রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনের আগের দিন নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রসঙ্ঘেরই অধিবেশন কক্ষে অনুষ্ঠিত হলো আরও একটি অভাবনীয় অধিবেশন। ১৪০টিরও বেশি দেশের নেতাদের উপস্থিতিতে প্যালেস্তাইন প্রশ্নে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের পক্ষে শোনা গেল জোরালো সহমতের কথা। ফ্রান্সে এবং সৌদি আরবের যৌথ আহ্বানে আয়োজিত এই সভায় ফ্রান্স আনুষ্ঠানিকভাবে প্যালেস্তাইনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। একই সঙ্গে এদিন বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, মল্টো, মোনাকো এবং অ্যান্ডোরাও প্যালেস্তাইনকে স্বাধীন দেশ হিসাবে গ্রহণ করেছে। একদিন আগে ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং পর্তুগাল ঘোষণা করেছিল তারা প্যালেস্তাইনকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে মান্যতা দিয়েছে। ফলে বিশ্বের মোট ১৯৩টি রাষ্ট্রের মধ্যে ১৫০টি-র বেশি দেশ স্বাধীন সার্বভৌম প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রের পক্ষে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে।
পশ্চিম এশিয়ায় ইজরায়েল, প্যালেস্তাইন বিরোধের একমাত্র সমাধান হিসাবে দ্বিরাষ্ট্রীয় তত্ত্ব বহুদিন ধরেই সর্বস্তরে স্বীকৃত। বস্তুত রাষ্ট্রসঙ্ঘও এই ব্যবস্থার পক্ষে। ইতিমধ্যে উন্নয়নশীল ও বিকাশমান দেশগুলির সকলেই প্যালেস্তাইনকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করে সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ইজরায়েলের একান্ত ঘনিষ্ঠ আমেরিকার চাপে তাদের সহযোগী দেশগুলি, বিশেষ করে জি-৭ গোষ্ঠীর এবং ন্যাটো যুদ্ধ জোটের দেশগুলি প্যালেস্তাইনকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেছিল। এই সব দেশগুলি মূলত আমেরিকার লেজুড় হয়ে ইজরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রূপায়ণে পরোক্ষে সায় দিয়ে যাচ্ছিল। মার্কিন মদত ও সহায়তায় ইজরায়েল চাইছে ক্রমাগত প্যালেস্তাইন ভূখণ্ড দখল করে বৃহত্তর ইজরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে। তাতে প্যালেস্তাইন বলে কোনও দেশ বা ভূখণ্ডের অস্তিত্ব থাকবে না। গত সাত দশক ধরে তারা এইভাবেই প্যালেস্তাইনের জমি দখল করে প্যালেস্তাইনকে প্রান্তিক করে ফেলেছে। সর্বশেষ গত আড়াই বছর ধরে যে প্যালেস্তিনীয়দের গণহত্যা ও ধ্বংস কাণ্ড চালাচ্ছে তার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য সমস্ত প্যালেস্তাইনবাসীদের নিকেশ করা এবং বিতাড়িত করা। সমগ্র গাজা ভূখণ্ড এবং ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক, কার্যত ফাঁকা করে ইজরায়েলের অন্তর্ভুক্ত করা।
গত আড়াই বছর ধরে প্যালেস্তাইনের স্বপ্ন চিরতরে কবর দিয়ে ইজরায়েলের স্বপ্ন পূরণে গণহত্যা অভিযান চলছে। বোমা আর ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে প্রতিদিন গড়ে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। আহত, জখম, পঙ্গুর সংখ্যার কোনও সীমা-পরিসীমা নেই। মানুষ খুনে মেতে ওঠা ইজরায়েলের এ কাজে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে দেশে দেশে। মানুষ এমন হিংস্রতা, বর্বরতা সহ্য করতে পারছেন না। প্রতিবাদের তীব্রতা ও ব্যাপকতা বাড়তে থাকায় মার্কিন ঘনিষ্ঠ যে দেশগুলি এতদিন দ্বিরাষ্ট্র তত্ত্বে সায় দিচ্ছিল না তারাও বাধ্য হয় প্যালেস্তাইনকে স্বীকৃতি দিতে। এতদিন যারা সরাসরি হোক বা আড়াল থেকে ইজরায়েলকে সমর্থন জুগিয়ে এসেছে তাদের বেশিরভাগ অবস্থান বদলে ফেলায় প্রবল চাপ তৈরি হচ্ছে ইজরায়েলের ওপর। কার্যত বিশ্বে এক ঘরে হয়ে যাবার অবস্থা ইজরায়েলের। ইজরায়েলের এখনো টিকে থাকার একমাত্র গ্যারান্টি আমেরিকাও যথেষ্ট চাপের মুখে। একে একে সব ইউরোপীয় সঙ্গীরা জায়গা বদল করে ফেলছে। এখনও থেকে গেছে জার্মানি, ইতালি, জাপান। পরিস্থিতি দ্রুত বদলাচ্ছে সন্দেহ নেই। তবে ইজরায়েল এখনই মাথা নত করবে না। কারণ আমেরিকা যখন মাথার উপর আছে মরণ কামড় তারা দেবেই। এতকিছুর পর ভারতের বিশ্বগুরু নীরব। হিন্দুত্ববাদীদের আদর্শগত মিত্র জায়নবাদীদের বিরুদ্ধে সরব হওয়া সহজ নয়। হোক না তারা গণহত্যাকারী।
editorial
প্যালেস্তাইনের পক্ষে

×
Comments :0