Editorial

গণতন্ত্রের ভিতে স্বৈরাচারী হামলা

সম্পাদকীয় বিভাগ

সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শেষ হবার পরদিনই নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা কেড়ে নেবার বড়সড় পদক্ষেপ নিয়েছে মোদী সরকারের অঙ্গুলি হেলনে নির্বাচন কমিশন। সাধারণ মানুষ যাতে কোনও অবস্থাতেই নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর নজরদারি করতে না পারে তার জন্যই এমন উদ্ধত স্বৈরাচারী পদক্ষেপ। মোদ্দা কথা নির্বাচন কমিশনকে নিষ্ক্রিয় রেখে প্রশাসনকে ব্যবহার করে শাসক দল যাতে নিজেদের খুশি মতো ভোট করতে নিজেদের অনুকূলে ফল বের করে আনতে পারে তারজন্যই নির্বাচনী স্বচ্ছতার উপর এই আঘাত। রীতিমতো নোটিস দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এখন থেকে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সিসিটিভি’র ফুটেজ, ওবেডকাস্টিং ফুটেজ বা নির্বচন বিধি চালু থাকার সময় প্রার্থীদের ভিডিও ফুটেজ ইত্যাদি কোনও কিছুই সাধারণ মানুষ খতিয়ে দেখার সুযোগ পাবেন না। অর্থাৎ চোখের সামনে যদি দেখা যায় ভোটে কারচুপি হচ্ছে, ছাপ্পা ভোট হচ্ছে, বিধি লঙ্ঘন করে প্রার্থী বা তার অনুগামীরা স্বচ্ছ, শান্তিপূর্ণ, অবাধ নির্বাচন ভণ্ডুল করে দিচ্ছে সেটা প্রমাণ করার জন্য কোনও ফুটেজ কেউ দেখতে পারবেন না। ফলে অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ হাজির করতে পারবেন না। তখন পত্রপাঠ সব অভিযোগ উড়িয়ে দিতে কমিশনের কোনও অসুবিধা হবে না।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচনে স্বচ্ছতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নির্বাচন যদি নির্বিঘ্নে-বিরুপদ্রবে, অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে হয়, স্বচ্ছতা যদি বজায় থাকে, তাহলে নির্বাচন কমিশনের ওপর মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস দৃঢ়। একমাত্র তখনই মানুষ ভোটের ফলকে যথার্থ বলে গ্রহণ করেন। মানুষের এই আস্থা ও বিশ্বাসই নির্বাচন কমিশনের সত্য পরিচয় বহন করে। তাছাড়া কমিশন একটি আধা বিচার বিভাগীয় সাংবিধানিক সংস্থা। দলমতের নির্বিশেষে  উর্ধ্বে নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনা করাই তার দায়িত্ব। কেন্দ্রে বা রাজ্যে কাদের সরকার আছে সেটা তাদের বিচার্য নয়। কিন্তু সাম্প্রতিককালে লক্ষ্য করা যাচ্ছে মোদী সরকার ধারাবাহিকভাবে নির্বাচন কমিশনের ওপর প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কয়েক বছর আগে কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতিকে সরিয়ে সরকারের অধিকার কায়েম করেছে মোদী-শাহরা। এখন প্রধানমন্ত্রী বা সরকার নিজেদের পছন্দের বিশ্বস্ত লোককে নিয়োগ করায় কোনও বাধা নেই। অর্থাৎ মোদীরা এখন নিজেদের পছন্দের লোক দিয়েই কমিশন চালাতে পারছে। এবার বিধি বদল করে নির্বাচন পর্বে মানুষের নজরদারির অধিকার কেড়ে নিয়েছে।
গণতন্ত্রে যাদের আস্থা ও বিশ্বাস আছে তারা সর্বদা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ, অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে চায়। তারজন্য কমিশন গঠনে, পরিচালনায়, বিধি তৈরিতে যা যা করণীয় সেটাই করে। কিন্তু যারা গণতন্ত্রকে দুর্বল করে স্বৈরাচারী কায়দায় ক্ষমতা দখল করতে ও দখলে রাখতে চায় তারা অসৎ, অস্বচ্ছতা ও অবৈধ উপায়ে ভোটে জিততে চায়। তারজন্য নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা কেড়ে নিয়ে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চায়। নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা হরণ শুধু সংবিধানের ওপর আঘাত নয়, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকেই ধ্বংস করার পদক্ষেপ। মোদী সরকার সেটাই করছে। এটা কোনও অবস্থাতেই মেনে নেওয়া যায় না।

 

Comments :0

Login to leave a comment