Bangladesh

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নিন্দনীয় ঘটনা, বললেন ভারতের বিদেশ সচিব

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর এবং ধর্মীয় স্থলে হামলা নিন্দনীয়। সোমবার ঢাকায় বাংলাদেরশের বিদেশ সচিবের সাথে বৈঠকে একথা জানালেন ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মিশ্রি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময় ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশের বিদেশ সচিবের সাথে আলোচনা হয়েছে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার কথাও জানানো হয়েছে ভারতের পক্ষ থেকে।’’ তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের সাথে একটি ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়। অতীতে দুই দেশের মধ্যে যেমন ইতিবাচক সম্পর্ক ছিল, ভবিষ্যতেও যাতে তা থাকে তার কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকারের সাথে যে ভারত যৌথ ভাবে কাজ করতে তৈরি তা এদিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন ভারতের বিদেশ সচিব।
রবিবার ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস পর্যন্ত অভিযানের ডাক দেয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও উসকানিমূলক অপপ্রচারের প্রতিবাদে বিএনপি, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের দুদিনব্যাপী বিক্ষোভের অংশ হিসাবে এই মিছিলের ডাক দেওয়া হয়। এদিন সকাল দশটার থেকে শহরের নয়া পল্টন চত্বরে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় দপ্তরের সামনে ডাকা বিক্ষোভ সমাবেশের থেকে এই মিছিল শুরু হয়। ভারতীয় দূতাবাসের সামনে রামপুরা ব্রিজ অঞ্চলে পুলিশ বিএনপি’র মিছিল আটাকায়। পরে বিএনপি ও তার তিন সহযোগী সংগঠনের এক প্রতিনিধিদল ভারতীয় হাই কমিশনে এক স্মারকলিপি জমা দেয়। বিএনপি’র দেওয়া স্মারকলিপিতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ভুল তথ্য ছড়ানো বন্ধ করতে ভারত সরকারকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি এমন স্তরের অপপ্রচারকে ‘রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের শামিল’ বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। আগরতলার দূতাবাসে হিন্দুত্ববাদীদের হামলা সহ বিজেপি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর তরফে সাম্প্রদায়িক উসকানি ও প্ররোচনামূলক মন্তব্যকেও স্মারকলিপিতে ধিক্কার জানিয়েছে বিএনপি। আগরতলায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনারের দপ্তরে হামলার ঘটনাকে কূটনৈতিক নিয়ম ও আন্তর্জাতিক আইনের একটি গুরুতর লঙ্ঘন বলে অভিযোগ করে, তা ১৯৬১-র কূটনৈতিক সম্পর্ক সংক্রান্ত ভিয়েনা সম্মেলনের বিধির অবমাননা বলে উল্লেখ করেছে বিএনপি। 
অন্যদিকে নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করা শুরু করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। সংবিধান অনুযায়ী তার তিন মাসের মধ্যে সংসদীয় নির্বাচন ডাকার কথা। তবে অন্তর্বর্তী সরকার তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। গত সপ্তাহে আগরতলার দূতাবাসে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস এক সর্বদলীয় বৈঠক ডাকেন। বিএনপি, জামাত সহ বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) সহ বিভিন্ন বামপন্থী ও প্রগতিশীল দলও এই বৈঠকে অংশগ্রহণ করে। ইতিমধ্যে এই বৈঠকের পর থেকেই নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত এক সর্বদলীয় সরকার গঠনের জল্পনা চলছে। 
তবে সম্প্রতি সিপিবি’র মুখপত্র ‘একতা’-র সম্পাদকীয়তে পার্টির সভাপতি মহম্মদ শাহ আলম অবিলম্বে নির্বাচনের ‘রোডম্যাপ’ ঘোষণা করে দেশকে নৈরাজ্যমুক্ত করার আবেদন করেছেন। নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে দেশের মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরবে। উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, ভয়ভীতি কমবে এবং দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রও কমে আসবে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিনিয়োগ করার আস্থা ফিরে আসবে। শাহ আলম লিখেছেন, ‘‘জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল স্বৈরতন্ত্র বিরোধী মানুষের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা, সমাজের বৈষম্যবিরোধিতা ও মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা। বাহাত্তরের সংবিধান, জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা বাতিলের কোনো এজেন্ডা ছিল না। এই বিষয় নিয়ে কেউ কেউ বিতর্ক সৃষ্টি করে ইতোমধ্যে স্বৈরাচারবিরোধী জাতীয় ঐক্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। এখানে পতিত স্বৈরাচার ও নানা ধরনের অপশক্তি সুযোগ পাচ্ছে।’’ বর্তমানে যে অস্থিরতা ও নৈরাজ্য চলছে তার থেকে দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে হলে জাতীয় নির্বাচনই একমাত্র হাতিয়ার বলে মনে করছে সিপিবি। পাশাপাশি অতি প্রয়োজনীয় সংস্কার করে, কমিশনগুলোর মৌলিক সংস্কারের প্রস্তাব নির্বাচিত সরকারের জন্য ছেড়ে, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অবিলম্বে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি তুলেছে সিপিবি ও অন্যান্য বামপন্থী দলগুলি।

Comments :0

Login to leave a comment