দু’মাসের মধ্যে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে দিয়েছে মমতা ব্যানার্জির সরকার। আর চার মাসে রাজ্যে ভাতা প্রাপক কমে গিয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজারের বেশি।
তাহলে ‘দুয়ারে সরকার’র কোটি টাকার ক্যাম্প আয়োজন কি চোখে ধুলো দেওয়া? এই প্রশ্ন উঠছে।
এই প্রবল মন্দার সময়ে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে জোর দেওয়ার কথাই বলছেন অর্থনীতিদিবদের অনেকে। শুক্রবারই কলকাতার এক আলোচনা সভায় অর্থনীতিবিদ প্রভাত পট্টনায়ক বলেছেন, ‘‘জনকল্যাণকে কৃপা করার মনোভাবে না দেখে সরকারের বাধ্যতামূলক দায়িত্ব হিসাবে দেখতে হবে।’’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ভাতা দেওয়ার বিষয়ে ‘করে দিলাম’, ‘দিয়ে দিলাম’ বলতেই অভ্যস্ত। তাঁর অনুপ্রেরণায় রাজ্যে বৃদ্ধ, বিধবা, প্রতিবন্ধী সহ সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষের ভাতাগুলি সরকারের কৃপা প্রকল্পে পরিণত হয়েছে।
সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পকে ‘ডোল’ অথবা ‘কৃপা’ মনে করেন বলেই তাতে কাটছাঁট শুরু করেছে মমতা ব্যানার্জির সরকার। রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তর সূত্রে শনিবার জানা গিয়েছে, গত জুলাইয়ে ভাতা পেতেন ২১,৬১,৯৬৩ জন। আর এখন সেই সংখ্যা নেমে এসেছে ২০,৩৬,৭০৫-এ। অর্থাৎ চার মাসে ভাতার আওতার বাইরে চলে গিয়েছেন ১,২৫,১৫৮ জন।
তার মধ্যে প্রায় ৯৬ হাজার বৃদ্ধ-বৃদ্ধার ভাতা বন্ধ হয়েছে। ভাতা বন্ধ হয়েছে প্রায় ২২ হাজার বিধবার। প্রায় ৩ হাজার প্রতিবন্ধীও ভাতার আওতার বাইরে চলে গিয়েছেন এই চার মাসে।
সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে ভাতা প্রাপকের সংখ্যা কমিয়ে বড় পরিমাণ টাকা বাঁচাচ্ছে মমতা ব্যানার্জির সরকার। বার্ধক্য ভাতার ১০০০ টাকার ৮০ শতাংশ রাজ্য সরকার দেয়। আবার ৮০ বছরের বেশি বয়সের মানুষের ভাতার ৫০ শতাংশ রাজ্য সরকার দেয়। বিধবা ভাতার ৭০ ভাগও রাজ্য সরকারকে দিতে হয়। প্রতিবন্ধী ভাতার ৭০ শতাংশও রাজ্যেরই দেয়। কখনোই কেন্দ্রীয় সরকারের টাকার পরিমাণ বৃদ্ধির দাবি তৃণমূল করেনি। কেন্দ্রের মোদী সরকারের নীতিই হলো সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প থেকে হাত গুটিয়ে নেওয়া। এই ক্ষেত্রে কেন্দ্রের নীতি বিরোধী আন্দোলনের বদলে ভাতার নাম নিয়ে ঝগড়ার বাতাবরণ তৈরি করে এই সংক্রান্ত লড়াইকে ভুল পথে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন মমতা ব্যানার্জি। রাজ্যে ভাতাগুলির নাম একত্রে তিনি দিয়েছেন ‘জয় বাংলা।’
এখন দেখা যাচ্ছে ‘জয় বাংলা’ থেকে বাংলাবাসীকে ছাঁটায় মন দিয়েছে তাঁর সরকার। তাও চুপিসারে। কিন্তু চালাকি ধরা পড়ে যাচ্ছে সরকারের নথিতেই।
এবার দেখা যাচ্ছে ভাতা প্রাপকদের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাও কমিয়ে ফেলছে মমতা-শাসনের পঞ্চায়েত এবং গ্রামোন্নয়ন দপ্তর। আবার লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ করা হচ্ছে না। রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তর বিভিন্ন কর্মসূচির পর্যালোচনা করে পনেরো দিন অন্তর। গত ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে রাজ্যের গ্রামে, শহরে ভাতা দেওয়া হবে ১৩,২৬,৯৯৫ জনকে — এমনই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাজ্য সরকারের নির্দ্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪,০৯,১৮৮।
অর্থাৎ দু’মাসের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা ৮২,১৯৩ কমিয়ে এনেছে তৃণমূলের সরকার।
এর মধ্যে কী ভাতা প্রাপকের সংখ্যা বেড়েছে? না। তাও নয়। বরং কমেছে। সেপ্টেম্বরে রাজ্যে বৃদ্ধ, বিধবা, প্রতিবন্ধী ভাতা পেতেন ১২,৪৫,৬৭২জন। ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত তা দাঁড়িয়েছে ১২,৪৪,৩৬৪। গ্রামে ভাতা প্রাপকের সংখ্যা ৯,৪৭,৫৪০ থেকে কমে এসেছে ৯,৪৭,৫৩৫-এ। কিন্তু আসলে ভাতা প্রাপকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কথা। সরকারই সেই লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। কিন্তু ভাতা দেওয়া হচ্ছে না। অনেকে ভাতার আবেদন করে বসে আছেন। কিন্তু মিলছে না।
Comments :0