Post Editorial

লেনিন— সাম্রাজ্যবাদ ও আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজি

উত্তর সম্পাদকীয়​


শ্রীদীপ ভট্টাচার্য
২২ এপ্রিল ভি আই লেনিনের ১৫৫তম জন্মদিবস। আবার এই বছরই লেনিনের মৃত্যুশতবর্ষ। সর্বহারা বিপ্লবী আন্দোলন তথা কমিউনিস্ট আন্দোলনের পক্ষ থেকে লেনিনের জীবন, কার্যধারা ও অবদান নিয়ে আলোচনা বৃদ্ধি পেয়েছে। সমগ্র বিংশ শতাব্দী জুড়ে কমরেড লেনিন সম্পর্কে কৌতূহল, আলোচনা লক্ষিত হয়েছে। এমনকি একবিংশ শতাব্দীতেও লেনিন সম্পর্কে আলোচনা ও ঔৎসুক্য হ্রাস পায়নি। মৃত্যু শতবর্ষে এই আলোচনার উৎসাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা তো খুবই স্বাভাবিক। মানব সভ্যতার বিকাশ ধারায় গুণগত পরিবর্তন সাধনে কমরেড লেনিন অসামান্য ভূমিকা পালন করেছেন। শ্রেণি শোষণের অবসান ঘটিয়ে শোষণহীন সমাজতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তোলার অতুলনীয় নজির গড়ে তুলেছিলেন তিনি। সর্বহারা বিপ্লবের মধ্যদিয়ে পুঁজিবাদ ও শোষণ ব্যবস্থার অবসান ঘটানো সম্ভব একথা তিনি প্রমাণ করেছিলেন রুশ দেশের বুকে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে।
সর্বহারা বিপ্লব সফল করা, কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলা এই অত্যন্ত কঠিন কাজগুলি করার সাথে সাথে সর্বহারা বিপ্লবের মতবাদ অর্থাৎ মার্কসবাদের সমৃদ্ধিকরণের ক্ষেত্রেও লেনিন অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। লেনিনের অবদান ও ভূমিকাকে স্মরণে রেখেই বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলন সর্বহারা বিপ্লবের মতবাদকে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ হিসাবে অভিহিত করেছে।

লেনিন সাম্রাজ্যবাদকে ব্যাখ্যা করলেন
 মার্কসীয় অর্থনীতি পুঁজিবাদী শোষণ ব্যবস্থাকে তুলে ধরেছে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার গতিধারাকে ব্যাখ্যা করেছে। পুঁজিবাদী সমাজের উৎপাদন ব্যবস্থার অভ্যন্তরেই উদ্বৃত্ত মূল্য সৃষ্টি হয়। পুঁজিপতি উদ্বৃত্ত মূল্য থেকেই রাষ্ট্র সহ পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অন্তর্গত অন্যান্য অংশের প্রাপ্য মেটানোর পর যা তার কাছে রয়ে যায় তাই হলো মুনাফা। এই মুনাফাই হলো পুঁজিবাদী ব্যবস্থার চালিকা শক্তি (Motive Force)। কার্ল মার্কস পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দেখালেন পুঁজির বৃদ্ধি ঘটে পুঁজির সঞ্চয় প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। পুঁজির সঞ্চয় প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ক্রমান্বয়ে পুঁজির কেন্দ্রীকরণ ঘটে। পুঁজির কেন্দ্রীকরণ ও তার বিকাশ সম্পর্কে মার্কস আলোচনা করেছেন। পুঁজিবাদের মধ্যেই একচেটিয়া (Monopoly) গড়ে উঠেছে, বিকশিত হয়েছে।
 ১৯০৩ থেকে ১৯০৭, ১৯০৮ যে সময়ে সাম্রাজ্যবাদের আবির্ভাব ঘটছে তখন কার্ল মার্কস নেই। তাঁর মৃত্যু হয়েছে। সেই সময়ে লেনিন রুশ দেশে মার্কসীয় মতবাদের প্রয়োগে সর্বহারা বিপ্লবের কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনের সংহতি ও ঐক্যের জন্যও সেই সময়ে তিনি কাজ করছিলেন। মার্কসীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে পুঁজিবাদী প্রক্রিয়ার মধ্যে সাম্রাজ্যবাদী স্তরকে লেনিন সবিস্তারে ব্যাখ্যা করলেন। ‘সাম্রাজ্যবাদ — পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ পর্যায়’—  লেনিনের অসাধারণ সৃষ্টি। এই গ্রন্থেই সাম্রাজ্যবাদ প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে লেনিন দেখালেন যে পুঁজিবাদের বিকাশের অনিবার্য পরিণতি একচেটিয়া পুঁজিবাদ।
‍ একচেটিয়া পুঁজিবাদের যুগকেই সাম্রাজ্যবাদের যুগ হিসাবে ব্যাখ্যা করলেন লেনিন। সাম্রাজ্যবাদ যেমন পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ স্তর, আবার সাম্রাজ্যবাদের যুগকে পুঁজিবাদের ক্ষয়িষ্ণু রূপ হিসাবে লেনিন চিহ্নিত করলেন। পুঁজিবাদের সমস্ত দ্বন্দ্বগুলির তীব্রতর রূপ এই যুগে প্রত্যক্ষ করা যায়। সাম্রাজ্যবাদের যুগকে সর্বহারা বিপ্লবের যুগ হিসাবে তিনি ব্যাখ্যা করলেন।

