Editorial

লজ্জা থাকলে

সম্পাদকীয় বিভাগ

বাংলায় একটা প্রবাদ আছে ‘কচুগাছ কাটতে কাটতে একদিন মানুষ কাটায় দক্ষ হয়ে ওঠে।’ এরাজ্যের শাসক তৃণমূলের সব স্তরের নেতা-কর্মীদের চৌর্যবৃত্তির সঙ্গে এই প্রবাদের ষোলো আনা মিল। মমতা জমানার ছত্রছায়ায় তৃণমূলীরা সাধারণ চুরি-দুর্নীতি করতে করতে এতটাই দক্ষ ও পোক্ত হয়ে উঠেছে যে চিড়িয়াখানার জন্তু-জানোয়াররাও রেহাই পাচ্ছে না। গত দেড় দশকে আলিপুর চি‍ড়িয়াখানা থেকে গায়েব করে দেওয়া হয়েছে দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি জন্তু-জানোয়ার। এরমধ্যে রয়েছে অনেক বিরল প্রজাতির প্রাণী। যেগুলো পাচার করতে পারলে মোটা অঙ্কের টাকা পাওয়া যায়। লোকচক্ষুর আড়ালে তথ্যের অস্বচ্ছতা ও গোপনীয়তার আড়ালে পশু-পাখির সংখ্যা কমিয়ে চিড়িয়াখানাকে যথাসম্ভব খালি করে দিয়ে এক সময় তুলে দেবার ষড়যন্ত্রের সলতে পাকানো চলছে। জীব-জন্তু যদি কমে যায় তাহলে তাদের জন্য বেশি জমির প্রয়োজন হবে না। অতএব সহজ হিসাব বাড়তি জমি তুলে দাও প্রোমোটারের হাতে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে। সেখানে তৈরি হবে বাণিজ্যিক বহুতল, ঝক্‌ঝকে শপিং মল। ধুঁকতে থাকা বাংলার অর্থনীতিতে সরকারের আয় বাড়বে জমি বিক্রির টাকা থেকে।
ইঙ্গিত মিলেছিল অনেকদিন থেকেই। সম্প্রতি তথ্য পরিসংখ্যান যাচাই করে স্পষ্ট হয়ে গেছে এ শুধু পুকুর চুরি নয়, রীতিমতো চুরি হয়ে যেতে বসেছে গোটা চিড়িয়াখানাটাই। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার আগে ২০১১ সালের ১ এপ্রিল আলিপুর চিড়িয়াখানায় সর্বমোট পশু-পাখির সংখ্যা ছিল ১৪৫২টি। মমতা ব্যানার্জির উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে গিয়ে ১৪ বছর পর ২০২৪ সালের এপ্রিলে সেই সংখ্যা এসে ঠেকেছে ৩৫১-তে। অর্থাৎ ১১০১টি পশু-পাখি চিড়িয়াখানা থেকে উধাও হয়ে গেছে। কখন, কীভাবে কেউ জানো না। কর্তৃপক্ষ বসে বসে ভেরেন্ডা বাজান না অন্য কিছু করেন বোঝা দায়। প্রশাসনিক দক্ষতার এতটাই অধঃপতন ঘ‍‌টেছে যা প্রতি বছর ঠিকঠাক গুনে কোনও প্রাণী কটা আছে তার সঠিক হিসাব রাখার যোগ্যতাও নেই। ফলে চিড়িয়াখানার ওয়েব সা‍‌ইটে দেখা যাচ্ছে উদ্ভট, অবাস্তব, বোধগম্যহীন সংখ্যা। মূর্খামির একটা সীমা থাকা উচিত। তারপর একই সময়ের কেন্দ্রীয় তথ্য ও রাজ্যের তথ্যের আকাশপাতাল অমিল। তারপরও সেগুলি ঠিকঠাক করা প্রয়োজন কেউ মনে করে না। এরাজ্যে সত্যি কোনও সরকার চলছে নাকি চোর-লুঠতরাজদের বৈঠকখানা চলছে বোঝা মুশকিল।
মমতা ব্যানার্জির সরকারের তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালের ৩১ মার্চ পশু-পাখি ছিল ১২৩১‍টি। ঠিক তারপরের দিনের (১ এপ্রিল) সরকারি তথ্য বলছে সংখ্যা ৯২৯টি। একরাতেই গায়েব ৩০২টি। তেমনি ২০২৪ সালের ৩১ মার্চের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান হলো পশু-পাখি আছে ৬৭২টি। ঠিক পরদিন তা কমে হয়েছে ৩৫১টি। রাতারাতি ৩২১টি পশু-পাখি  গায়েব হয়ে গেছে। ১৪ বছর ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে প্রতি বছরই পশু-পাখির সংখ্যা পরিকল্পিতভাবে কমিয়ে ফেলা হচ্ছে। লক্ষ্য সম্ভবত চিড়িয়াখানার মহামূল্যবান জমি খালি করে ফেলা। চু‍‌রি, দুর্নীতি, অপদার্থতার জেরে রাজ্যের অর্থনীতির দ্রুত পতন ঘটছে। সরকারের আয় সঙ্কুচিত হচ্ছে। খরচ সামলাতে প্রতি মাসে তিন-চারবার বাজার থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। আয়ের জন্য ইতিমধ্যে বেশিরভাগ রাজ্য সরকারি সংস্থা বিক্রি করা হচ্ছে। যেগুলি আছে সেগুলিও শীর্ণকায় হয়ে গেছে। জেলের জমি, পরিবহণ দপ্তরের জমি বিক্রি হচ্ছে প্রোমোটারের কাছে। এবার বিক্রি হচ্ছে চিড়িয়াখানার জমিও। রাজ্যের হাল এমন জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে যে সরকারি জমি সম্পদ বেচে খাওয়া ছাড়া মমতা ব্যানার্জি বিকল্প পাচ্ছেন না। ছাগল দিয়ে যেমন হাল চাষ যায় না, তেমনি চোর-ডাকাত, খুনি-ধর্ষক-দুষ্কৃতী  দের দিয়ে কোনও সভ্য সমাজে সরকার চালানো যায় না। নির্লজ্জ বলেই এরা এখনও ক্ষমতা আঁকড়ে বসে আছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment