প্রথমে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের অতি ঘনিষ্ট সঙ্গী বিশ্বের এক নম্বর ধনকুবের এলন মাস্ককে মাথায় রেখে গঠিত ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন দপ্তর ডিওজিই গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করে তারা ভারতে ভোটের হার বাড়ানোর লক্ষ্যে বরাদ্দ ইউএসএইউ’র ২১০ লক্ষ কোটি ডলার অনুদান বাতিল করে দিয়েছে। সেই সূত্র ধরে ট্রাম্প পর পর তিনবার প্রকাশ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন কেন মার্কিন করদাতাদের অর্থ ভারতের নির্বাচনে খরচ করা হবে। আরও এক ধাপ এগিয়ে পূর্বতন বাইডেন প্রশাসনকে কাঠগড়ায় তুলে ঘুরিয়ে ট্রাম্প বলেছেন বাইডেন সম্ভবত মোদীর বদলে অন্য কাউকে প্রধানমন্ত্রী করতে চেয়েছেন। ট্রাম্পের এহেন মন্তব্যকে লুফে নিয়ে কংগ্রেসকে আক্রমণ করতে মাঠে নামিয়ে দেওয়া হয় বিজেপি’র বাহিনীকে। তারা আগুপিছু কোনও খবর না নিয়ে শোরগোল শুরু করে এই বলে যে কংগ্রেসই ভোটে বিদেশি হস্তক্ষেপের ব্যবস্থা করেছে। মোদীকে হারানোর এই বিদেশি ষড়যন্ত্রের মূলে আছে কংগ্রেস। কংগ্রেস এই অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করে পালটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে দাবি করেছে ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত ভারতের কোন কোন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা কোন কোন খাতে কত টাকা অনুদান পেয়েছে ইউএসএইড’র কাছ থেকে তা শ্বেতপত্র আকারে সংসদের চলতি বাজেট অধিবেশনেই প্রকাশ করা হোক। তাহলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে বিদেশি অনুদানে কারা কি কাজ করেছে। সরকার অবশ্য সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণের সাহস দেখায়নি।
এই বিতর্কের মধ্যেই দেশের প্রথম সারির দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এক অন্তর্তদন্তমূলক রিপোর্টে হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়ে কার্যত পথে বসিয়ে দিয়েছে মোদীর দলকে তথ্য প্রমাণ সহ রিপোর্টে দেখানো হয়েছে যে অনুদানের কথা ট্রাম্প বারবার বলছেন সেটা আদৌ ভারতকে দেওয়া হয়নি, দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের জন্য সেই টাকা বরাদ্দ হয়েছে ২০২২ সালে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে নির্বাচনকে সামনে রেখে সেই বরাদ্দের ১৩৪ লক্ষ ডলার খরচও হয়ে গেছে। রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মসূচিতে খরচ করার জন্য ছাত্রদের এই বিপুল অর্থ দেওয়া হয়েছিল। সাম্প্রতিককালে ছাত্র আন্দোলনের নামে বাংলাদেশে যে হিংসাশ্রয়ী অভ্যুত্থান ঘটানো হয় এবং শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করা হয় তার পেছনে এই বিপুল মার্কিন অর্থ কাজ করেছে বলে অনুমান করা যায়।
বিশ্বের বহু দেশ ইউএসএইড-এর অনুদান পায়। বেশি অনুদান পাওয়া দেশগুলির অন্যতম ভারত। ইউএসএইড’র সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ইলেক্ট্রোরাল সিস্টেম ভারতের নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বোঝাপড়ার চুক্তি করেছিল। প্রাক্তন মুখ্যনির্বাচন কমিশনার বলেছেন তাতে অর্থ নেবার বিষয় ছিল না। বিপরীতে কংগ্রেসের তরফে ইউএসএইড’র সঙ্গে আরএসএস-বিজেপি’র সম্পর্কের গুরুতর অভিযোগ তোলা হয়েছে। ১৯৯৩ সালে আরএসএস কর্মী হিসাবে নরেন্দ্র মোদী ইউএসএইড-এর সহযোগী সংস্থার সঙ্গে আমেরিকায় গিয়ে বৈঠক করেছিলেন। কোভিডের সময় মোদী সরকার ইউএসএইড-এর কাছে ১০ কোটি ডলার সহায়তা চেয়েছিল। বিদেশ মন্ত্রী জয়শঙ্কর তার প্রধানের সঙ্গে দেখা করেছিলন। নোটবন্দির একমাস আগে নগদহীন লেনদেন বৃদ্ধির প্রচারে অর্থ মন্ত্রকের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল ইউএসএইড-ও। ৭৩টি শহরে স্বচ্ছ অভিযান প্রকল্পে মোদী সরকার এইএসএইড’র সাহায্য নিয়েছিল। গত লোকসভা নির্বাচনের বছরখানেক আগে ইউএসএইড-এর প্রাক্তন কর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এর পর মোদী বাহিনী কি জবাব দেবেন?
Editorial
মার্কিন অর্থ কার সেবায়

×
Comments :0