Migratory Birds

উদ্বেগ বাড়াচ্ছে পরিযায়ী পাখির মৃত্যু

জেলা

গোয়ালপোখোর থানার পিছনের গাছে পাখির আস্তানা

তপন বিশ্বাস-ইসলামপুর

ইসলামপুর মহকুমার বিভিন্ন এলাকা ও রায়গঞ্জে অজ্ঞাত কারণে রায়গঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় পরিযায়ী পাখির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি রায়গঞ্জ শহরের মিলনপাড়ায় বেশ কিছু পরিযায়ী পাখি মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখলে এলাকার শোরগোল পড়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনুমান বিদ্যুতের তারের স্পর্শে ওই পাখিগুলো মারা গেছে। এছাড়া গোয়ালপোখর, চাকুলিয়া ও করণদিঘি ব্লকের বড় গাছে আশ্রয় নেয় সদলবলে ভিনদেশী পরিযায়ী পাখির দল। কম্বোডিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার এবং দক্ষিণ ভারত থেকে আসা পাখিদের ভিড়ে গমগম করছে কুলিক অভয়ারণ্য। তার সাথে পাল্লা দিয়ে গোয়ালপোখর থানা চত্বরে, চাকুলিয়া বাজারে, করণদিঘি কর্নদিঘী পুকুর পাড়ে বড়ো বট গাছগুলিতে দেখা মিলছে ওপেন বিল স্টক, নাইট হেরন, ইগ্রেট ও করমোরেন্ট প্রজাতির পাখিদের। হাজার হাজার মাইল দূর থেকে জুন –জুলাই মাসে এখানে এসে বাসা বাঁধে পরিযায়ী পাখিরা। এখানেই ডিম ফুটে জন্ম নেয় শাবকরা। বর্ষা পেরিয়ে শরৎ যখন আসে, এরা উড়তে শিখে যায়। এরপর একটু বড়ো হলে ডিসেম্বর মাসে প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই আবার উড়ে যায় যে যার নিজের জায়গায়। কিন্তু চলতি বছরে বৃষ্টির পরিমাণ খুবই কম। খাল বিল,থানা খন্দ, নয়নজুলির জল শুকিয়ে গেছে। ওই জলাশয়গুলো থেকেই ছোট মাছ, ঘুগলি, পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকে পরিযায়ী পাখিগুলি। এবার বৃষ্টি না হওয়ার ফলে ওই জলাশয় গুলিতে জলের অভাবে পাখিদের খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। প্রকৃতিগত কারণে এবার পাখির আনাগোনা কম কম হয়েছে বলে বনদপ্তর জানিয়েছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে পরিযায়ী পাখির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে ভাবিত পরিবেশবিদ থেকে শুরু করে বনদপ্তর। এভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনে পরিযায়ী পাখি উত্তর দিনাজপুর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে বলে তাদের অনুমান।
রায়গঞ্জের বাসিন্দা পরিতোষ দাস জানান, ‘‘রায়গঞ্জ শহরের বাড়ির ছাদে বাজারে এলআইসি অফিসের পাশে বিভিন্ন সময়ে পরিযায়ী পাখির মৃতদেহ দেখতে পাওয়া যায়। বনদপ্তর বিদ্যুৎ বিভাগ এমনকি পুলিশ প্রশাসন পাখি গুলির নিরাপত্তার সুনিশ্চিত করতে ব্যর্থ। ওই জায়গায় বেশ কিছু ইগ্রেট প্রজাতির পাখি মারা গেছে। আমরা এ ব্যাপারে বনদপ্তরের কাছে ঘটনার তদন্তের দাবি জানিয়েছি’’।
উল্লেখ্য এশিয়ার মধ্যে সবচাইতে বড় পক্ষী নিবাস হলো রায়গঞ্জের কুলিক পক্ষী নিবাস। কুলিক বনাঞ্চলে ওই পাখিগুলি আস্তানা গড়ে তুললেও তারা জেলার বিভিন্ন এলাকায় এবং উঁচু কাছে গিয়ে আশ্রয় নেয়। আর সেখানেই ঘটনার বিপত্তি ঘটে। মারা যায় প্রচুর পাখি। এ ব্যাপারে বনদপ্তর কিংবা বিদ্যুৎ বিভাগ কোনরকম কোন ব্যবস্থা নেয়নি। পাখিগুলির নিরাপত্তার কথা ভেবে খোলা বিদ্যুতের তার ছেড়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। এ বিষয়ে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক তাপস পাল বলেন, ‘‘ওই অতিথি পাখি গুলির নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা প্রয়োজন প্রকৃতির তাগিদে। ওই পাখিগুলি শুধু সাইবেরিয়া থেকে জেলায় আসে শুধুমাত্র প্রজনন করার জন্য। এভাবে পাখি মারা যাওয়া উদ্বেগের বিষয়’’।

Comments :0

Login to leave a comment