ISRAEL PALESTINE CONFLICT

অবরুদ্ধ গাজায় ৬ হাজার বোমা

আন্তর্জাতিক

israel palestine conflict hamas usa israel iran india bengali news

ছ’দিনে গাজায় ৬০০০ বোমা ফেলা হয়েছে বলে ইজরায়েলই দাবি করেছে। মোট ৪ হাজার টন বোমা ফেলা হয়েছে। গাজাকে ঘিরে আকাশপথে বিমান হানা, সমুদ্র থেকে বিমান হানা এবং স্থলসীমান্ত থেকে অবিশ্রান্ত গোলা বর্ষণ চলছে। বৃহস্পতিবার ভারতীয় সময় রাত পর্যন্ত ১৪০০-র বেশি প্যালেস্তিনীয় নিহত হয়েছেন। এঁদের অর্ধেকই নারী ও শিশু। ইজরায়েলের এবারের আক্রমণের ধরন সম্পূর্ণ ভিন্ন। অতীতের ‘নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে’ আক্রমণের বদলে এবার একের পর এক আবাসিক এলাকা সম্পূর্ণ ধূলিস্যাৎ করে দেওয়া হচ্ছে। শুধু কিছু বাড়ি নয়, পুরো এলাকা নিশ্চিহ্ন করে দেবার লক্ষ্যেই আক্রমণ চলছে। কোনো আগাম সতর্কবার্তা দেওয়া হচ্ছে না। কেউ যাতে পালিয়ে যেতে না পারেন, সেই লক্ষ্যে গাজা থেকে বেরোনোর সমস্ত রাস্তা অবরুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গাজায় এখনই ৩লক্ষ ৪০ হাজার মানুষের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে বলে রাষ্ট্রসঙ্ঘের হিসেব। রাষ্ট্রসঙ্ঘের স্কুলে হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নিলেও এখন আর জায়গা নেই। দিনের বেলায় গাজার রাস্তা দিয়ে অসংখ্য মানুষকে পরিবার নিয়ে দৌড়োতে দেখা যাচ্ছে। অনির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে। সেইসঙ্গে গাজা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে বুধবার সন্ধ্যা থেকেই। ইজরায়েল বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে, জ্বালানি সরবরাহ আটকে দেওয়ায় গাজার নিজস্ব একমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ। পানীয় জল নেই, নিকাশি ব্যবস্থা বিধ্বস্ত। নিকষ কালো অন্ধকারে আলো শুধু বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণে। কোনো সহায়তা আসতে দেওয়া হচ্ছে না। মিশর সীমান্তে অপেক্ষা করছে কিছু সাহায্য ও ত্রাণ। কিন্তু ইজরায়েল জানিয়ে দিয়েছে সেইসব গাজায় ঢুকতে গেলেই বোমাবর্ষণ করা হবে। রাফা সীমান্ত সিল করে দিয়েছে মিশর। 
রেড ক্রসের আঞ্চলিক অধিকর্তা বলেছেন, বিদ্যুৎ চলে যাবার পরে হাসপাতালগুলি মর্গে পরিণত হবে। ইনকিউবেটরে থাকা নবজাতক এবং অক্সিজেন সাপোর্টে থাকা প্রবীণদের সঙ্কট দেখা দেবে। বস্তুত ইতিমধ্যেই হাসপাতালের সামে তাঁবু খাটিয়ে মর্গ তৈরি হয়ে গেছে। 
সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে বীভৎস এই সামরিক আক্রমণ আরো তীব্রতা পাবে গাজায় ইজরায়েলের স্থলবাহিনী ঢুকলে। তার প্রস্তুতি চলছে। সীমান্তে সেনারা চলে এসেছে। সেখান থেকে কামানে গোলা ছোঁড়া হচ্ছে। যে কোনো সময়ে ইজরায়েলী সেনারা গাজায় ঢুকবে বলে মনে করা হচ্ছে। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু টেলিভিশন ভাষণে বলেছেন, ‘সমস্ত হামাস সদস্য মৃত’। এই ঘোষণার অর্থ হচ্ছে গাজায় সমস্ত প্যালেস্তিনীয়ের জন্য মৃত্যু পরোয়ানা জারি হয়ে গেছে। ইজরায়েল যে ‘হামাস সদস্যদের’ লক্ষ্য করে আক্রমণ চালাচ্ছে না, তা এখন দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। বেপরোয়া, নির্বিচার এই ধ্বংস অভিযানে গাজায় কাউকেই বেঁচে থাকতে না দেবার বার্তা দিয়ে রেখেছেন নেতানিয়াহু। 
ইজরায়েলের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তার প্রধান মদতদাতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ইজরায়েল যে আরব দুনিয়ায় মার্কিনীদের ‘দালাল রাষ্ট্র’ ( কূটনৈতিক পরিভাষায় ‘ক্লায়েন্ট স্টেট) তা কোনো নতুন কথা নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুধু ভূমধ্যসাগরে বিশাল নৌবহর প্রস্তুত রেখেছে তা-ই নয়, বিমানে অস্ত্র পাঠিয়েছে। মার্কিন বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিন্কেন বৃহস্পতিবার তেল আভিভ পৌঁছেছেন। ইজরায়েলের সামরিক অভিযানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় তিনি অংশ নেবেন। ফ্রান্স প্যালেস্তাইনের সপক্ষে সমস্ত বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। জার্মানিও জানিয়ে দিয়েছে, তারা ইজরায়েলের এই সামরিক অভিযানে সাহায্য করতে প্রস্তুত। জার্মানির সরকার প্যালেস্তাইনের সপক্ষে কোনো বিক্ষোভ হতে দেবে না। যদিও ঘোষণার সময়ে বলা হচ্ছে ‘হামাসের সমর্থনে’ কোনো বিক্ষোভ করা যাবে না। 
এই নৃশংস যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী করতে ইজরায়েলের শাসকরা বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে সংযুক্ত সরকার তৈরির প্রক্রিয়াতে রয়েছে। তৈরি করা হচ্ছে তীব্র জায়নবাদী আবেগ। এই লক্ষ্যে ভুয়ো খবর প্রচার করে আবেগ তৈরির চেষ্টাও চলছে। হামাসের আক্রমণে এই প্রথম ইজরায়েলের বড় রকমের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় এমনিতেই ইজরায়েলের জনমনে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ভুয়ো খবর প্রচার করে তাকেই আরো ধারালো করা হচ্ছে। ইজরায়েলের সরকারের হিসেব, ১৩০০ ইজরায়েলী হামাসের আক্রমণে নিহত হয়েছেন। প্রতিক্রিয়ায় ইজরায়েলের তৈরি বেআইনি বসতির বাসিন্দারাও আশ্ত্র নিয়ে প্যালেস্তিনীয়দের হত্যার অভিযানে নেমেছেন। ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে এমনই এক আক্রমণে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে শুধু এ বছরেই ২৫০-র বেশি প্যালেস্তিনীয়কে হত্যা করা হয়েছে। ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে হামাসের প্রভাব কম। 


 

Comments :0

Login to leave a comment