রাজ্যের বর্তমান সরকারের অবহেলায় ধুঁকছে কোচবিহার ২নং ব্লকের মরিচবাড়ি-খোল্টা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার খোল্টা ইকো-পার্ক। ভেঙে পড়েছে এই পার্কের পরিকাঠামো। সবকিছু জেনেও উদাসীন সরকারের বন বিভাগ।
২০০৬ সালে রাজ্যের বামফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রীসভায় অনন্ত রায় বনমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর জন্মভূমি খোল্টা এলাকায় এই পার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। প্রায় ৬৭বিঘা জমির ওপর গড়ে ওঠে এই পার্ক। যে জায়গায় এই পার্ক গড়ে ওঠে, তা আসলে একটি হেরিটেজ ফরেস্ট। কোচবিহারের রাজার আমলে এই এলাকায় লাগানো হয়েছিল বার্মা সেগুন গাছের চারা। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে সেই চারা গাছগুলি কার্যত মহীরুহে পরিণত হয়। বন্দুকের বাট তৈরীর কাজে ব্যবহৃত হতো এই বার্মা সেগুন কাঠ। ইকোপার্ক তৈরির জন্য তৎকালীন সময়ে বেছে নেওয়া হয় এই সেগুন গাছের জঙ্গলকেই। এলাকার পরিবেশকে সুন্দর করে তোলার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ যাতে ব্যবসা-বাণিজ্য করে তাদের সংসার প্রতিপালন করতে পারেন স্বচ্ছল ভাবে, এদিকে লক্ষ্য রেখেই গড়ে তোলা হয় চিলড্রেন পার্ক এবং ডিয়ার পার্ক। টয় ট্রেন, প্যাডেল বোট, ঝুলন্ত সেতু সবটাই ছিল এই পার্কে। এই পার্কে শোভা পেতো বদ্রি পাখি, ময়ূর সহ বিভিন্ন ধরনের পাখি আর এই পার্কের বিশেষ আকর্ষণ ছিল সম্বর ও চিতল প্রজাতির হরিণ। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল এই পার্কটি। প্রতিদিন প্রচুর অংশের পর্যটকরা ভিড় জমাতেন এই পার্কে। কিন্তু ২০১১ সালে রাজ্যের সরকার পরিবর্তনের পর ক্রমশ অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে এই সরকারি উদ্যান। অযত্ন আর অবহেলায় ক্রমশ ভেঙে পড়তে থাকে এই পার্কটির পরিকাঠামো। পাখিরা খুঁজে নেয় অন্য কোন বাসা। বন্ধ হয়ে যায় ঝুলন্ত ব্রিজ, মুখ থুবড়ে পড়ে প্যাডেল বোট, অন্যত্র নিয়ে চলে যাওয়া হয় টয় ট্রেন। আর ক্রমশ কমতে শুরু করে পর্যটকের সংখ্যা। এই সময় থেকে আজ পর্যন্ত জঞ্জালে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে এই পার্ক। ২০১৫ সাল নাগাদ এই পার্ক থেকে ৬টি সম্বর এবং ১৮টি চিতল হরিণ ডাবগ্রাম-ফুলবাড়িতে নিয়ে যেতে সক্ষম হয় বনদপ্তর। আর এই সময় এলাকাবাসীদের প্রবল ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় বনদপ্তরের আধিকারিক থেকে কর্মীদের। জনতার ক্ষোভের মুখে পড়ে ৪ টি চিতল হরিণ এই পার্কে রেখে যেতে বাধ্য হয় বনদপ্তর। এরপর ক্রমশ বংশবিস্তার শুরু করে এই চিতল হরিণরা। ২০১৭ সালের বন্যায় মারা যায় ৭টি হরিণ। বর্তমানে এই পার্কে রয়েছে প্রায় ১৩টি চিতল প্রজাতির হরিণ।
এই পার্কে এখন নেই পর্যটকদের আনাগোনা, নেই চিল্ড্রেন পার্কে শিশুদের কলকাকলি। আর এই পার্ককে ঘিরে বিভিন্ন যে সমস্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা শুরু করেছিলেন স্থানীয় মানুষেরা, তারাও তাদের ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন। এক চরম সংকটের মুখোমুখি এই মানুষেরা। এই মুহূর্তে রীতিমতো অসামাজিক কার্যকলাপের আখড়া হয়ে উঠেছে এই খোল্টা ইকোপার্ক।
এই প্রসঙ্গে প্রাক্তন বনমন্ত্রী অনন্ত রায় বলেন, ‘‘পর্যটনে বিকাশ ঘটাতেই গোটা রাজ্যের পাশাপাশি কোচবিহার জেলাতে এধরনের পার্ক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল রাজ্যের তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। এর মধ্যে একটি এই খোল্টা ইকোপার্ক। কিন্তু ২০১১ সালের পর থেকে সরকারি সদিচ্ছার অভাবে ধুঁকছে এই পার্কটি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ রাজ্যের বর্তমান সরকার কিছু সৃষ্টি করতে পারে না। এই সরকার আসলে ধ্বংসের সরকার।’’
Kholta Eco Park
সরকারি সদিচ্ছার অভাবে ধুঁকছে কোচবিহার খোল্টা ইকোপার্ক
![](https://ganashakti-new-website.s3.ap-south-1.amazonaws.com/23955/67a631f013a2a_kholta-eco-park-in-cooch-behar.jpg)
×
Comments :0