ম্যাচ বাতিল করেও ঘরের মাঠে বিড়ম্বনা আটকাতে পারেননি একসময় ‘আন্দোলন’ করে উঠে এসে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসা মমতা ব্যানার্জি। সাম্প্রতিক সময়ে কলকাতার তিন প্রধান ফুটবল ক্লাবের শীর্ষপদে নিজের দলীয় নেতাদের বসিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি। তিন দলের লক্ষ লক্ষ সমর্থকের সমর্থন ভোটের বাক্সে টিকিয়ে রাখতে সরকারি ভাবেও ‘দরাজ’ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তারপরেও আরজি কর হাসপাতালের নির্যাতিতার মৃত্যুর বিচার চেয়ে যে জনস্রোত পথে নেমেছে, তাকে নজিরবিহীন বললেও কম বলা হয়।
মমতা ব্যানার্জিকে কিন্তু শুধু নিজের খাসতালুকেই বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়নি। নিউ ইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরার মত বহুল প্রচারিত আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও ঠাঁই পেয়েছে আরজি করের নির্যাতিতার ঘটনা, এবং তাঁর বিচারের দাবিতে ক্রমে গড়ে ওঠা গণআন্দোলন।
স্বাধীনতা দিবসের দিনে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে সবিস্তারে তুলে ধরা হয় আরজি করের ঘটনা। সেখানে সরকারি ভূমিকার সমালোচনা করে আমেরিকার এই সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকরা লিখেছেন, পুলিশের তরফে ইচ্ছাকৃত ভাবে তদন্তে গাফিলতির অভিযোগে চিকিৎসকরা সরব। তাঁদের আশঙ্কা, সরকারি স্তর থেকে ঘটনাকে ধামাচাপা কিংবা অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়েছে, ‘‘নির্যাতিতার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট থেকে স্পষ্ট, ধর্ষণ খুন কান্ডে একাধিক ব্যক্তির জড়িত থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।’’
নিউ ইয়র্ক টাইমসের পাশাপাশি লাগাতার আরজি করের ঘটনার ‘ফলো-আপ’ করে যাচ্ছে বিবিসি। ১৬ আগস্টের প্রতিবেদনে আরজি করে ঢুকে দুষ্কৃতিদের ভাঙচুরের ঘটনার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ রয়েছে। সেখানে কলকাতা পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করা হয়েছে। রবিবার আল জাজিরার ওয়েব এডিশনের প্রথম পাতায় আরজি কর কান্ডের ভিডিও প্রতিবেদন রয়েছে। ১৩ আগস্ট সিএনএন’র প্রতিবেদনে আরজি কর কান্ডের প্রতিবাদে ভারতে চিকিৎসকদের ধর্মঘটের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, পুলিশি তৎপরতায় তড়িঘড়ি নির্যাতিতার দেহ পুড়িয়ে দেওয়ার পরে সুবর্ণ গোস্বামী সহ চিকিৎসকদের একটি প্রতিনিধি দল নির্যাতিতার বাড়ি গিয়ে তাঁর মা-বাবার সঙ্গে দেখা করেন। গোস্বামী জানান, নির্যাতিতার মা-বাবা তাঁকে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেখিয়েছেন। তার ভিত্তিতে তিনি সোশ্যাল মিডিয়াতেও একাধিক ব্যক্তি যুক্ত থাকার দাবি করেন। সেই পোস্টের জন্য তাঁকে এবং অপর চিকিৎসক কুণাল সরকারকে লালবাজারে ডেকে পাঠানো হয়েছে কলকাতা পুলিশের তরফে। পুলিশের দাবি, সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানো হয়েছে। চিকিৎসকরা এর পালটা জানিয়েছেন, সহকর্মীদের সঙ্গে তাঁরাও দলবেঁধে লালবাজার যাবেন। দুই চিকিৎসক জেরা শেষে বাইরে না আসা অবধি তাঁরা কলকাতা পুলিশের সদর দপ্তরের গেটে অপেক্ষা করবেন।
আরজি কর হাসপাতালে প্রমাণ লোপাটের জন্য ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। প্রাথমিক ভাবে ভাঙচুরের দায় বিক্ষোভকারীদের উপর চাপানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় কলকাতা পুলিশ। জনমতের চাপে তৃণমূল কর্মীদের গ্রেপ্তার করলেও বহু নিরীহ মানুষ ও আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রবিবার এসএফআই’র সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাসের বাড়িতেও পুলিশ হানা দিয়েছে।
রবিবার কলকাতা ডার্বি আটকালেও রাত অবধি দফায় দফায় বিক্ষোভ আটকাতে পারেনি রাজ্য প্রশাসন। রাত সাড়ে দশটার খবর অনুযায়ী, কলকাতার যাদবপুর, বেহালা সহ রাজ্যের সমস্ত প্রান্তে রাত থেকে ফের প্রতিবাদী জমায়েত শুরু হয়েছে। সেখানে নির্যাতিতার বিচারের দাবির পাশাপাশি ঠাঁই পেয়েছে ‘দফা এক দাবি এক, মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ’ স্লোগানও।
Comments :0