রবিবার মেলবোর্নে ইংল্যান্ড-পাকিস্তানের মধ্যে টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনাল কে বলবে! মেলবোর্নের রাস্তায়, ট্রামে-বাসে, স্টেডিয়াম চত্বরে ফাইনালের আবহ অনুভবই করা যাচ্ছে না। সমর্থকদের উম্মাদনাও থিতিয়ে পড়ছে। বিখ্যাত হিগসন লেনে রাস্তায় মানুষের সেলফি তোলার ঢল নেই। অথচ ফাইনাল ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে হলে আবহটাই অন্যরকম থাকত। ম্যাচ টিকিট পাওয়ার জন্য দু’দলের সমর্থকরা স্টেডিয়াম চত্বরে লম্বা লাইন দাঁড়িয়ে থাকতেন। একে অপরের দিকে টিপ্পনী ছুঁড়তেন। বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের প্র্যাকটিস উঁকি মেরে দেখতেন ক্রিকেট প্রেমীরা। গমগমে একটা পরিবেশ থাকত। এসব এখন কল্পনা। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে ভারতের হারে বদলে গিয়েছে সব। যে সব ভারতীয় সমর্থক ধরে নিয়েছিলেন ভারত-পাক ফাইনাল হবে! মেগা ফাইনাল মাঠে বসে দেখার জন্য টিকিট কেটে রেখেছিলেন। তাঁদেরকেই দেখা গেল, হতাশ মুখে কম দামে অন্যদের ফাইনালের টিকিট বিলিয়ে দিচ্ছেন, কোহলিদের বিদায়ে তাঁদের হৃদয় চুরমার।
১৯৯২’তে অস্ট্রেলিয়ায় আয়োজিত বেনসন অ্যান্ড হেজেস কাপে ফাইনালে খেলেছিল ইংল্যান্ড-পাকিস্তান। সেই ম্যাচে পাক অধিনায়ক ইমরান খানের ইনিংস ও ওয়াসিম আক্রমের ম্যাচের রং বদলানো স্পেল ইংল্যান্ডের স্বপ্ন ভেঙেছিল। তিন দশক পর অস্ট্রেলিয়ায় আয়োজিত কোনও বিশ্বকাপের ফাইনালে ফের মুখোমুখি দু’দল। এবার যে দল জিতবে তাঁরা এই ফরম্যাটে দ্বিতীয়বার বিশ্বজয় করবে।
ফাইনালের আগের দিন, নিয়মাফিক মেলবোর্নের ছাদে ট্রফি নিয়ে ফটোসেশন হলো। ট্রফি মাঝে। দু’পাশে দুই অধিনায়ক দাঁড়িয়ে। ইংল্যান্ডের ক্যাপ্টেন জস বাটলার ও পাকিস্তানের বাবর আজম দু’জনের মুখেই চওড়া হাসি লেগে ছিল। তবে রবিবার (স্থানীয় সময়) রাতে হাসি থাকবে যে কোনও একজনের মুখে। যদি বৃষ্টি না বাদ সাধে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস যা, তাতে একশো শতাংশ বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রবিবার সন্ধ্যা থেকেই। শনিবারও রাতে ভালো বৃষ্টি হয়েছে রাতের দিকে, ফাইনালের জন্য রিজার্ভ ডে রয়েছে। সেই সোমবার বৃষ্টি হতে পারে। ফাইনাল যদি রিজার্ভ ডে’তে যায়, সেক্ষেত্রে ম্যাচ শুরু হবে স্থানীয় সময় দুপুর তিনটে থেকে। আর খেলা না হলে, ইংল্যান্ড-পাকিস্তান যুগ্ম বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। বাটলার, বাবর দু’জনেরই কেউই চান না, বৃষ্টি ভেস্তে দিক ম্যাচ।
ইংল্যান্ড শিবির হিসাব বরাবর করতে মরিয়া, পাকিস্তান ’৯২ফাইনালের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে। এই ফরম্যাটে দু’দল মুখোমুখি হয়েছে মোট ২৭ বার। ইংল্যান্ড জিতেছে ১৮ বার। বিশ্বকাপের আগে পাকিস্তানের ডেরায় গিয়ে টি-২০ সিরিজ জিতেছিল ইংল্যান্ড। বাবরদের বিরুদ্ধে পরিসংখ্যানে এগিয়ে ফাইনালে নামবে বাটলাররা।
