উত্তরাখণ্ডের জমি যাতে উত্তরাখণ্ডের বাইরের কোনও ভারতীয় নাগরিক কিনতে না পারেন তারজন্য নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহদের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিয়ে নতুন বিল আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উত্তরাখণ্ডের বিজেপি সরকার। এই মর্মে একটি বিল বিধানসভার চলতি বাজেট অধিবেশনে পেশ করার সিদ্ধান্তে শিলমোহর দিয়েছে রাজ্য মন্ত্রিসভা। মুখ্যমন্ত্রী পুস্কর সিং ধামি এবং বিজেপি নেতারা জোর গলায় জাহির করছেন রাজ্যের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, রাজ্যের নাগরিকদের অধিকার এবং রাজ্যের খাঁটি পরিচিতি সুরক্ষার স্বার্থে তাঁরা এই পদক্ষেপ নিয়েছেন। প্রসঙ্গত ২০০০ সালে উত্তর প্রদেশ রাজ্য ভেঙে উত্তরাখণ্ড রাজ্য গঠনের সময় থেকেই বিজেপি উত্তরাখণ্ডে উগ্র প্রাদেশিকতার জিগির তুলে যাচ্ছে। তাদের দাবি এবং দাবির পেছনে যুক্তি থেকে এটাই বেরিয়ে আসে যে উত্তরাখণ্ডে কেবলমাত্র উত্তরাখণ্ডবাসীদের জন্যই। সেখানে অন্য কোনও রাজ্যের মানুষের জমির মালিকানার অধিকার নেই। সেই সূত্র ধরেই আড়াই দশক পর বিজেপি চালিত সরকার নতুন আইন প্রণয়ন করতে চলেছে যাতে উত্তরাখণ্ডের বাইরের কোনও রাজ্যের মানুষ এক ইঞ্চি জমির মালিকও হতে না পারেন। বর্তমানে চালু আইন অনুযায়ী উত্তরাখণ্ডে কোনও বহিরাগত ভারতবাসী ২৫০ বর্গ মিটার পর্যন্ত কৃষি ও উদ্যান চাষের জমি কিনে মালিক হতে পারেন। রাজ্যের মানুষের ক্ষেত্রে অবশ্য কোনও ঊর্ধ্বসীমা নেই। রাজ্যের যে কেউ যতখুশি জমি হস্তান্তর করতে পারেন। মোদী-শাহদের সৌজন্যে নতুন আইন কার্যকর হলে অবশিষ্ট ভারতের কোনও নাগরিকের, তিনি সনাতনী হিন্দু হলেও, উত্তরাখণ্ডের জমির মালিকানা পাবেন না। তবে এই নরেন্দ্র মোদীরই সৌজন্যে তারা চাইলে জম্মু, কাশ্মীর, লাদাখে গিয়ে যত খুশি জমি কিনতে পারবেন।
সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৫ক ধারা বলে পূর্বতন জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা ছিল। আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক এবং ভৌগোলিক-প্রাকৃতিক কারণে এবং অবশ্যই জনবিন্যাসের বিশেষ অনন্য বৈশিষ্ট্যকে সুরক্ষিত রাখার জন্য কাশ্মীরের জমি কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দা ছাড়া অন্য কারোর হাতে তুলে দেবার আইনি বিধান ছিল না। অর্থাৎ কাশ্মীরের মানুষের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে রক্ষা করার তাগিদেই এই ব্যবস্থা। কিন্তু আরএসএস-বিজেপি বরাবর এই স্বতন্ত্র ব্যবস্থার ঘোরতর বিরোধী ছিল। মোদীদের দাবি এক দেশে সব রাজ্যে সব ভারতীয়দের জন্যই একই ব্যবস্থা থাকবে। মোদীদের স্লোগান এক দেশ, এক আইন, কে ধর্ম, এক সংস্কৃতি, এক ভাষা, এক নির্বাচন। এমনকি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এটাও বোঝানো হয় এক দেশ, এক দল, এক নেতা। অর্থাৎ গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে এক নেতার একদলীয় স্বৈরশাসনের দিকেই তারা পা বাড়াতে চায়। এইভাবে নানা যুক্তি খাড়া করে ২০১৯ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় বসেই কাশ্মীরের জমির মালিক হবার অবাধ অধিকার দিয়ে দেওয়া হয় যে কোনও ভারতবাসীকে। এটাও বলা হয় জমির অধিকার পেলে বাইরে থেকে ব্যবসায়ী-বিনিয়োগকারীরা কাশ্মীরে যাবে। অর্থনীতির দ্রুত উন্নতি হবে। বেকারদের কাজের ব্যবস্থা হবে। যদিও গত পাঁচ বছরে তেমন কিছুই হয়নি। সেই বিজেপি-ই উত্তরাখণ্ডের ক্ষেত্রে এক দেশ দুই ব্যবস্থার পক্ষে সওয়াল করছে। আসলে সবটাই হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ক্ষমতার স্বার্থে। মুসলিম প্রধান কাশ্মীরের জমিকে ব্যবহার করে সারা দেশে সাম্প্রদায়িক জিগির তুলে ভোটে ফায়দা তুলেছে। উত্তরাখণ্ডেও ক্ষমতায় টিকে থাকতে উলটো সুরে গাল গাইছে। আসলে এদের নীতি-আদর্শ-যুক্তি বলে কোনও কিছুর বালাই নেই। গণতন্ত্র, মানুষের ঐক্য ধ্বংস করে কেবল ক্ষমতাই চায়।
Editorial
এক মুখ দুই ভাষ্য

×
মন্তব্যসমূহ :0