Sandeshkhali

সন্দেশখালির অভিযোগ ক্যাম্পে এবার জমা পড়লো নতুন অভিযোগ

রাজ্য জেলা

বিক্ষোভ আইএসএফ কর্মী সমর্থকদের

প্রবীর দাস- সন্দেশখালি

বিক্ষোভের আগুন চাপা দিতে বসিরহাট জেলা পুলিশের তরফ থেকে শেখ শাহজাহানের খাসতালুক সন্দেশখালির সরবেড়িয়া সহ একাধিক জায়গায় ক্যাম্প খোলা হয়েছে অভিযোগ জানানোর। চারদিন ধরে চলছে পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযোগ জমা নেওয়ার কাজ। জমি দখলের একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে অভিযোগকারীদের জমি ফেরতের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। বুধবার ছিল পঞ্চম দিন। পঞ্চম দিনেও অভিযোগ জমা দিতে লাইন দিয়েছেন গ্রামবাসীরা। তবে এবার জমি দখলের মতো অভিযোগ জমা পড়ছে না। যা অভিযোগ জমা পড়ছে, তাতে দুর্নীতির নানান অভিযোগ। এবারে অভিযোগ টাকা আত্মসাৎ, আমফানের ঘর ভেঙে যাওয়ার পরেও সরকারি সুবিধা না পাওয়া-সহ একাধিক অভিযোগ জমা পড়ছে। বেড়মজুরের কাঠপোল বাজার এলাকায় ক্যাম্পে এরকমই অভিযোগ জানাতে এলেন নীতিশ আড়ি, সামসুল মোল্লা, নলো ধারারা। বছর ৩২ এর নীতিশ আড়ির অভিযোগ, শেখ সিরাজ এবং অজিত মাইতি তাঁর কাছ থেকে টাকা নেন। টাকা না দিলে জমি দখলের ভয় দেখান। ইতিমধ্যেই সিরাজকে ২৫,০০০ টাকা এবং অজিতকে ১৫,০০০ টাকা দেন অভিযোগকারী। সেই টাকা ফেরত পেতেই এবার পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। অন্যদিকে বছর ৪৫ এর সামশুল মোল্লার অভিযোগ, কাঠপোল বাজার এলাকায় তাঁর একটি টেলারিংয়ের দোকান ছিল। শেখ সিরাজউদ্দিন ওই এলাকায় মার্কেট করবে বলে জোরপূর্বক দোকান উঠিয়ে দেয়। পরে অবশ্য দোকান দেওয়া হবে বলে সামশুল মোল্লাকে বলা হয়। তার অভিযোগ, বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও সেই দোকান ফিরে পান নি। এবার দোকান ফেরত পেতেই প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন সামশুল। আমফানে ঘর বাড়ি ভেঙে গেলেও এখনও পাননি কোনও সাহায্য। তাই সরকারি সাহায্য পেতে পুলিশের ক্যাম্পে অভিযোগ নলো ধারার। ৬০ বছর পেড়িয়েও পাননি বার্ধক্য ভাতার টাকাও।
গত দেড় মাস ধরে নোনা মাটির দেশ সন্দেশখালি বাংলা তথা ভারতের রাজ্য রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে। দেশের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সিতারমনের মুখে উচ্চারিত হচ্ছে শেখ শাহজাহানের নাম। একাধিক বিক্ষোভ, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন নারী নির্যাতনের যে অভিযোগ সামনে আসছে, তার ভয়াবহতায় কেঁপে উঠেছে দেশ তথা এই রাজ্য। পুলিশের ওপর যে কোনও আস্থা নেই, তা সন্দেশখালির মানুষ বারবারে প্রকাশ করেছে। মানুষের আস্থা ফেরাতে পুলিশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। অভিযোগ নিতে গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় খোলা হয় অভিযোগ জানানোর ক্যাম্প। গ্রামবাসীদের অভিযোগের কথা শোনার জন্য চালু করা হয় পুলিশের অভিযোগ গ্রহণ কেন্দ্র। পুলিশের দেওয়া সূত্র অনুযায়ী, প্রথম দিনেই পুলিশের কাছে জমা পড়েছিল ৭৩টি অভিযোগ। রবিবার অর্থাৎ দ্বিতীয় দিনে জমা পড়ে ৫৭টি অভিযোগ। তৃতীয় দিনে ৬১টি অভিযোগ জমা পড়েছে। প্রতিদিনই ভূরি ভূরি অভিযোগ জমা পড়ছে।
সন্দেশখালির বেতাজ বাদশা শেখ শাহজাহানের গ্রেফতারী নিয়ে এক্স হ্যান্ডেলে বড় দাবি করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি, মঙ্গলবার মাঝ রাতেই পুলিশ হেফাজতে নিয়ে ফেলেছে শাহজাহানকে। তাকে হেফাজতে নেওয়ার ক্ষেত্রে মিডলম্যান তথা মধ্যস্ততাকারীর ভূমিকা পালন করেছেন এক প্রভাবশালী। শেখ শাহজাহানের সন্দেশখালির বাড়িতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট তথা ইডির গোয়েন্দারা ৫ জানুয়ারি হানা দিয়েছিলেন। সেদিন থেকে শাহজাহান নিঁখোজ। প্রায় ৫৫ দিন ধরে বেপাত্তা। অনেকের ধারণা ছিল শাহজাহান বুঝি বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছে। কেউ বা দাবি করছিলেন, শাহজাহান রয়েছে পুজালীতে। কিন্তু বিরোধী দলনেতা দাবি করেছেন, 'সন্দেশখালির বখাটে শেখ শাহজাহান বেড়মজুর দু নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকেই হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
এদিন বসিরহাট মহকুমা আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে আইএসএফ নেত্রী আয়েশা বিবির বিস্ফোরক মন্তব্য। তিনি বলেন, পুলিশ শেখ শাহজাহানকে লুকিয়ে রেখেছে। আমাকে মিথ্যা অভিযোগে কলকাতার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে এলো। অথচ শেখ শাহজাহানকে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। এদিন আয়েশা বিবি ও বিজেপি নেতা বিকাশ সিংহকে জামিনে মুক্তি দেয় আদালত। জামিনে মুক্ত হওয়ায় পর আই এস এফের কর্মী সমর্থকরা আয়েশা বিবি ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেয়। জামিনে মুক্ত হয়ে আয়েশা বিবি জানান শেখ শাহজাহান, শিবু হাজরার বিরুদ্ধে দূর্নীতি,অত্যাচারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলাম বলেই আমাকে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে।

Comments :0

Login to leave a comment