LONDON ULEZ PROTEST

সরকারি পরিবহণ নেই, ‘পরিবেশ রক্ষা কর’-র প্রতিবাদে বিক্ষোভ লন্ডনে

আন্তর্জাতিক

londonulez labour party conservative sadiq khan rishi sunak british politics bengali news

বিতর্কিত আইনের জেরে ক্ষোভ ছড়িয়েছে লন্ডনে। লন্ডনের মেয়র সাদিক খানের ঘোষিত ‘আল্ট্রা লো এমিশন জোন’ বা ‘ইউলেজ’ নীতি অনুযায়ী, ২৯ আগস্ট থেকে পুরনো গাড়ির উপর চাপানো হয়েছে ভারী মাত্রায় কর। দৈনিক ১২.৫ পাউন্ড। এই জরিমানা না দিলে গাড়ির মালিককে দিতে হবে ১৮০ পাউন্ড জরিমানা। 

১২.৫ পাউন্ড মানে ১৩১৩ টাকা। আর ১৮০ পাউন্ড মানে ১৮ হাজার ৯০৯ টাকা প্রায়।

সাদিক খানের দাবি, পুরনো গাড়িগুলির ফলে বায়ু দূষণ বাড়ছে। দূষণে রাশ টানতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। 

ইউলেজ আইন মঙ্গলবার থেকে লন্ডন শহরের সমস্ত বরো’তে কার্যকর হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর থেকেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন শহরবাসীর একটা অংশ। তাঁদের দাবি, লন্ডনের শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে মস্করা করছেন সাদিক খান। 

বুধবার সকাল থেকে মধ্য লন্ডনের ডাউনিং স্ট্রিটে বিক্ষোভ শুরু হয়। পোস্টার, প্ল্যাকার্ড, স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভকারীরা সরব হন। তাঁদের দাবি, কাল্পনিক হিসেবের  ভিত্তিতে পুরনো গাড়ির উপর বাড়তি করের বোঝা চাপিয়েছেন সাদিক। সারাদিন ধরেই চলে বিক্ষোভ। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনকও এই বিশৃঙ্খলার জন্য সাদিক খানকে দায়ী করেছেন। 

ব্রিটেনের সংবাদপত্র টেলিগ্রাফ’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুরনো গাড়ির ছবি তুলতে শহর জুড়ে ১৬টি ক্যামেরা লাগিয়েছিল লন্ডন কর্পোরেশন। তার মধ্যে ১৪ টি ক্যামেরা নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। 

বিক্ষোভকারীদের দাবি, এই নীতির ফলে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন শ্রমজীবী অংশের মানুষ। এই অংশের বেশিরভাগ মানুষই লন্ডন শহরতলিতে থাকেন। সেখান থেকে মূল শহরে পৌঁছতে গেলে ব্যক্তিগত যানবাহন ছাড়া গতি নেই। কারণ, গণপরিবহন ব্যবস্থা অপ্রতুল। এবং তাঁরা এমন বেতনও পান না, যে চাইলেই নতুন গাড়ি কিনে ফেলতে পারবেন। 

এর পাল্টা যুক্তিও রয়েছে। সাদিক খান টুইট করে জানিয়েছেন, এই নীতির ফলে ৫০ লক্ষ লন্ডনবাসী বিশুদ্ধ বাতাস সেবন করতে পারবেন। শিশুদের অ্যাজমা মোকাবিলার ক্ষেত্রেও এই নীতি সহায়ক হবে। সাদিক খানের দাবি, লন্ডন শহর এবং শহরতলীতে চলাচল করা ৯০ শতাংশের  বেশি গাড়ি এই নীতির আওতাভুক্ত নয়। মাত্র ১০ শতাংশ গাড়ির জন্য গোটা লন্ডনকে ভুগতে হচ্ছে। এই গাড়িগুলির ব্যবহারকারীরা নতুন গাড়ি কিনতে সক্ষম। তাঁরা ইচ্ছাকৃত ভাবে বাকিদের সমস্যায় ফেলছেন। তাই কড়া পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া গতি ছিলনা। 

ওয়াকিবহাল অংশের মতে, সাদিক খান ব্রিটেনের লেবার পার্টির নেতা। অপরদিকে ঋষি সুনক ক্ষমতাসীন কনজার্ভেটিভ পার্টির সদস্য। তাই এই নতুন নীতিকে কেন্দ্র করে চড়েছে রাজনৈতিক পারদ। কনজার্ভেটিভ পার্টি চেষ্টা করছে ইউলেজ বিক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে লেবার পার্টিকে বেকায়দায় ফেলার। 

সাদিক খানের অভিযোগ, গোটা বিষয়টি নিয়ে অপপ্রচার চালিয়েছেন ব্রিটেনের পরিবহণমন্ত্রী মার্ক হার্পার।  

যদিও অপর একটি অংশের মধ্যে, মূল সমস্যার কেন্দ্রে রয়েছে লন্ডন শহরে গণপরিবহণ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা। সরকারি পরিষেবা কমে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সুনক নিজে বেসরকারিকরণের এই নীতির উগ্র সমর্থক। কম খরচে গন্তব্যে পৌঁছানোর বিকল্প না থাকায়, বহু শ্রমজীবী পুরনো গাড়ির উপরেই নির্ভরশীল। বিকল্প ব্যবস্থা না করে, সেই গাড়িগুলিকে বাতিল করলে স্বাভাবিকভাবেই লেবার পার্টির বিরুদ্ধে ক্ষোভ তৈরি হবে। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। ক্ষমতাসীন রক্ষণশীলরা তার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে।

Comments :0

Login to leave a comment