গোরু পাচার মামলায় শেষমেষ তিহার জেলই গন্তব্য হলো অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী পুলিশকর্মী সায়গল হোসেনের। আদালতের অনুমতি নিয়ে আসানসোল জেল থেকে দিল্লি নিয়ে এসে দু’দফায় ইডি দপ্তরে জেরার পরে এদিন তাঁকে আদালতে তোলা হয়েছিল। দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট এদিন সায়গল হোসেনকে ১৪ দিনের জেল হেপাজতের নির্দেশ দেয়। এদিনই তাঁকে তিহার জেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গোরু পাচারের কিংপিন এনামূল হকও আপাতত তিহার জেলে।
গোরু পাচারকাণ্ডে ইতিমধ্যে সিবিআই’র চার্জশিটে সায়গল হোসেনের মতো অনুব্রতকেও অভিযুক্ত হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। অনুব্রত মণ্ডলের হয়েই এনামূল হকের সঙ্গে গোরু পাচারের কারবারে সমন্বয় রাখা, টাকা লেনদেন করতেন দেহরক্ষী সায়গল। গত ৯ জুন সায়গলকে নিজাম প্যালেসে দীর্ঘ জেরা শেষে গ্রেপ্তার করেছিল সিবিআই। তদন্তকারী সংস্থার হেপাজতের মেয়াদ শেষে আসানসোল জেলেই ছিলেন সায়গল হোসেন। এই পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে গোরু পাচারের পথ সুগম করে দেওয়ার শর্তে বিপুল পরিমাণ টাকা তোলার অভিযোগ ছিল। তাঁর একাধিক বাড়ি, টাকার পরিমাণ, বিপুল সম্পত্তি দেখে তাজ্জব গোয়েন্দা আধিকারিকরাও। প্রায় ১০০ কোটি টাকার সম্পত্তি। গোরু পাচারের কিংপিন এনামূল হকের সঙ্গে সায়গলের ফোন থেকেই যোগাযোগ রাখতেন অনুব্রত মণ্ডল। গোরু পাচারকাণ্ডে তাঁর সরাসরি যোগের তথ্য এসেছে সিবিআই’র হাতে। মানি লন্ডারিংয়ের তদন্তেও আসে এই পুলিশকর্মীর নাম। তদন্ত শুরু করে ইডি। আসানসোল জেলে গিয়েই জেরার পরে তাঁকে হেপাজতে নেয় ইডি।
সায়গল হোসেন তিহার জেল যাত্রা অনুব্রত মণ্ডলের চাপ আরও বাড়িয়েছে। একই মামলায় এবার কি তবে অনুব্রত মণ্ডলকেও দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে জেরার আবেদন জানাবে ইডি? এখনও পর্যন্ত এবিষয়ে যদিও তদন্তকারী সংস্থার কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
এদিকে, গোরু পাচারকাণ্ডে এই নিয়ে পরপর তিনদিন দিল্লিতে ইডি’র সদর দপ্তরে ম্যারাথন জেরার মুখে অনুব্রত কন্যা সুকন্যা মণ্ডল। গত দু’দিনে ১৫ ঘণ্টা জেরার পরে শুক্রবারও সকাল থেকে জেরা শুরু হয় সুকন্যার। দিল্লিতে ইডি দপ্তরে একইসঙ্গে গত দু’দিন ধরে জেরা চলছে অনুব্রতর হিসাবরক্ষক মণীশ কোঠারি, অনুব্রত ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী তৃণমূল নেতা রাজীব ভট্টাচার্যের। গত দু’দিন ধরেই তদন্তকারী সংস্থার জেরার মুখে রীতিমতো দক্ষতার সঙ্গেই রক্ষণ সামলেছেন অনুব্রত কন্যা। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, যদিও একের পর এক নথি অনুব্রত কন্যার সামনে হাজির করার পরে অস্বীকারের পথে হাঁটতে পারেননি এদিন সুকন্যা। এদিন জেরায় সুকন্যা মণ্ডলের বয়ানও লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এদিকে কয়লা ও গোরু পাচারকাণ্ডে সিবিআই তদন্ত চলাকালীনই পুলিশও স্বতঃপ্রণোদিত তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। সেই তদন্ত প্রক্রিয়া আসলে যে কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তের গতিবিধিকেই নির্দিষ্ট একটা বৃত্তে আটকে রাখা তা স্পষ্ট হচ্ছিল রাজ্যের তদন্তের গতিপথেই। গোরু পাচারকাণ্ডে অনুব্রত মণ্ডলকে বীরের মতো জেল থেকে বের করে আনার মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের পরেই গোরু পাচারে তদন্ত অতি ‘তৎপর’ হয়ে উঠল সিআইডি।
এরই মাঝে এবার রাজ্যে পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি শুক্রবার গোরু পাচারকাণ্ডে চার্জশিট পেশ করল। মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর আদালতে এদিন দুপুরে এই চার্জশিট জমা দিল সিআইডি। চার্জশিটেও স্পষ্ট, শাসক তৃণমূলের নেতা ও প্রভাবশালীদের আড়াল করেই সিআইডি’র এই তদন্ত। গোরু পাচার মামলায় চার্জশিট পেশ করল সিআইডি। শুক্রবার জঙ্গিপুর আদালতে চার্জশিট দিল সিআইডি। চার্জশিটে নাম রয়েছে গোরু পাচারের কিংপিন এনামূল হক ও তাঁর তিনজন ভাগ্নের নাম। এনামূল হকের তিন ভাগ্নে মেদেহি হাসান, হুমায়ুন কবীর, জাহাঙ্গিরের নাম চার্জশিটে যুক্ত করেছে সিআইডি। যদিও গোরু পাচারের কারবারে এনামূল হকের সঙ্গে মূল যোগাযোগ ছিল যে অনুব্রত মণ্ডলের সে সম্পর্কে একটি লাইনও উল্লেখ নেই সিআইডি’র চার্জশিটে। এর আগে আসানসোল আদালতে সিবিআই’র চার্জশিটেও এনামূল হক ও তাঁর পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যের নাম যুক্ত করা হয়েছিল। তবে বীরভূমের ইলামবাজারের পশুহাট থেকে মুর্শিদাবাদের আটটি থানা এলাকা হয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে অনুব্রত সহযোগিতায় এনামুল হকের গোরু পাচারের কারবারের তথ্য সযত্নে এড়িয়ে গিয়েছে রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা। তবে সিআইডি’র চার্জশিটে উল্লেখ এনামূল হকের তিন ভাগ্নেই আপাতত ফেরার, এদেশে নেই বলেই জানা গিয়েছে।
Cow smuggling Saigal Husein in Tihar jail
অবশেষে সায়গলের ঠিকানা এখন তিহার জেল
×
Comments :0