Special Session of Parliament

কমিশনার নিয়োগ বিলের সর্বাত্মক বিরোধিতার প্রস্তুতি শুরু ‘ইন্ডিয়া’র

জাতীয়

Special Session of Parliament

এতদিন চুপ করে বসে থেকে বুধবার বেশ রাতের দিকের সংসদের বিশেষ অধিবেশনের আলোচ্য বিষয়ের বুলেটিন প্রকাশ করা হয়। কী জন্য হঠাৎ সংসদের বিশেষ অধিবেশন বসাতে হচ্ছে তা জানতে চেয়ে বিরোধীরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানালেও ওইদিন দুপুরে ১৭ তারিখে সর্বদল বৈঠকের ঘোষণা এবং রাতে আপাত নির্বিষ কয়েকটি আলোচনার বিষয় উল্লেখ করা হয়। কিন্তু বিরোধীরা মনে করছেন, বিস্তৃতভাবে আলোচনার বিষয় জানানো হয়নি। বরং কিছুটা ধোঁয়াশাই রাখা হয়েছে। কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করে সরকার তাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে বলেও অভিযোগ করেছেন বিরোধীরা। কিন্তু যে বিল বা যেসমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনার কথা বলা হয়েছে, তা নিয়েও বৃহস্পতিবার কড়া প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে বিরোধীদের পক্ষ থেকে। সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি প্রস্তাবিত মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচনী কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত বিলটি সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায়কে লঙ্ঘন করা হচ্ছে বলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন।
‘অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের’ নামে এই কমিশনার নিয়োগ পদ্ধতি পালটাতে চেয়ে আনা মোদী সরকারের এই বিলটি নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক রয়েছে। দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বাছাই প্রক্রিয়া থেকে দেশের প্রধান বিচারপতিকে ছেঁটে ফেলতে এই বিলটি আনা হয়েছে। নতুন বিলে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে তাঁরই মনোনীত একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা নিয়ে গঠিত কমিটির মাধ্যমে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার কথা বলা হয়েছে। বিরোধীদের তরফে আপত্তি সত্ত্বেও সেই বিলটাই অধিবেশনের শুরুতে আলোচনায় আনতে চাইছে মোদী সরকার। এদিন ইয়েচুরি ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে বলেছেন, ‘‘মোদী নিজের সর্বশক্তিমান ভাবমূর্তি ঊর্ধ্বে তুলে ধরার পাশাপাশি মুখ্য নির্বাচন কমিশনা সহ অন্যান্য কমিশনার নিয়োগই মূল আলোচ্য বিষয় হতে চলেছে সংসদের বিশেষ অধিবেশনে। সুপ্রিম কোর্ট আগেই বলেছিল, এই নিয়োগ করবেন প্রধানমন্ত্রী, সংসদের বিরোধী দলনেতা এবং ভারতের প্রধান বিচারপতি।’’ অথচ প্রস্তাবিত বিলে প্রধান বিচারপতিকে ছেঁটে ফেলে তাঁর জায়গায় প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কথা উল্লেখ আছে। পরে আরেক ‘এক্স’ করে ইয়েচুরি স্পষ্ট বলেন, ‘‘প্রধান বিচারপতিকে সরিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে নিয়োগ আসলে সরকারি নিয়ন্ত্রণ সুনিশ্চিত করার উদ্যোগ, এটা অগণতান্ত্রিক। সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায়কে লঙ্ঘন করা হয়েছে প্রস্তাবিত বিলে। সুপ্রিম কোর্টের রায়কে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে ওই বিলকে সংসদে পরাস্ত করতে হবে ইন্ডিয়া’র সাংসদদের।’’
বস্তুত লোকসভায় পাশ করিয়ে নিলেও রাজ্যসভায় আটকে থাকা কয়েকটি বিল পাশ করানোর ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়েছে বুলটিনে। তেমনই বিতর্কিত আরেকটি বিল ‘প্রেস অ্যান্ড রেজিস্ট্রৃশন অব পিরিওডিক্যালস বিল ২০২৩’ রয়েছে। সংবাদ মাধ্যমের অধিকার খর্ব করার এই বিল নিয়ে এডিটর্স গিল্ড সহ বিভিন্ন মহল থেকেই আপত্তি রয়েছে। লোকসভার মহাসচিব উৎপল কুমার সিংয়ের জারি করা এই বুলেটিনে বলা হয়েছে, ৭৫ বছরের সংসদীয় সফর নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি বিশেষ অধিবেশনে বেশ কিছু সংসদীয় কাজও হবে। তার মধ্যে রাজ্যসভায় পাশ হওয়া অথচ লোকসভায় আটকে থাকা দু’টো বিল আসবে আলোচনায়। তারই একটি প্রেস অ্যান্ড রেজিস্ট্রৃশন অব পিরিওডিক্যালস বিল ২০২৩’। এবং আরেকটি হলো অ্যাডভোকেট (সংশোধনী) বিল। এছাড়াও রাজ্যসভায় পেশ হয়ে যাওবা অথচ স্ট্যান্ডিং কমিটিতে না পাঠানো দু’টো বিল নিয়ে আলোচনার কথাও বলা হয়েছে। তার একটি পোস্ট অফিস বিল, ২০২৩ এবং নির্বাচন কমিশনার বাছাইয়ের বিলটি। 
বুলেটিন প্রকাশের পর অবশ্য রাজনৈতিক মহলে খানিকটা ‘পর্বতের মুষিক প্রসবের’ সঙ্গে বিশেষ অধিবেশন তুলনা শুরু হয়েছে। তবে বিজেপি, বিশেষ করে মোদী সম্পর্কে পোড় খাওয়া রাজনৈতিকরা অবশ্য বলছেন, তড়িঘড়ি প্রকাশ করা দেওয়া এই বুলেটিন আসলে মুখোশ। এখনও মোদী আড়ালেই রেখেছেন আসল ছক। কারণ ভোটের আগে মোদীর এই অধিবেশন অনেক হিসেব কষেই ডেকেছেন এমনটাই আশঙ্কা করেছিল রাজনৈতিক মহলের। ওইদিন রাতেই কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ আলোচ্য বিষয় জানানো সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘‘শেষে সোনিয়া গান্ধীর চিঠির চাপে নির্বিষ কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করেছে। এটা হিমশৈলের চূড়ো মাত্র। তবে সংসদীয় গ্রেনেড সমস্ত আস্তিনের তলায় লুকিয়ে রাখা হয়েছে। যথারীতি আগের মতোই শেষ মুহূর্তে সামনে আনা হবে। পর্দার আড়ালে আরও কিছু আছে। তবে ওই কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত বিল ইন্ডিয়া’র সাংসদরা তীব্র বিরোধিতা করবেন।’’ এদিন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েনও বলেছেন, ‘এখনও বিশেষ অধিবেশনের প্রকৃত আলোচনার বিষয় সামনে আনা হয়নি। সরকার বিরোধীদের সঙ্গে নোংরা রাজনীতি করছে।’
সবারই ধারণা, এমন কোনও বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে যা এখনই সামনে আনতে চাইছে না সরকার। ১৭ তারিখ বিকালে সর্বদল বৈঠক ডাকা হয়েছে তাও বিশে অধিবেশন শুরু মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে।
 

Comments :0

Login to leave a comment