গত দশ বছর ধরে অর্থনীতির যে বেলুনটাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হচ্ছে এবং এমন একটা ধারণা বদ্ধমূল করার চেষ্টা হচ্ছে যে দেশের অর্থনীতি সবদিকে থেকে অতি শক্তিশালী হয়ে উঠছে, সেই বেলুনটা এবার চুপসে যাবার সময় ঘনিয়ে এসেছে। কোভিড উত্তর বিশ্বে অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনের ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বের সর্বোচ্চ বৃদ্ধির দেশ হিসাবে জাহির করে মোদীরা দেখাতে চাইছেন মোদীর নেতৃত্বে ভারত সব দেশকে ছাড়িয়ে নজির সৃষ্টি করেছে। অবশ্য এটা ভুলেও উচ্চারিত হয় না কোভিড পর্বে ভারতের অর্থনীতির সঙ্কোচন হয়েছে বিশ্বের সব থেকে বেশি। এই অতি তলিয়ে যাওয়া অর্থনীতি কোভিডের পরে অতি নিচু ভিতে দাঁড়িয়ে অর্থনীতি ৮.২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি হয়। মোদীরা এটাকেই বড় করে দেখিয়ে মানুষকে ভুল বোঝায়। আসলে পরিমাণগত দিক থেকে দেখলে মোট জিডিপি কোভিড পূর্ব সময়ের থেকে অনেক কম। অবশ্য তার পর থেকে লম্বা-চওড়া ভাষণ চলতে থাকলে তার প্রতিফলন জিডিপি-তে পড়ছে না। বৃদ্ধির হার বছর বছর একটু একটু করে কমে যাচ্ছে। এই পতন আশু ঠেকানো যাবে তেমন কোনও আশার আলো কোনও অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ দেখাতে পারছেন না। তাছাড়া অর্থনীতির বৃদ্ধির হার কমে যাবার এই প্রবণতা কোভিড অতিমারী থেকে শুরু হয়নি, হয়েছে তার আগে থেকে। কোভিডকাল সেই অবস্থাকে আরও জটিল করেছে।
বস্তুত ২০১৪ সালে মোদী ক্ষমতায় আসার পর ২০১৪-১৫ এবং ২০১৫-১৬ সালে বৃদ্ধির হার একটু বেড়েছিল। কিন্তু তারজন্য মোদী সরকারের বিশেষ ভূমিকা ছিল না। কোনও নীতি বা পদক্ষেপ আজকে নিলে কালই তার সুফল মেলে না। তার জন্য অনেকটা সময় লাগে। তবে মোদী সরকারের গৃহীত নীতি ও পদক্ষেপের ফলে সুফলের থেকে কুফলই বেশি হয়েছে। ক্ষমতায় আসার পর বুক বাজিয়ে প্রথম যে দু’টি মাস্টার স্ট্রোক দেওয়া হয়েছে তার ধাক্কায় দেশের অর্থনীতির বুনিয়াদটাই নড়বড়ে হয়ে গেছে। ২০১৬ সালে একতরফা নোট বন্দি এবং ২০১৭ সালে প্রস্তুতি ছাড়া জিএসটি চালু করে দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং সাধারণ ব্যবসা-বাণিজ্যের সর্বনাশ করে দেওয়া হয়েছে। তার ধাক্কায় বেশিরভাগ ছোট শিল্প ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে নতুবা কোনোরকমে টিকে আছে। আর তার জেরে কয়েক কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছেন অথবা মজুরি কমে গেছে। তারফলে ২০১৭-১৮ সাল থেকেই বৃদ্ধির হার কমতে থাকে। এই নড়বড়ে অর্থনীতিতে আরও বড় ধাক্কা আসে কোভিডের সময়। দায়িত্বজ্ঞান লকডাউন ঘোষণা করে অর্থনীতির কোমরটাই ভেঙে দেবার ব্যবস্থা হয়েছে।
বৃদ্ধির হারে ক্রমাগত পিছিয়ে পড়া এই অবস্থায় তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় এসে প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট তৈরি করছে সরকার। তাতে গাল-গল্প বিস্তর থাকলেও দেখতে হবে কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধির জন্য ঠিক কি ব্যবস্থা নিচ্ছে। মূল্যবৃদ্ধি যন্ত্রণা লাঘবেই বা কি ব্যবস্থা হচ্ছে। দেশের মানুষের কাছে এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা এই তিনটি। দশ বছরে এই তিন সমস্যা নিরসনে মোদীর কোনও সাফল্য নেই। বরং সমস্যাগুলি আরও ঘোরালো হচ্ছে। মোদী সাফল্য সেদিনই দাবি করতে পারবে যেদিন বেকারি, মূল্যবৃদ্ধি, আয় ও সম্পদ বৈষম্য কমাতে এবং আয় বাড়াতে পারবেন।
Comments :0