INTENTIONS REVEALED

উলঙ্গ সরকার

সম্পাদকীয় বিভাগ

সুপ্রিম কোর্টের তোপের মুখে পর্দাফাঁস হয়ে গেছে এরাজ্যের অপদার্থ সরকারের সর্বোচ্চ আদালতের তিন বিচারপতির একের পর এক প্রশ্নবাণে জর্জরিত সরকার জবাব দেবার ভাষাই হারিয়ে ফেলেছে। জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে আর জি করকাণ্ডের তদন্তের প্রথম থেকেই সরকারের ও পুলিশের প্রতিটি পদক্ষেপই ছিল সন্দেহজনক এবং রহস্যে মোড়া। পুলিশ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এমনকি স্বয়ং স্বাস্থ্য ও পুলিশ মন্ত্রীর বক্তব্যও ছিল বিভ্রান্তিকর। তদন্ত প্রক্রিয়া যে স্বাভাবিক পথে এগচ্ছে না, তাকে সচেতনভাবে এবং পরিকল্পিতভাবে বিপথগামী করা হয়েছে আসল সত্যকে আড়াল করার জন্য সেটাও পরিষ্কার হয়ে গেছে সর্বোচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণে। যে প্রশ্নগুলি এতদিন ডাক্তাররা জোরালোভাবে তুলছিলেন, যে প্রশ্নগুলি আমজনতার মুখে মুখে শোনা যাচ্ছিলো, যে প্রশ্নগুলিকে সামনে রেখে জনবিক্ষোভে রাজ্য উত্তাল হয়ে উঠেছে সেই প্রশ্নগুলিই ঘুরেফিরে পুনরুচ্চারিত হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের মুখে।
দেহ উদ্ধারের পর কেন তাকে আত্মহত্যার ঘটনা বলে চালানোর চেষ্টা হয়েছিল। বাবা-মাকে বিলম্বে খবর দি‍য়ে ডেকে আনার পরও মেয়েকে দেখতে না দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেন বসিয়ে রাখা হলো? হাসপাতালের মধ্যে কর্তব্যরত ডাক্তারের ধর্ষণ ও খুনের পর এফআইআর করতে কেন প্রায় ২০ ঘণ্টা সময় লেগে গেল? জানার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেন এফআইআর করেনি? পুলিশের উপস্থিতিতে ১৪ আগস্ট রাতে দুষ্কৃতীরা হাসপাতালে যথেচ্ছ তাণ্ডব ও ভাঙচুর চালালো কীভাবে? দেহ যেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে সেই জায়গা তদন্তের পক্ষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলেও পুলিশ সেই জায়গা সুরক্ষিত রাখতে পারলো না কেন?
এমন আরও অজস্র প্রশ্ন উঠলেও তার কোনও বিশ্বাসযোগ্য সদুত্তর সরকার বা পুলিশ দিতে পারছে না। তদন্ত শুরু হতে না হতেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করে দিলেন প্রধান অভিযুক্ত ধরা পড়ে গেছে। তদন্ত গুটিয়ে ফেলার জন্য এটা কোনও আগাম বার্তা নয়তো। অপরাধীর ফাঁসির দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি কি জানেন না ফাঁসির রায় পেতে যথোপযুক্ত প্রমাণ হাজির করতে হয় পুলিশকে। তাঁর পুলিশ যদি ঠিকঠাক তদন্ত করতে পারে তবেই ফাঁসির রায় দেবার কথা আদালত ভাববে। যেখানে গোটা তদন্তটাই হচ্ছে সত্য গোপনের জন্য সেখানে ফাঁসির দাবি হাস্যকর, ছেলেমানুষী ছাড়া আর কিছুই নয়। মুখ্যমন্ত্রীর স্নেহের পাত্র অধ্যক্ষের পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি-অনিয়মের কথা সরকারের অজানা নয়। তথাপি তাঁর উপরই মুখ্যমন্ত্রীর অগাধ ভরসা। জনতার চোখে ধিক্কৃত অধ্যক্ষ পদত্যাগের নাটক করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাকে অপর এক মেডিক্যাণলের অধ্যক্ষ হিসাবে নিয়োগ করা হলো। কেন এই অধ্যক্ষকে আড়াল করা, বাঁচানোর এত মরিয়া চেষ্টা? আবার সিবিআই গ্রেপ্তার করতে পারে এই আশঙ্কায় সেই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তড়িঘড়ি মামলা করে পুলিশ নিজেদের হেপাজতে সুরক্ষা দেবার তোড়জোড় শুরু করেছে!
সত্যি সত্যি যদি তদন্ত হয় ধর্ষণ-খুনের পেছনে বিরাট চক্রের হদিশ মিলবে। তাতে বোঝা যাবে অধ্যক্ষকে ঘিরে হাসপাতালে দুর্নীতি ও লুঠতরাজের মুক্তাঞ্চল তৈরি হয়েছিল আর জি করে। তাতে জড়িয়ে আছে নেতা-মন্ত্রী-পুলিশ-আমলা সকলে। এই গোটা অপরাধচক্রকে আড়াল করতে ও সুরক্ষিত রাখতেই ধর্ষণ-খুনের ঘটনা জানার পরই সর্বোচ্চ তৎপরতা শুরু হয়। সত্য গোপন ও তথ্য লোপাটের জন্যই চালানো হয় আত্মহত্যার ঘটবা বলে, এফআইআর করার থেকে বিরত থাকে। বাবা-মাকে মেয়ের কাছে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি। দ্বিতীয়বার যাতে অটোপসির সুযোগ না থাকে তাই চটজলদি দেহ পুড়িয়ে ফেলার ব্যবস্থা হয়। একজনকে গ্রেপ্তার করেই প্রচার করা হয় অপরাধী ধরা পড়ে গেছে। সংস্কারের নামে ঘটনাস্থলের তথ্য প্রমাণ লোপাটের ব্যবস্থা হয়, দুষ্কৃতীদের সুযোগ দেওয়া হয় ভাঙচুর করে অবশিষ্ট সব তথ্য-প্রমাণ নষ্ট করার যাতে কোনও দিন সত্য জানা না যায়। নিখুঁত পরিকল্পনার মাধ্যমেই সবটা গুটিয়ে আনার চেষ্টা এখনও অব্যাহত। এটা অবশ্য নতুন নয়। সেই ২০১১ সাল থেকেই একের পর এক ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর সব ধর্ষণ-খুন, নির্যাতনের তদন্ত এভাবেই বিপথগামী করে অপরাধীদের রক্ষা করা হয়েছে এবং উৎসাহিত করা হয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment