Assembly By Election

লড়াইয়ের পথেই বিচার ছিনিয়ে আনতে হবে

রাজ্য

চন্দন দাস ও বিশ্বজিৎ রায়- নৈহাটি
 

‘অভয়া’র বিচারে হতাশার কোনও জায়গা নেই। বিচার ছিনিয়ে আনতে হয়। লড়াই চলছে। আমরা প্রথম দিন থেকে দাবি করেছি যে, কোন বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্ত হোক। অভয়া’র পরিবার চেয়েছিল সিবিআই। হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। আমরা বলেছি, ঠিক আছে। তাই হবে। সিবিআই, সিআইডি কি বিচার করে নাকি? তাহলে তো সারদা, নারদ স্টিং অপারেশনের বিচার হয়ে যেত। তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রীরা সব জেলে থাকতেন। আমরা কী দেখেছি? সিবিআই তো কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা। তারা নাঙ্গা হয়ে গেছে। তৃণমূল রেগা, আবাসের টাকা, বালি, কয়লা চুরি করবে, আর বিজেপি’র কেন্দ্রীয় সরকার কিছু করবে না। মুক্তিরচকে এমন ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল। দু’দশক লড়াইয়ের পরে বিচার হয়েছিল। এই বিচারও ছিনিয়ে আনতে হবে আন্দোলনের পথে। আমাদের প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি স্বতঃপ্রণোদিত করলেন কেন? কেউ তো তার কাছে যায়নি। কেন নিলেন? এত মামলা সেখানে। তিনি যখন মামলা নিয়েছেন, হয় তাঁকে হাইকোর্টে মামলা ফেরত দিতে হবে, নয়তো বিচার দ্রুত শেষ করতে হবে। বুধবার নৈহাটিতে এক জনসভা প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের এই কথা বলেছেন সিপিআই (এম)'র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।

এদিনের সভা হয়েছিল নৈহাটির ভারত মাতা ক্লাব ময়দানে। নৈহাটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন উপলক্ষ্যে সভা আয়োজন করেছিল বামফ্রন্ট এবং সিপিআই(এম-এল) লিবারেশন। ১৯৬৯-এ সিপিআই(এম-এল) তৈরি হয়। তারপর, গত ৫৫ বছরে এই প্রথম কোন নির্বাচনী সভায় সিপিআই, সিপিআই(এম) এবং সিপিআই(এম-এল) থেকে উদ্গত কোন দল পশ্চিমবঙ্গে একসঙ্গে সভা করলো। এই কেন্দ্রে সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন প্রার্থী বামফ্রন্টের সমর্থনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। 

এই সভাকে তাই ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে মহম্মদ সেলিম বলেন, রাজ্যকে বাঁচাতে হবে। বিচারের দাবিতে লোকে রাস্তায় নেমেছেন, তৃণমূলের হুমকিকে উপেক্ষা করে মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছেন। মানুষ বিজেপি’র ভাগের রাজনীতিকে হারিয়ে বিচারের দাবিতে এক হয়েছেন। মানুষ ন্যায়বিচার চেয়েছেন। আজকের চ্যালেঞ্জ আমরা গ্রহণ করছি ভবিষ্যতে এমন বাংলা, এমন দেশ গড়তে চাই যেখানে কোনও ভেদাভেদ থাকবে না। মানুষের যেই সমস্যা তার কোনও ভেদাভেদ নেই। কৃষকদের দাবিতে, যুবক যুবতীদের স্বার্থে একত্রে লড়াই করতে হবে। নৈহাটিতে মানুষ আক্রান্ত হয়েছে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে। মমতা ব্যানার্জি আমাদের চুপ করে থাকতে বলেছিলেন লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়ে। আমরা চুপ করে থাকিনি। তাই আমাদের উপর আক্রমণ হয়েছে। আমাদের কর্মীরা শহীদ হয়েছেন। জরিমানা করা হয়েছে। হামলা হয়েছে। ধর্ষিতা হয়েছেন। রাজ্য জুড়ে থ্রেট কালচার চলছে। আমাদের আরও মানুষকে এক করতে হবে। আমরা সব ধারাকে এক করতে হবে বাংলায় বামপন্থার পুনর্জাগরণের জন্য সকলকে একত্রিত করতে হবে। দক্ষিণপন্থীদের বিরুদ্ধে বামপন্থীদের শক্তিশালী হয়ে উঠতে হবে। তিনি আরও বলেন, সব পরিবর্তন উত্তরণ নয়। বামপন্থীরা লড়াই সংগ্রামের ডাক গড়ে তোলেন উত্তরণের জন্য। আজকে আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ কাজ, শিক্ষা, বাসস্থান। দুর্নীতির প্রশ্নে পুলিশ প্রশাসন ভেঙে পড়ার প্রশ্নে, আইনের শাসন ভেঙে পড়ার প্রশ্নে, নারী নিরাপত্তার প্রশ্নে মানুষ পরিত্রাণ চান। দেশে ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করছে বিজেপি। আমাদের রাজ্যে তৃণমূলও সেই বিভেদের রাজনীতিকে ব্যবহার করছে। আমরা বাংলার মানুষ, ঐক্য সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করি। ঝাড়খণ্ডের নির্বাচনে বিজেপি  অনুপ্রবেশকারীর কথা বলছে। তৃণমূল তার কোনও প্রতিবাদ করছে না। দেশের বৈচিত্র্যকে রক্ষা করতে হলে আমাদের একতা দরকার। একজনের আলাদা রাজনৈতিক মত থাকতে পারে, কিন্তু গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ থাকলে ঐক্য গড়ে উঠতে পারে। ৫৫ বছরে এই প্রথম বামফ্রন্টের অন্যান্য দল, সিপিআই(এম) ও সিপিআই(এম-এল) একযোগে আবেদন করছি। 

এদিনের জনসভায় সভাপতিত্ব করেন পার্টি নেতা মলয় ভট্টাচার্য। সিপিআই(এম এল) লিবারেশনের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, এবারের লোকসভা নির্বাচনে মানুষ বিজেপি-কে একটা ধাক্কা দিয়েছে। মানুষ তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে দেননি। বিজেপি ক্ষমতায় থেকে কী সর্বনাশ করতে পারে সেটা মানুষ দেখেছে। ঝাড়খণ্ডে বিধানসভা নির্বাচন আছে। বিজেপি ঝাড়খণ্ড দখল করতে চাইছে। ওই রাজ্যের প্রাকৃতিক সম্পদ এর দিকে বিজেপি’র নজর। পড়েছে। এই রাজ্যে আর জি কর নিয়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তা এককথায় নজিরবিহীন। সাম্প্রতিককালে এই রাজ্যে আমরা দেখিনি। এতবড় আন্দোলন যেটা শুরু হয়েছে সেটা নির্বাচনের আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। এই রাজ্যে ক্ষমতাতন্ত্র গড়ে উঠেছে। সিভিক ভলান্টিয়ার তার একজন প্রতীক। এতবড় আন্দোলন গড়ে না উঠলে সন্দীপ ঘোষের মতো লোকগুলো জেলে যেত না। জুনিয়ার ডাক্তাররা দুর্নীতিমুক্ত ও গণমুখী স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দাবিতে আন্দোলন করছে। গণতন্ত্রে প্রতিদিনের হিসেব নেওয়ার অধিকার নাগরিকের আছে। পাঁচ বছর পর পর নির্বাচন হলেই গনতন্ত্র রক্ষা হয় না। এই আন্দোলন একটা নতুন ভাষা ও এজেন্ডা তৈরি করে দিয়েছে। এই আন্দোলন শ্রমজীবী মানুষ ও গ্ৰামে ছড়িয়ে দিতে হবে।এই নির্বাচন সেই সুযোগ এনে দিয়েছে। এই রাজ্যে পেশি শক্তি, গুণ্ডাবাহিনীর দাপট শেষ কথা বলবে না। শেষ কথা বলবে মানুষ। একটা সম্ভাবনাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বামপন্থীদের শক্তিবৃদ্ধি করতে হলে বৃহত্তর বামপন্থী ঐক্য প্রয়োজন। নৈহাটি দিয়ে সেই সূচনা ঘটছে। সবাই মিলে যে ঐক্য গড়ে উঠেছে সেটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। 

সিপিআই’র রাজ্য সম্পাদক স্বপন ব্যানার্জি বলেন, দেশদ্রোহী রাজনৈতিক দল বিজেপি। এর দেশবিরোধী নীতি নিয়ে দেশ শাসন করছে। এই দেশদ্রোহী শক্তির হাত থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে হবে। তৃণমূল ও বিজেপি’র মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। দেশ ও রাজ্যে প্রতিদিন ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এই রাজ্যে দুষ্কৃতীরা শাসকদলকে নিয়ন্ত্রণ করছে। বৃহত্তর বাম ঐক্য আগামী দিনে এই রাজ্যে পরিবর্তন আনতে পারে।

ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা সঞ্জীব চ্যাটার্জি বলেন, আরএসপি নেতা মিহির পাল, সিপিআই(এম এল) লিবারেশন রাজ্য কমিটির সদস্য জয়তু দেশমুখ, প্রার্থী দেবজ্যোতি মজুমদার, সিপিআই(এম) নেতা গার্গী চ্যাটার্জি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

Comments :0

Login to leave a comment