বেরিয়ে পড়ছে ‘ভাইপো’ ঘনিষ্ঠ একের পর এক নাম। শিক্ষায় ভয়াবহ দুর্নীতির প্রমাণ জড়ো হয়েছে আদালতে। টাকার বিনিময়ে কারচুপি করে চাকরি চক্রের দালালরা ধৃত। নিজের স্বপক্ষে জনমত গঠন করতে আসরে নামলেন মমতা ব্যানার্জি। সরাসরি সওয়াল করলেন তাঁদের হয়ে, যোগ্যতা না থেকেও কারচুপির জোরে চাকরি মিলেছে যাঁদের।
আইনজীবীদের সরাসরি উল্লেখ না করে ‘চাকরি না খাওয়ার’ বিষয়টি ভেবে দেখতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর সিপিআই(এম) সাংসদ এবং আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘চাকরি খাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নিজে।’’ রাজ্যের স্কুলে স্কুলে লক্ষাধিক শূন্যপদ। শূন্যপদ পূরণে চাকরির বিজ্ঞপ্তি নেই কেন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।
হাইকোর্টে কারচুপি প্রমাণিত হওয়ায় এদের কারচুপির চাকরির একাংশ বাতিল হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘কারও চাকরি কেড়ে নেবেন না।’’ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পরই প্রশ্ন উঠেছে। যাঁরা যোগ্য হয়েও চাকরি পেলেন না জালিয়াতি চক্রের কারসাজিতে, রাস্তায় বসে আন্দোলন করেছেন, তা’হলে তাঁদের কী হবে?
মঙ্গলবার কলকাতায় আলিপুর আদালতের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যান মমতা ব্যানার্জি। পুরনো প্রচারই ফের আউড়ে তিনি বলেন, ‘‘সিপিএম’র লোকেরাও সরকারি চাকরি পেয়েছে। কিন্তু আমি তো তাঁদের চাকরি খাইনি। তাহলে তোমরা চাকরি খেতে চাইছ কেন?’’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, চাকরি চলে যাওয়ার ফলে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন বেশ কয়েক জন। আদালতের উদ্দেশ্যেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘এদের আরেকবার সুযোগ দেওয়া উচিত।’’
স্কুলে চাকরির সব স্তরে দুর্নীতি সামনে চলে এসেছে। প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষক বা শিক্ষাকর্মী, কোনও স্তর বাদ নেই। বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীরা ৭৩০ দিন ধরে রাস্তায় বসে অবস্থান চালাচ্ছেন। জালিয়াতি এবং দুর্নীতির অভিযোগ তাঁরা তুললেও আমল দেয়নি তৃণমূল কংগ্রেস সরকার। বরং আদালতে বিচার চাইতে গেলে তদন্ত আটকাতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে সওয়াল চালিয়েছে। তবু মমতা এবং তাঁর মন্ত্রীরা এদিন দাবি করেছেন, দুর্নীতিকে সমর্থন করে না তৃণমূল!
আর মুখ্যমন্ত্রীই বলেছেন চাকরি যাতে না যায় দেখা উচিত আইনজীবীদের। তাঁর যুক্তি, চাকরি করে পরিবারকে দেখছে।
বামপন্থী আইনজীবীরা কি ইচ্ছা করে মানুষের চাকরি ‘খাচ্ছেন’?
সিপিআই(এম) সাংসদ এবং আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘চাকরি খাচ্ছেন মমতা ব্যানার্জি নিজে। তিনি এই দুর্নীতির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।’’
ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ভাবতে পারেননি যে সবটা প্রকাশ্যে চলে আসবে। এই দুর্নীতি উদ্ঘাটনে বামপন্থী আইনজীবীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন। তাই মমতা ব্যানার্জির রোষের মুখে পড়তে হচ্ছে ‘সিপিএম’কে।’’
সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, নিয়োগ দুর্নীতির সরাসরি সুবিধাভোগী হল তৃণমূল। দলের সর্বোচ্চ নেত্রীর কাছে সেই প্রসাদের ভাগ পৌঁছেছে, সমানে জোরালো হচ্ছে এই অভিযোগ। কিন্তু প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার দুর্নীতি যে তৃণমূলের মেশিনারির জোরেই, তা স্পষ্ট। আদালতের নির্দেশে কারচুপিতে নিযুক্ত শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের একাংশের চাকরি ইতিমধ্যেই বাতিল হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে আরও অনেকের বিরুদ্ধে।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, স্বাধীনতার পরে বাংলা এই মাপের দুর্নীতি দেখেনি। লকডাউনকে হাতিয়ার করে করুণাময়ীর দপ্তর থেকে হাতে হাতে চাকরির নিয়োগপত্র বিলি করেছেন এসএসসি’র তৎকালীন শীর্ষকর্তা কল্যাণময় গাঙ্গুলী। বর্তমানে শিক্ষাদপ্তরের আরও ২১ জন কর্তার মতোই জেলবন্দি তিনি।
বিকাশ ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘‘মমতা ব্যানার্জি যদি এতই শোকে আকুল হয়ে পড়েন, তাহলে তিনি শূন্যপদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছেন না কেন? নতুন চাকরি তৈরি এবং নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর কথা বলছেন না কেন তিনি? বিজ্ঞপ্তি তো সিপিআই(এম) জারি করতে পারবে না। তিনি সেটা করছেন না কেন?’’
Comments :0