Explosion in Durgapur

দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ, গুরুতর আহত ৫

রাজ্য

বৃহস্পতিবার সেইল’র দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট(ডিএসপি)-এ স্টিল মেল্টিং শপের বেসিক অক্সিজেন ফার্নেস(বিওএফ) ফ্লোরে ২ নম্বর কনভার্টারে প্রবল শব্দে বিষ্ফোরণ হয়। বিষ্ফোরণের ফলে কনভার্টার থেকে গলিত ইস্পাত ছিটকে কর্মরত ৫ জন আহত হয়েছেন।
আহত সিনিয়ার টেকনিশিয়ান সোমনাথ ঘোষ, দুইজন ট্রেড অ্যাপ্রেন্টিস বিনয় কুমার হরিজন ও সর্বজিৎ ধাঙড়, সিনিয়ার ম্যানেজার পৃথ্বীরাজ রায় ও ঠিকা শ্রমিক চিত্তরঞ্জন মন্ডলকে প্রথমে প্ল্যান্ট মেডিকেলে আনা হয়। সেখান থেকে দুর্গাপুর ইস্পাত মেন হাসপাতালে আনা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পাঁচ জনকেই দুর্গাপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। 
এদিন দুর্ঘটনাটি ঘটে প্রথম শিফ্‌টে বেল পৌনে ৯টা নাগাদ। বিষ্ফোরণের প্রবল শব্দে সমগ্র স্টিল মেল্টিংশপ কেঁপে ওঠে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। স্টিল মেল্টিংশপে তিনটি কনভার্টার রয়েছে। কনভার্টারের কাজ হচ্ছে ১৬০০ থেকে ১৭০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ধাতু গলিয়ে ইস্পাত তৈরি করা। অভিযোগ উঠেছে, কনভার্টারে জলের সংস্পর্শে হবার ফলে বিষ্ফোরণ হয়েছে। লিকেজ করে কনভার্টারে জল ঢুকেছে। 
‘ব্লাড লেস স্টিল’ স্লোগান দিয়েছে সেইল। সেই সেইলের দুর্গাপুর ইস্পাতে উপর্যুপরি দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। দুর্ঘটনার ফলে তীব্র শ্রমিক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে প্ল্যান্টে। সিআইটিইউ অনুমোদিত হিন্দুস্থান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন(এইচএসইইউ) নেতা বিশ্বরূপ ব্যানার্জি বলেন, আমাদের ইউনিয়ন সেইল চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি পাঠিয়ে কাজের জায়গায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানাবে। আমরা প্ল্যান্ট লেভেল সেফটি কমিটি ও ডিপার্টমেন্ট লেভেল সেফটি কমিটিগুলির নিয়মিত বৈঠক এবং কমিটির সুপারিশ প্রয়োগের জোরালো দাবি জানাচ্ছি। এইচএসইইউ প্রশ্ন তুলেছে ট্রেড অ্যাপ্রেন্টিসদের কোন যুক্তিতে কর্তৃপক্ষ উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করছেন?  মোদী সরকার ট্রেড অ্যাপ্রেন্টিস আইন’ ১৯৬১ আমূল বদলে দিয়েছে। আগে ট্রেড অ্যাপ্রেন্টিসরা তিন বছর ট্রেডে থাকতেন। তিন বছর পর তাদের স্থায়ীকরণ করা হতো। অ্যাপ্রেন্টিসরা সংস্থার সম্পদ হতেন। এখন মেয়াদ এক বছরের করা হয়েছে। নাম মাত্র স্টাইপেন্ড বা উপবৃত্তি দেওয়া হয়। শ্রম আইনের কোনো সুবিধাই নেই এদের জন্য। মেয়াদ শেষে এক বছর পর একটা শংসাপত্র দিয়ে তাদের বিদায় করে দেওয়া হয়। ডিএসপি’র সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ না হওয়া সত্ত্বেও উৎপদন ও উৎপাদনশীলতা রেকর্ড ছুঁয়েছে। রেকর্ড করতে গিয়ে মেসিন ও যন্ত্রপাতি মেরামতে অবহেলা হয়ে চলেছে। কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার প্রতি অবহেলা করছে। প্ল্যান্ট দুর্ঘটনা প্রবণ হয়ে পড়ছে। গত এক বছরে দুর্ঘটনায় ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। 
ডিএসপি’র সমস্ত শ্রমিক সংগঠন একযোগে বিক্ষোভে সোচ্চার হয়। বিক্ষোভের ফলে কর্তৃপক্ষ শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসতে বাধ্য হয়। ইডি (ওয়ার্কস) দুর্ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেন। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে ২ নম্বরকনভার্টার মেরামত না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। নিরাপত্তা নিয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এদিন দুর্ঘটনার পর থেকে প্ল্যান্টে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বেলা ৩ টা নাগাদ আবার কাজ শুরু হয়। 
প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী ডিএসপিতে উপর্যুপরি দুর্ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েনিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন ইস্পাত মন্ত্রীর কাছে। কর্তৃপক্ষ জরুরি পদক্ষেপ নিলে অনেক দুর্ঘটনা এড়ানো যেতো। দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য কেবল মাত্র একটা তদন্ত কমিটিই যথেষ্ট নয়। 

Comments :0

Login to leave a comment