মলয়কান্তি মণ্ডল, রানিগঞ্জ
দুপুর থেকেই বৃষ্টি, কখনো টিপটিপ আবার কখনো হুড়মুড়িয়ে। বৃষ্টিকে উপেক্ষা বিকেলে করেই শুরু হল বাঁশড়ায় মিছিল। তৃণমূলের চুরি, লুট আটকাতে এক পা পিছানোর উপায় নেই।
বাঁশড়ায় লালঝাণ্ডার উত্তাল মিছিলে জনগণের পঞ্চায়েত গড়তে সিপিআই(এম) প্রার্থীদের জয়ী করার আহ্বান জানিয়ে মিছিলে পা মেলালেন রাজ্যের যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জি।
আমড়াসোতা পঞ্চায়েতের জনগণ গত নির্বাচনে সিপিআই(এম) তৃণমূলের গুণ্ডাবাহিনীর থেকে বুথ রক্ষা করেছিলেন। বামপন্থীরা বোর্ড গঠন করেছিল। তৃণমূল টাকা দিয়ে প্রধান ও পঞ্চায়েত সদস্যকে দল ভাঙিয়ে পঞ্চায়েত দখল নেয়। এরপর পঞ্চায়েত থেকে লুট শুরু করে তৃণমূল। চুরির আখড়ায় পরিণত হয় আমড়াসোতা পঞ্চায়েত। মানুষ পরিত্রাণ চাইছেন। তৃণমূলের পঞ্চায়েতের দুর্নীতির প্রতিবাদে আওয়াজ তুলে লুটেরাদের হঠিয়ে জনগণের পঞ্চায়েত গড়ার ডাকে সুবিশাল মিছিল হল রানিগঞ্জের বাঁশড়া কয়লাঞ্চলে।
মঙ্গলবার বাঁশড়ায় সিআইটিইউ'র কয়লা শ্রমিক ভবন থেকে মিছিল করে সিপিআই(এম)। ১০০ দিনের কাজের বকেয়া মজুরি প্রদান, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়ি তৈরি, পানীয় জল সরবরাহের দাবিতে আমরাসোতা গ্রাম পঞ্চায়েতের অধিবাসীরা বারবার আবেদন জানিয়ে আসছেন। পঞ্চায়েত কিছু কাজ করেনি। এদিন লালঝাণ্ডার মিছিল থেকে তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন এলাকার মানুষজন। সরকারি প্রকল্প থেকে বঞ্চিত নিজেদের হকের দাবিতে গীতা বাউরি, আদি বাউরিরা ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলেন, পঞ্চায়েত থেকে নাম লেখানোর পরও আবাস যোজনার ঘর পাইনি। একশো দিনের কাজ করেছি, এখনো টাকা পাইনি। এখন রেগা প্রকল্পের একশো দিনের কাজ নেই। ১০০ দিনের কাজ চেয়ে সরকারি '৪-ক' ফরম ভরে আবেদন করার পরও কাজ না পাওয়া মানুষেরা প্রশ্ন তোলেন, সংসার চালাবো কী করে?
আদিবাসী ও নিম্নবিত্ত গরিব মানুষের সবারই একই প্রশ্ন। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, আঙুলের ছাপ মেলে না বলে রেশন কার্ড থাকা সত্ত্বেও বহু মানুষ রেশন পাচ্ছেন না। বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী সহায়ক ভাতা বন্ধ করে দিয়েছে পঞ্চায়েত। তপশিলি জাতি, উপজাতির শংসাপত্র প্রদানে গড়িমসি করছে তৃণমূল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি। জল সঙ্কটের সমাধানের কোনও উদ্যোগ নেয়নি পঞ্চায়েত। বামফ্রন্ট সরকারের সময় পঞ্চায়েত মানুষের সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট ছিল। গরিব ও সাধারণ মানুষের সম্মান ছিল।
এদিন অণ্ডাল হিন্দি স্কুল থেকে পোস্ট অফিস মোড় পর্যন্ত মিছিল হয়। মিছিলের শেষে বক্তব্য রাখেন মীনাক্ষী মুখার্জি।
মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন, ‘‘মানুষ জীবনের অভিজ্ঞতায় বুঝেছেন যে বামফ্রন্ট সরকারের সঙ্গে তৃণমূল ও বিজেপি সরকারের ফারাক কী। বিজেপি দেশ লুটছে আর তৃণমূল রাজ্য লুটছে।’’
তৃণমূল এবং বিজেপি’র যোগসাজশের নমুনা হাজির করেন মীনাক্ষী। তিনি বলেন, ‘‘একশো দিনের কাজে দুর্নীতি হয়েছে অথচ পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েতের সভাপতি, বিডিও কারো নামে এফআইআর করছে না বিজেপি। তৃণমূল ও বিজেপি বিভাজনের রাজনীতি করে একে অপরকে সাহায্য করছে।’’
রানিগঞ্জের পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘কয়লাখনি বন্ধ করে বেসরকারি মালিকদের হাতে তুলে দিতে চলেছে বিজেপি। তৃণমূলের তোলা আদায়ের কারণে রানিগঞ্জের মঙ্গলপুরের কারখানা বন্ধ হচ্ছে। তৃণমূল ও বিজেপিকে হটিয়ে জনগণের পঞ্চায়েত গড়ে তুলতে শপথ নিচ্ছে রানিগঞ্জ কয়লাঞ্চল।’’
Comments :0