সাম্রাজ্যবাদের পাঁচটি বৈশিষ্ট্য
 সাম্রাজ্যবাদ প্রসঙ্গে আলোচনায় লেনিন মার্কসীয় অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করলেন। লেনিন দেখিয়েছিলেন, পুঁজিবাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যেই একচেটিয়াদের তৈরি হওয়ার উপাদান বিদ্যমান। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, যে পুঁজিবাদের বিকাশ ধারাতেই সর্বোচ্চ স্তর হিসাবে সাম্রাজ্যবাদের আবির্ভাব ঘটে। সাম্রাজ্যবাদের ৫টি বৈশিষ্ট্যের কথা লেনিন উল্লেখ করেছেন —
(১) একচেটিয়া পুঁজি সমস্ত জাতির জীবনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে;
(২) ব্যাঙ্ক পুঁজি ও শিল্প পুঁজির সম্মিলনে গড়ে উঠল লগ্নিপুঁজি;
(৩) পণ্য রপ্তানির জায়গা নিল পুঁজি রপ্তানি;
(৪) সমগ্র বিশ্বকে একচেটিয়া পুঁজিবাদ ভাগ করে নিল। একচেটিয়াদের বিভিন্ন সংঘ অর্থাৎ কার্টেল, ট্রাস্ট গড়ে উঠল।
(৫) বৃহৎ পুঁজিবাদী দেশগুলি দুনিয়াটাকে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছে। উপনিবেশ তৈরি করে এই দখলদারি কায়েম হয়েছে।
 সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে লেনিনের এই গ্রন্থ ১৯১৬ সালে প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থেই লেনিন দেখালেন লগ্নী পুঁজি হলো সাম্রাজ্যবাদের যে যুগ তারই সৃষ্টি। ১৯১৬ সালের পর ১০৮ বছর অতিক্রান্ত। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, লেনিনের এই সাম্রাজ্যবাদ তথা লগ্নিপুঁজি সংক্রান্ত ব্যাখ্যার সঠিকতা প্রমাণিত হলো অল্পদিনের মধ্যে। দুনিয়াকে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগির প্রশ্নে যুদ্ধ ঘটবেই। এই যুদ্ধ ঘটবে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির মধ্যে। সুতরাং সাম্রাজ্যবাদী যুগে যুদ্ধ অনিবার্য। এই বিষয়টি লেনিন বিশেষভাবে তুলে ধরলেন। ১৯১৬ সালের পর মাত্র ৩০ বছরের মধ্যে বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করল দুইটি ভয়ঙ্কর বিশ্বযুদ্ধ। সাম্রাজ্যবাদীদের মধ্যে ক্ষমতা ও এলাকা বৃদ্ধির জন্যই বিশ্বযুদ্ধ।
 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির মধ্যে গুরুতর পরিবর্তন ঘটল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটল ফ্যাসিস্ত শক্তির পরাজয়ের মধ্য দিয়ে। সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি যথেষ্ট দুর্বল হলো। শ্রমিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা অর্থাৎ সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা শক্তি অর্জন করল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে