বিজেপি’র কৌশলের সঙ্গে যুঝতে শিখেছে বিরোধী দলগুলিকে। জনতার মূল সমস্যা থেকে মুখ ঘোরানোই হলো বিজেপি’র প্রধান কৌশল। সম্পদের বৈষম্য থেকে বেকারি বা মূল্যবৃদ্ধির মতো বিষয়ে সরব হওয়ার অবস্থানেই অনড় থাকবেন বিরোধীরা।
রবিবার দিল্লিতে একটি আলোচনা চক্রে যোগ দিয়ে এই পরিকল্পনা জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তাঁর দাবি, লোকসভা ভোটে বিজেপি যা চাইছে তা হবে না।
রাহুল বলেছেন, ‘‘বিরোধী দলগুলিও নতুন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মতো সক্ষম। বিজেপি’র কৌশলের সঙ্গে যুঝতে শিখেছে। সমন্বয় রেখেই কাজ করছেন বিরোধীরা। এই দলগুলিকে ভোট দেন দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ।’’
গান্ধীর দাবি, মধ্য প্রদেশ এবং ছত্তিশগড়ের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের জয় নিশ্চিত। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘‘মধ্য প্রদেশ এবং ছত্তিশগড়ে কংগ্রেস অবশ্যই জিতবে। তেলেঙ্গানায় হয় জয়ী হবে। রাজস্থানেও জয়ের খুব কাছাকাছি রয়েছে কংগ্রেস।’’
এই বছরই মেয়াদ শেষ হচ্ছে রাজস্থান, ছত্তিশগড়, মধ্য প্রদেশ, তেলেঙ্গানা এবং মিজেরাম বিধানসভার। রাজস্থান এবং ছত্তিশগড়ে সরকার চালাচ্ছে কংগ্রেস। মধ্য প্রদেশে বিধানসভায় গরিষ্ঠতা পেলেও দলের বিধায়কদের একাংশ জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার নেতৃত্বে দল ভেঙে বিজেপি’তে যোগ দেয়। ফলে পিছনের দরজা দিয়ে সরকারে বিজেপি।
দিল্লিতে আসামের একটি সংবাদ প্রতিষ্ঠান আয়োজিত কনক্লেভে এদিন যোগ দেন রাহুল। তিনি বলেছেন, ‘‘কয়েকজনের হাতে বিপুল সম্পত্তি কেন্দ্রীভূত। সম্পদের বিপুল বৈষম্য, ব্যাপক কর্মহীনতা, জাতভিত্তিক বঞ্চনা, অন্য অনগ্রসর অংশ, আদিবাসীদের বঞ্চনা এবং মূল্যবৃদ্ধি জনতার জীবনের বিষয়। এখান থেকে চোখ ঘোরাতে চায় বিজেপি।’’
রাহুলের ব্যাখ্যা, ‘‘দেশের মানুষ জাতভিত্তিক জনগণনা চাইছেন। বিরোধীরা সেই দাবি তুলেছে। রমেশ বিধুরিকে দিয়ে সংসদে ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে আক্রমণ করল বিজেপি। নজর ঘোরানোর চেষ্টা হচ্ছে। তেমনই ‘এক দেশ এক ভোট’ দেশের নাম বদলানোর মতো চেষ্টা চলছে। বিজেপি জনতার আসল বিষয় নিয়ে আলোচনা হলে কিছু বলার জায়গায় নেই।’’
রাহুলের বক্তব্য, বিজেপি’র এই কৌশল মোকাবিলার শিক্ষা কংগ্রেস নিয়েছে কর্ণাটক নির্বাচন থেকে। তিনি বলেছেন। ‘‘আমরা সামাজক সুরক্ষা কর্মসূচিতে জোর দিয়েছিলাম, সেটি আঁকড়ে থেকেই ভাষ্য তৈরি করেছিলাম। বিজেপি সর্বদা এই ভাষ্যকে ভেঙে দিতে চায়।’’
প্রচারের ধরন প্রসঙ্গে রাহুল জোর দিয়েছেন সরাসরি জনতার সঙ্গে সংযোগে। তিনি বলেছেন, ‘‘গণমাধ্যম ওদের দখলে। আমরা যা-ই বলব গণমাধ্যম মানুষের কাছে অন্যভাবে পেশ করবে। তবে মনে করবেন না বিরোধীরা মোকাবিলা করতে পারবে না।’’
রাহুলের অভিযোগ, তাঁর টুইটার বা ইউটিউব চ্যানেলের পৌঁছ চেপে দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘ভারত জোড়োর মতো যাত্রা আমাদের দরকার ছিল। সম্প্রতি লাদাখেও তাই করি খানিক অন্য ধরনে। বড় শিক্ষা হলো পুরনো সংযোগ কৌশল বাতিল হয়ে যায়নি মোটেই। মহাত্মা গান্ধী আধুনিক যুগে যা শুরু করেছিলেন আজও প্রাসঙ্গিক। সারা বিশ্বেই গণমাধ্যমে এই সমস্যা আছে। ফলে সরাসরি মানুষের সঙ্গে কথা বলার বিকল্প নেই। বিজেপি বা গণমাধ্যম বিকৃতির চেষ্টা করলেও তার মোকাবিলা করা সম্ভব।’’
Comments :0