গল্প / মুক্তধারা , বর্ষ ৩
পাঁচিল
রাহুল চট্টোপাধ্যায়
ইটগুলো পরপর সাজিয়ে সাজিদ দেখল মাপটা ঠিক আছে কি না। দড়ি ফেলে মাপ নিতে হচ্ছে।সমান হবে পাঁচিল।ভাগ হবে মাঠ ।দু পাশটা আলাদা করে গড়ে উঠবে দুটো ক্লাব। মাঠের অধিকার নিয়ে কতো ঝগড়া কতো দলাদলি। বহু দিন ধরে গ্ৰামের কিছু মানুষ এই ঝগড়ায় মেতে আছে, অশান্তি তাদের কিছু সুবিধা করে দেয় আর সেই অশান্তির মধ্যে দিয়ে খুঁজে নেয় প্রতিশোধের পুরনো ঝাঁঝ।
এসবই ভাবছিল সাজিদ। সে কেবল মাঠের কথা ভাবে না। সে ভাবে দেশটার কথা। দেশটাও তো এমনি। কেবল মারামারি, কাটাকাটি। কিছু মানুষ এই ভাগাভাগির সুযোগ নেয়। সাজিদ এ গ্ৰামের -ই ছেলে। কিন্তু ছোট বয়েস থেকে এসব দেখে নি। কোন দিন কেউ বলে নি ধর্মের কথা, রাজনীতির কথা।সেই নিয়ে ভাগাভাগি হয় নি। আজ দুটো ক্লাব জমি নিয়ে ঝগড়া করছে, রাজনীতি করছে।এক হতে পারছে না।এরা কি নিয়ে বাঁচবে?
গ্ৰামের ছোট ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে থাকে সাজিদ।ইটের পরে ইট পড়ে যেন সাজিদের বুকে।মাঠখানায় পাঁচিল যেন বুকের মাঝখানে এসে লাগে সাজিদের। মাঠখানাকে দেশ মনে হয়। সে ভাবে,
এই পাঁচিল যদি দেশজুড়ে তৈরি হয় কি হবে!!
ভাবতে ভাবতে থেমে যায় সে,চেঁচিয়ে ডাকে আশেপাশের লোকজনকে, বলে -'সবাই বলো এ পাঁচিল উঠবে না,মাঠ ভাগ হবে না, ছেলেদের খেলার মাঠ ভাগাভাগির জন্য ছোট হবে না'।
চারিদিকের লোকজন চেঁচিয়ে একই কথা বলতে থাকে।
সাজিদ কাজ ছেড়ে চলতে থাকে রাস্তা দিয়ে -
Comments :0