Editorial

হাস্যকর হুঙ্কার

সম্পাদকীয় বিভাগ

পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলা এবং তার পরবর্তী সামরিক অভিযান অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সংসদে আলোচনা শুরুর প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন অপারেশন সিঁদুর প্রমাণ করে দিয়েছে সন্ত্রাসবাদীদের লুকোবার জন্য বিশ্বের কোথাও কোনও নিরাপদ জায়গা নেই। অর্থাৎ মোদী বোঝাতে চেয়েছেন তাঁর সরকার এবং সেনাবাহিনীর দক্ষতা, ক্ষমতা ও শক্তি এতটাই যে তাদের হাত থেকে রেহাই পাবার সুযোগ নেই। এমন আত্মজাহির অবশ্য এটা নতুন নয় এর আগেও একাধিকবার তিনি অপারেশন সিঁদুরের ঢাক পিটিয়েছেন, কিছু ক্ষেত্রে একটু বাড়াবাড়িভাবেই। আসলে প্রিয় বন্ধু মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে বার বার খোঁচা খাওয়ার ও অপদস্থ হবার পরও যখন ট্রাম্পের মুখের ওপর পালটা কিছু বলার সাহস দেখাতে পারছেন না। তখন বারংবার কুমির ছানা দেখানোর মতো অপারেশন সিঁদুরের সাফল্যের ঢাক পিটিয়ে আত্মপ্রসাদ লাভ করার চেষ্টা ছাড়া তাঁর কিই বা করার আছে।
প্রধানমন্ত্রীর এহেন আত্মগরিমা প্রচার নিয়ে বিস্তর ধন্দও রয়েছে। অপারেশন সিঁদুর সীমাবদ্ধ ছিল পাক অধিকৃত কাশ্মীর ও পাক ভূখণ্ডে। তার বাইরে জঙ্গিরা লুকিয়ে থাকলে প্রধানমন্ত্রী তাদের নাগাল কীভাবে পাবেন তার কোনও ধারণা মোদীর ভাষ্য থেকে মিলছে না। ভারতের সেনারা বিশ্বের যেকোনও দেশে লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদের খতম করে আসবে এমন ভাবা পাগলের প্রলাপ হয়ে যাবে। কানাডায় এধরনের কিছু একটা করতে গিয়ে কি পরিণতি হয়েছে সেটা নিশ্চয়ই সকলে ভুলে যাননি।
বিশ্বের কোণে কোণে লুকানো জঙ্গিদের খুঁজে এনে সাজা দেবার মেঠো ভাষণ দেওয়া যেতেই পারে কিন্তু সেটা যে কার্যত অসম্ভব সেটা মোদী নিজে হাড়ে হাড়ে টের পেলেও তাঁর অন্ধ ভক্তদের সেটা বোঝার বোধবুদ্ধি নেই। তাছাড়া নিজের দেশে লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদের খুঁজে বের করে সাজা দেবার ক্ষমতা নেই যার তিনি দুনিয়া জুড়ে জঙ্গি খোঁজার কথা বলে হাসির খোরাক হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। মনে রাখতে হবে তাতে দেশের অসম্মান হয়।
লক্ষণীয়, মোদী অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রত্যাঘাতের কথা নানা উপলক্ষে বহুবার বললেও পহেলগামে ২৬ জনকে খুন করা জঙ্গিরা কোথায় লুকিয়ে আছে সেটা নিয়ে একবারের জন্যেও টু-শব্দটি করেননি। তিনি বিশ্বের অন্যত্র লুকানো জঙ্গিদের খুঁজে আনার হুঙ্কার ছাড়েন কিন্তু দেশের ভেতরে জঙ্গিদের ক্ষেত্রে মিউ মিউ-ও করেন না। পহেলগামে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিরপরাধের মৃত্যুর পর তিন মাসেরও বেশি সময় কেটে গেছে। আজ পর্যন্ত তাদের একজনকেও ধরতে পারেননি মোদী-শাহ-র অপদার্থ নেতৃত্বে পরিচালিত গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বাহিনী। জঙ্গিরা কোথা থেকে কখন এল, কোথায় ছিল, কতদিন ছিল, হামলার পর কীভাবে গা ঢাকা দিল মোদী-শাহ’রা তার কোনও হদিশ পেলেন না। বোঝা যাচ্ছে কেমন দক্ষ প্রধানমন্ত্রী আর কেমন দক্ষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। নিরীহ কাশ্মীরের মানুষের ওপর নির্যাতনে এরা দারুণ পারদর্শী। সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষ‍‌হ করতে খুবই দক্ষ কিন্তু জঙ্গি মোকাবিলায় চরম অপদার্থ। সবচেয়ে দক্ষ মিথ্যা ভাষণে। মিথ্যাকে রঙিন মোড়কে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচারে এদের প্রতিভা বিরল। মোদীর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ব্যর্থতা ও অপদার্থতার জায়গাগুলো আড়াল করতে নীরবতা পালন। বদলে অবান্তর ও অপ্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার করা। বিশ্বের কোন কোণায় জঙ্গি লুকিয়ে আছে সেটা নিয়ে তাঁর আপাতত মাথা না ঘামালেও চলবে। তাঁর এখন প্রধান কাজ পহেলগামের জঙ্গিদের খোঁজা। না পারলে দেশবাসীর কাছে কর‍‌জোড়ে ক্ষমা ভিক্ষা করা।
 

Comments :0

Login to leave a comment