যুদ্ধের আবহে রাজ্যের খাদ্য ভাণ্ডার মজুত রাখার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
বৃহস্পতিবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকেই মমতা ব্যানার্জি বলেন,‘‘ পহেলগামের পরে একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সবাইকে নিজেদের ভাণ্ডার তৈরি রাখতে বলেছে।’’ ঘটনা হলো, গত বুধবারই সীমান্তবর্তী সাত-আটটি রাজ্যের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। সেই বৈঠকের আলোচনা নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ্যমন্ত্রী কিছু বলতে চাননি। তবে এদিন যেভাবে ‘সবাইকে নিজেদের ভাণ্ডার তৈরি রাখতে বলেছেন’ মুখ্যমন্ত্রী, তাতে আপৎকালীন পরিস্থিতি তৈরি হলে যাতে খাদ্য সঙ্কট না হয় তারজন্য রাজ্য সরকারগুলিকে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তুত রাখার দিকেই ইঙ্গিত ছিল বলে মনে করা হচ্ছে।
বুধবারের পর এদিনও পাকিস্তান সীমান্ত এলাকাজুড়ে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি বজায় আছে। তার পরিপ্রেক্ষিতেই বৈঠকে মমতা ব্যানার্জি বলেছেন,‘‘ আপনি বললেন, কাশ্মীরের ওপর দিয়ে যাবে। যদি আমাদের এখানে হয়। তখন যেন কোনও সমস্যা না হয়।’’ এদিনের বৈঠকে রাজ্যের মুখ্যসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি সহ অর্থ, সমবায়, কৃষি, মৎস, কৃষি বিপণন, খাদ্য দপ্তর সহ বিভিন্ন দপ্তরের শীর্ষ আধিকারিক থেকে মন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে হিমঘর মালিকদের সংগঠন, পোলট্রি সংগঠন, কলকাতার পোস্তা বাজার অ্যাসোসিয়েশন সহ বিভিন্ন বণিকসভার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
যুদ্ধের এই আবহে জিনিসপত্রের দাম যাতে না বাড়ে, কালোবাজারি এড়ানোর জন্য আগাম বৈঠকে মমতা ব্যানার্জি দুটি বিষয় স্পষ্ট করেছেন। এক যুদ্ধের পরিস্থিতিতে দামকে নিয়ন্ত্রণ, একইসঙ্গে বছর পার হলেই রাজ্য বিধানসভার ভোট। যুদ্ধের আবহের মধ্যেও মমতা ব্যানার্জিকে নজর রাখতে হচ্ছে বিধানসভা ভোটের দিকেই। এদিন দাম নিয়ন্ত্রণ ও কালোবাজারি রোখার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন,‘‘ ২০২৬ সালে বিধানসভা ভোট। আমাদের এখন থেকেই আগামী বছরের পরিকল্পনা করে রাখতে হবে।
গত বুধবারই রাজ্যের পর্যালোচনা বৈঠক থেকে সরকারি দপ্তরে ছুটি বাতিল করার ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন অর্থ দপ্তরের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে সরকারি দপ্তরের কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এমনকি আগাম ছুটি নেওয়া থাকলে কেবলমাত্র অসুস্থতার কারণে সেই ছুটি গণ্য করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আধিকারিকদেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, চলতি পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই যেন হেড কোয়ার্টার ছাড়ার ক্ষেত্রে শীর্ষ আধিকারিকদের কাছে লিখিত অনুমতি নিতে হবে।
তবে এদিনের বৈঠক থেকে রাজ্যের সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর জন্য জেলাশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সক্রিয় হতে বলা হয়েছে পুলিশকেও। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘রাজ্যের সীমান্ত এলাকা নজরদারি বাড়াতে হবে। রাজ্য থেকে অন্যত্র যাতে খাদ্য সামগ্রী চলে না যায় সেদিকে নজর যেমন রাখতে হবে। তেমনই অস্ত্র যাতে রাজ্যে না আসে তার দিকেই নজর রাখতে হবে।’’
মুখ্যমন্ত্রীর জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যের খাদ্য সামগ্রীর দাম এখন নিয়ন্ত্রণেই আছে। সরকারের কাছে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজ্যের খোলাবাজারে জ্যোতি আলু এখন ১৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আবার পটল বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে। শসা বিকোচ্ছে ৪৮ টাকা কেজি দরে। কিন্তু মানুষের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। সরকারের দাবি করা দামের সঙ্গে বাস্তবের ফারাক বিস্তর।
তবে দাম নিয়ন্ত্রণ ও কালোবাজারি ঠেকাতে চলতি পরিস্থিতিতে এনফোর্সমেন্ট দপ্তর ও পুলিশকে সক্রিয় হওয়ার কথা বললেও তল্লাশি অভিযানে যেতে নিষেধ করেছেন মমতা ব্যানার্জি। শুধু নজরদারি করার কথাই বলেছেন। তল্লাশিতে নিষেধাজ্ঞা কেন? মমতা ব্যানার্জি মনে করেন, যুদ্ধকালীন এই পরিস্থিতিতে তল্লাশির নামে প্রশাসন তোলাবজি করতে নামতে পারে। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য,‘‘তল্লাশি করার আগে আমার সঙ্গে কথা বলতে হবে। এই সুযোগে কেউ যেন, টাকা তুলতে না বেরিয়ে পড়ে।’’
nabanna
দাম নিয়ন্ত্রণের বৈঠকে রাজ্যের খাদ্য ভাণ্ডার মজুত রাখার নির্দেশ নবান্নের

×
Comments :0