ম্যাচের আগের দিন ইংল্যান্ড ঐচ্ছিক অনুশীলন করেছে। প্র্যাকটিসে এসেছিলেন ডেভিড মালান ও মার্ক উড। দু’জনই সেমিফাইনালে খেলতে পারেননি। মাইকেল হাসির থ্রো-ডাউনে ব্যাটিং করেছেন মালান। উডকেও বল করতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট দু’জন আনফিট ক্রিকেটারকে ফাইনালে খেলানোর পক্ষপাতী নয়। ফাইনালে তাঁদের একাদশে কোনও বদল না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তন করে স্বপ্নের ফর্মে রয়েছেন ওপেনার অ্যালেক্স হেলস। চলতি টি-২০ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সর্বাধিক রান স্কোরার। ভারতের বিরুদ্ধে তাঁর ধ্বংসাত্মক ব্যাটিং পাক শিবিরে ভয় ধরানোর জন্য যথেষ্ট। বিগ ব্যাশ খেলার সুবাদে অস্ট্রেলিয়ার সব মাঠই তাঁর চেনা। মেলবোর্নের মতো বড় মাঠে শাহিন, হ্যারিস রফদের খেলতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। বাটলারও গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে রান করেছেন। সেমিফাইনালে ৮০ রানে অপরাজিত ছিলেন। যেখানে শেষ করেছিলেন, ফাইনালে সেখান থেকেই শুরু করবেন। সাদা ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন আপ বিশ্ব সেরা বলা যায়। গভীরতাও বেশি। দলের এগারো জনই ব্যাট করতে পারেন। একাধিক পাওয়ার হিটার (স্টোকস, সল্ট, ব্রুক, লিভিংস্টোন, মঈন আলি, স্যাম কারান)। যারা নিজেদের দিনে যে কোনও বোলিং লাইন আপকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। তবে শাহিন নাসিম, রউফদের বিরুদ্ধে একটু সতর্ক থাকতেই হবে। ফাইনালের আগে সাংবাদিক সম্মেলনে বাটলার বলেছেন, ‘পাক পেসারদের সমীহ করছি। কঠিন লড়াই হবে।’ ভারত ম্যাচ বাদে স্যাম কারান পুরো বিশ্বকাপে ধারাবাহিকতা দেখিয়েছেন। একইসঙ্গে রয়েছেন আদিল রশিদ, যার বাবর আজম ও মহম্মদ রিজওয়ানের বিরুদ্ধে রেকর্ড ভালো।
অন্যদিকে, গ্রুপ পর্যায়ে প্রথম দু’ম্যাচে হেরে পাকিস্তানের কার্যত বিদায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে টানা চারটি ম্যাচ জিতে তাঁরা ফাইনালে। দলকে গ্রুপ পর্ব পার করাতে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন, বোলিং লাইন আপ। তাঁদের সঙ্গে ব্যাট হাতে ধারাবাহিক ছিলেন শান মাসুদ, ইফকিতার আহমেদ ও তরুন মহম্মদ হ্যারিস। তাঁর অন্তর্ভুক্তিতে পাক দলের শক্তি আরও বেড়েছে। তিনি যেহেতু আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে পছন্দ করেন। তিনটি ম্যাচেই ভালো স্ট্রাইক রেট নিয়ে ব্যাটিং করেছেন। সেমিফাইনালে ছন্দে ফিরেছেন বাবর ও রিজওয়ান। তাঁদের জুটিই ছিটকে দিয়েছিল নিউজিল্যান্ডকে। ইংল্যান্ডকে হারাতে নিজেরাও রান করবেন, পাশাপাশি বাবর হুঙ্কার দিয়েছেন, ‘ফাইনাল জিততে পেস ব্যাটারিকে কাজে লাগাবো।’ তবে পাক ব্যাটারদের সমস্যা কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে মেলবোর্নের বড় মাঠ। গ্রুপ পর্যায়ে, ভারতের বিরুদ্ধে অধিকাংশ পাক ব্যাটার বড় শট খেলতে গিয়ে ক্যাচে আউট হয়েছিলেন। ফাইনালে দল অপরিবর্তিত রেখেই নামার সম্ভাবনা পাকিস্তানের।
ইংল্যান্ড:পাকিস্তান
(ম্যাচ শুরু দুপুর ১.৩০)
Comments :0