Delhi AAP

পুরোহিত ভাতা কাজে এল না, দিল্লি দাঙ্গায় নীরবতাও কী ফেলল প্রভাব?

জাতীয়

শিশুদের পরিচয় সংক্রান্ত সব নথি না থাকলে ভর্তি করা হবে না স্কুলে। বিধানসভা ভোটের মুখে এমনই নির্দেশিকা জারি করেছিল দিল্লির ‘আপ’ সরকার। সবচেয়ে বিপাকে পড়ে সব ধর্মের পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবার।
এই নির্দেশিকা ঘিরেই অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ‘নরম হিন্দুত্ব’ কড়া সমালোচনার মুখে পড়ে। কেজরিওয়াল যদিও তার আগে থেকেই মন্দিরযাত্রা, স্নানের প্রচারের নেমে পড়েছিলেন। লক্ষ্য ছিল বিজেপি এবং আরএসএস’র উগ্র হিন্দুত্বের অভিঘাত সামলানো। 
কিন্তু সেই কৌশল কতটা কাজে এসেছে সে প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক স্তরে। 
সেই সঙ্গে রয়েছে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ। বিশেষ করে স্বচ্ছ ভোটার তালিকা না থাকা। আবার আপ’-র বিরুদ্ধে দুর্নীতি-জাঁকজমকের অভিযোগও বিষয় হয়েছে বলে মত এই অংশের। 
দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক হিংসা হয়েছিল ২০২০’র ভোটের পর। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দিল্লি পুলিশ কেবল মুসলিমদের জেলে ভরেছে। এমনকি প্রকাশ্যে হুমকি দিতে শোনা গিয়েছে বিজেপি’র এমন নেতাদের ছোঁয়া পর্যন্ত হয়নি। দিল্লি পুলিশ ‘আপ’ সরকারের এক্তিয়ারেই ছিল না। কিন্তু রাজনৈতিক দল হিসেবে ‘আপ’ সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রতিবাদে নামেনি। 
২০১৩ সালে বাইরে থেকে কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে দিল্লিতে প্রথম সরকার গঠন করে আপ। মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল। তারপর ৪৯ দিনের মাথায় সেই সরকার পড়ে যায়। রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়। ২০১৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনে একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করলো আপ। ৭০টি আসনের মধ্যে ৬৭টি আপের দখলে। ‘আপ-র উত্থানে সবচেয়ে ধাক্কা খেয়েছে কংগ্রেস। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল গড়ে উঠেছিল লোপাল আইন আন্দোলনের হাত ধরে। প্রধান প্রচার ছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে প্রান্তিক জনতাকে ছাড় দিয়েও উন্নয়নের মডেল প্রচার করেছিল ‘আপ’।
২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচন ৬২টি আসনে জয়ী আপ। বিজেপি ৮টিতে। কেজরিওয়াল সরকারের মহল্লা ক্লিনিক, সরকারি স্কুলে উন্নতমানের পরিকাঠামো নজর টানছিল দেশেরও। 
তাল কাটলো ২০২৫ এর নির্বাচনে। আপের মুখে নেই আর কোন উন্নয়নের কথা যে উন্নয়ন ‘আম আদমি’র ভালো করবে। এক ঝটকায় খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে কন্‌ট প্লেসের হনুমান মন্দির থেকে পুরোহিত এবং গুরুদ্বারের গ্রন্থিদের জন্য মাসিক ১৮ হাজার টাকা ভাতা ঘোষণা করলেন কেজরিওয়াল। 
এর আগে পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জি ইমাম ভাতা, পুরোহিত ভাতা চালু করেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গে ইমাম ভাতা, পুরোহিত ভাতা চালু করে আরএসএসের পায়ের তলার মাটি শক্ত করেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। দিল্লির পুরোহিত ভাতা তেমনই কোনও প্রভাব ফেলেছে কিনা তা নিয়ে চর্চা চলছে। 
লোকপাল বিলের দাবিতে দিল্লিতে আন্দোলনের সময় আন্না হাজারে যখন দিল্লির যন্তর মন্তরে অবস্থান চালাচ্ছেন সেই মঞ্চে তাঁর পাশে থাকতেন আইআইটি’র এক স্নাতক। তিনি অরবিন্দ কেজরিওয়াল। দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। আন্নার ওই আন্দোলনের পরপরই দিল্লিতে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের গড়ে ওঠে ‘আপ’। বিজেপি এবং কংগ্রেস, দ্বিদলীয় সমীকরণের বাইরে এনেছিল আম আদমি পার্টি। নিম্ন মধ্যবিত্ত, জুগ্গি-ঝুপড়ি এলাকা, পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে প্রভাব ফেলেছিল এতটাই যে টানা পনেরো বছরের মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেসের শীলা দীক্ষিত সরকারকে ফেলে দিতে পেরেছিল। সরকারি খরচের প্রতিটি পয়সার হিসেব থাকবে, এই প্রতিশ্রুতি রাজনৈতিক ভরসা তৈরি করতে পেরেছিল। 
২০২২’র নির্বাচনের আগে জনতার এই ভরসায় ধাক্কা দিতে তৎপর ছিল মোদী সরকার। আবগারি দুর্নীতির দায়ে জেলে পাঠানো হয় মুখ্যমন্ত্রী, উপ-মুখ্যমন্ত্রী সহ সাংসদ সঞ্জয় সিং-কে। বিরোধীরা একজোটেই প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছিল কোনও প্রমাণ ছাড়া রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চলছে। বিজেপি এই আক্রমণ বজায় কেবল রাখেনি। তীব্র করেছিল। বিধানসভা ভোটের আগে, এমনকি সংসদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণে এসেছিল ‘শিসমহল’। অভিযোগ, বিপুল খরচ করে কেজরিওয়াল সাজিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন।  
মানুষের করের টাকায় ৩৩.৬৬ কোটি টাকা খরচ করে ‘শিসমহল’ তৈরির অভিযোগ প্রভাব ফেলেছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। কেজরিওয়াল পরাজিত হয়েছেন নয়াদিল্লি কেন্দ্রে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সাহিব সিং ভার্মার পুত্র বিজেপি নেতা প্রবেশ ভার্মার কাছে।

Comments :0

Login to leave a comment