থাকা যোগ্য ও বৈধ প্রার্থীরা।
সমস্ত তরফের বক্তব্য শুনে কলকাতা হাইকোর্ট ৩মে’র রায়ে ৪ মাসের অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছে। এই মামলার অন্তিম শুনানির দিন ধার্য হয়েছে ৬ জুলাই। এই অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে মামলা সংক্রান্ত সমস্ত দলিল ও নথিপত্র আদালতে জমার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিনের শুনানিতে কর্মরত বন সহায়কদের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শামিম আহমেদ, অর্ক মাইতি এবং আম্বিয়া খাতুন। রাজ্য সরকারের তরফে উপস্থিত ছিলেন পন্তু দেবরায় এবং পান্নালাল বন্দোপাধ্যায়। চাকরি প্রার্থীদের তরফে উপস্থিত ছিলেন শমীক চ্যাটার্জি, বিবেকানন্দ বসু প্রমুখ।
Comments :0