জানা অজানা
রবীন্দ্রনাথের জীবনবাদী শিক্ষক
তপন কুমার বৈরাগ্য
নতুনপাতা
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের বয়েস তখন নয় দশ বছর
হবে।মাঝে মাঝে রবিবারে আসতেন তাঁর প্রাকৃত
বিজ্ঞানের শিক্ষক সীতানাথ ঘোষ।তিনি তাঁকে
প্রাকৃত বিজ্ঞান শিক্ষা দিতেন। তিনি যখন রবীন্দ্রনাথের
সামনে বিজ্ঞানের তত্ত্ব উপস্থাপন করতেন তখন
রবীন্দ্রনাথ বিজ্ঞানের রসস্বাদনে খুবই আগ্রহী
থাকতেন। বিজ্ঞানের তত্ত্ব আস্বাদনের পর কবিগুরুর
মন সত্যিসত্যিই বিস্ফারিত হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের
অনেক গৃহশিক্ষক ছিলেন;কিন্তু সকলেই তাঁর মন
জয় করে নিতে পারেন নি।সীতানাথ ঘোষ প্রথমদিন
থেকেই রবীন্দ্রনাথের মন জয় করে নিয়েছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ 'নানা বিদ্যার আয়োজন' শিরোনামে তাঁর
'জীবনস্মৃতি'গ্রন্থে লিখেছেন " কলাকৌশল যত বড়
আশ্চর্য হউক না কেন,তাহা তো মোট মানুষের চেয়ে
বড় নহে"।
ছাত্রজীবনে রবীন্দ্রনাথ এমনই এক জীবনবাদী শিক্ষক
সীতানাথ ঘোষকে পেয়েছিলেন। চারদেওয়ালের মধ্যে
রবীন্দ্রদনাথ বাঁধা থাকতে চাননি। সীতানাথ ঘোষই রবীন্দ্রনাথকে
চমৎকার উপস্থাপনার গুণে বিজ্ঞানের রহস্যময় জগতের
প্রতি আগ্রহী করে তুলেছিলেন। সীতানাথ ঘোষের
অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো ছিলো না। অর্থের অভাবে
তিনি কলেজে পড়াশুনাও করতে পারেন নি। রবীন্দ্রনাথের
পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর সীতানাথ ঘোষকে দেখে
বুঝেছিলেন এর মধ্যে আগুন আছে।তাইতো তাঁর পুত্রের
গৃহশিক্ষক হিসাবে তাঁকে নিযুক্ত করেছিলেন। সীতানাথ ঘোষ তখন
তড়িৎবিজ্ঞান,তড়িৎবাহী তাঁতযন্ত্র নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন।
অর্থের অভাবে গবেষণা বন্ধ হবার মুখে। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ
ঠাকুর যখন বিষয়টা জানতে পারলেন তখন তাঁর গবেষণার জন্য তাঁর হাতে সাতহাজার টাকা তুলে দিলেন।
মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই আর্থিক সহযোগিতার জন্য
তিনি তড়িৎবিজ্ঞান এবং তড়িৎবাহিত তাঁত-যন্ত্রের গবেষণা
সম্পূর্ণ করেন। সীতানাথ ঘোষের এই যন্ত্রপাতি সহযোগে বিজ্ঞানের বিভিন্ন পরীক্ষা রবীন্দ্ননাথ ঠাকুরকে খুবই
কৌতূহলী করে তুলেছিলেন।
সীতানাথ ঘোষের বস্ত্রবয়ন যন্ত্র, গম ভাঙানো
যন্ত্র,যন্ত্র চালিত লাঙল, স্টিমার জাতীয় জলযান আবিষ্কার
তাঁকে স্মরণীয় ও বরণীয় করে রেখেছে। তাঁর নির্মিত
বস্ত্রবয়ন যন্ত্রটি বেথিয়ার রানি বহুমূল্যে কেনার ইচ্ছা
প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু তিনি তা বিক্রি করেন নি।
বাঙালিদের জন্যই এই যন্ত্রটা রেখে দিয়েছিলেন।
সীতানাথ ঘোষের জন্ম যশোহর জেলার রায়গ্রামে।
Comments :0