Editorial

হিংস্র শাসক বেআব্রু

সম্পাদকীয় বিভাগ

নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহর নেতৃত্বে পরিচালিত দিল্লির পুলিশ কি দেশের আইনকানুন সব ভুলে মেরে দিয়েছে? নাকি সরকারি সঙ্গদোষে জেনে বুঝেই ভুলভাল কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। তা না হলে মিথ্যে অভিযোগ সাজিয়ে এবং কোনোরকম আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে দেশের একজন বিখ্যাত প্রবীণ সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করে কি করে? এই মামলায় অমিত শাহর পুলিশ যেভাবে সুপ্রিম কোর্টের চপেটাঘাত খেয়েছে তারপর কোন লজ্জায় পুলিশ কর্তারা পদ আঁকড়ে থাকেন? বোঝা যাচ্ছে দলদাসত্ব করতে গিয়ে আইনের সাধারণ জ্ঞানটাও শাসকের কাছে বন্ধক দিয়ে রেখেছে।
ভারতের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করতে নাশকতামূলক কাজ এবং চীনের সমর্থনে ও আর্থিক সহায়তায় দেশে অন্তর্ঘাতমূলক কাজ ও প্রচারের কল্পিত অভিযোগ হাজির করে মামলা সাজিয়ে আচমকা গ্রেপ্তার করা হয় নিউজক্লিক সংবাদ পোর্টালের প্রধান সম্পাদক প্রবীর পুরকায়স্থকে। আমেরিকার সংবাদপত্র নিউইয়র্ক টাইমস যে প্রকাশিত একটি সংবাদের ভিত্তিতে প্রাথমিক খোঁজখবর ছাড়াই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় গত বছর ৩ অক্টোবর। প্রায় ছ’মাস বিনা বিচারে তাঁকে জেলবন্দি রাখার পর অবশেষে দেশের সর্বোচ্চ আদালত তাঁর গ্রেপ্তারি ও বন্দিত্বকে সম্পূর্ণ বেআইনি আখ্যা দিয়ে খারিজ করে দিয়েছে। বিচারপতিরা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন এই গ্রেপ্তারের কোনও ভিত্তি নেই, কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শুধু মিথ্যা মামলাই সাজানো হয়নি, অভিযুক্তের আইনজীবীকে সময়মত গ্রেপ্তারির খবর জানানো হয়নি। কিকারণে গ্রেপ্তার সেটাও জানানো হয়নি অভিযুক্তকে। এমনকি আদালতে তোলার আগেই তাঁকে জেলে পোরার নির্দেশ দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
দেশের অন্যান্য সৎ, নির্ভীক ও মেরুদণ্ড সোজা রাখা সাংবাদিকদের মতো প্রবীর পুরকায়স্থও ছিলেন মোদী সরকারের টার্গেট। অনেকদিন ধরেই তলে তলে বাহানা খোঁজা হচ্ছিল কীভাবে তাঁকে বিনা বিচারে জেলে আটক করা যায়। যেসব সাংবাদিক ন্যায়, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়, সরকারে দুর্নীতি-অনিয়ম প্রকাশ্যে হাজির করে, সরকারের সমালোচনা করে তাদের সকলকেই একে একে জেলের অন্ধকারে বন্দি রাখার পরিকল্পনা করে মোদী সরকার এবং রাজ্যে রাজ্যে বিজেপি সরকার। তাই মোদী জমানায় অনুগত ভক্ত সাংবাদিকদের বাদ দিয়ে বাকি সকলের বিরুদ্ধেই মামলা সাজানোর বার্তা দেওয়া হয় পুলিশকে। এদের যতদিন কারান্তরালে পাঠিয়ে বিনাবিচারে আটকে রাখতে পারছে ততদিন স্বস্তি নেই মোদী-শাহদের। তাই ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পরিকল্পনা করে তালিকা বানিয়ে ‘বেয়াড়া’ সাংবাদিকদের জেল পোরার অভিযান শুরু হয়। শুরু হয় গণতন্ত্র, বাক্‌ স্বাধীনতা, নাগরিক অধিকারকে উর্ধ্বে তুলে ধরা সাহসী ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকদের একে একে জেলজীবন।
শুধু সাংবাদিকদের জেলে পাঠিয়ে স্বস্তি মেলেনি। শুরু করা হয়েছে সরকারের সমালোচক সমাজকর্মী, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, ছাত্র, অধ্যাপকদের একই প্রক্রিয়ায় জেলে পোরা। একাজ যাতে অনায়াসে করা যায় তার জন্য দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসেই ২০১৯ সালে কুখ্যাত বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (ইএপিএ) সংশোধন করে অত্যন্ত ভয়ঙ্কর করা হয়। এই আইনে সরকার যাকে খুশি যখন খুশি গ্রেপ্তার করে বিনা বিচারে অনন্তকাল জেলে আটকে রাখতে পারে। গত কয়েক বছর ধরে দেশে উচ্চারিত যাবতীয় বিরুদ্ধতার কণ্ঠ স্তব্ধ করতে নির্বিচারে প্রয়োগ করা হচ্ছে এই আইন। মোদীরা দেশকে তাদের বিরোধী মুক্ত ও সমালোচনামুক্ত করতে বদ্ধপরিকর। লক্ষণীয়, এই আইনে যাদের গ্রেপ্তার করে বছরের পর বছর জেলে রাখা হচ্ছে তাদের মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে না। আটকে রাখাই লক্ষ্য। ইদানীং পর পর অনেক বন্দিকে আদালত মুক্তি দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনও সারবত্তা না পেয়ে। ধরা পড়ে যাচ্ছে আসল শয়তানি।

 

Comments :0

Login to leave a comment