বিশ্বের প্রথম সর্বহারার রাষ্ট্র সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন গড়ে উঠেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে সমাজতান্ত্রিক শিবির গড়ে উঠল। সাম্রাজ্যবাদ তথা বিশ্ব পুঁজিবাদ সর্বহারা বিপ্লবী শক্তির অগ্রগতিতে ভীত হয়ে পড়ল। সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি সমাজতন্ত্র তথা বিশ্ব সর্বহারা আন্দোলনের চ্যালেঞ্জ নতুন বিশ্ব পরিস্থিতিতে কিভাবে মোকাবিলা করবে তার জন্য বিশেষ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল। সম্মেলনের সিদ্ধান্ত মতো তারা কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর দুনিয়ায় পুঁজিবাদের অত্যন্ত দ্রুত অগ্রগতি ঘটে। লগ্নিপুঁজির শক্তিবৃদ্ধি ঘটে। ১৯৭৩ থেকে পেট্রোলিয়ামকে কেন্দ্র করে এই প্রায় ৩০ বছরের বিশ্ব পুঁজিবাদের বাধাহীন অগ্রগতি ব্যাহত হয়। পেট্রো ডলার উপচে পড়ছিল পশ্চিমী অর্থাৎ সাম্রাজ্যবাদী দেশের ব্যাঙ্কগুলিতে। পুঁজির চরম কেন্দ্রীকরণ ঘটছিল। ফিনান্স বা লগ্নিপুঁজি শুধু অবাধে বৃদ্ধিই পাচ্ছিল না, পণ্য বিনিময়ের অনুপাতে আর্থিক পুঁজির লেনদেন বহুগুণ বৃদ্ধি পাচ্ছিল। সরাসরি পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও ফাটকা (Speculative)  কার্যধারাই পুঁজির প্রধান কার্যধারা হিসাবে উপস্থিত হলো। লেনিন যখন ‘লগ্নিপুঁজি’ নিয়ে আলোচনা করেছিলেন, সেই লগ্নিপুঁজির নির্দিষ্ট ‘জাতি-রাষ্ট্র’কে ভিত্তি করেই উদ্ভব ঘটেছিল, কিন্তু ১৯৮০-র  দশকের শেষ থেকে লগ্নিপুঁজি আন্তর্জাতিক চরিত্র অর্জন করল। আন্তর্জাতিক চরিত্র নিয়ে এর কার্যধারা বিভিন্ন ফিনান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানকে ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক চরিত্রের এই লগ্নিপুঁজির আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হলো। লেহম্যান ব্রাদার্স, বিয়ার স্ট্রিম (Bear Stream), মেরিল লিঞ্চসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যারা ‘মটগেজ’ নিয়ে ব্যবসা করত, আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজির শক্তিশালী হাতিয়ার। অত্যন্ত শক্তিশালী আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজির বড় বেশি প্রয়োজন হয়েছিল অবাধ বিনিয়োগ। দুনিয়ার যে কোনও দেশে যেখানেই মুনাফার সন্ধান, সেখানেই এই আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজি তার বিনিয়োগ চাইল। কিন্তু এই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলির পক্ষ থেকে নিজেদের সার্বভৌমত্ব ও স্বনির্ভরতা অক্ষুণ্ণ রেখে উন্নয়নের লক্ষ্যে যে সমস্ত বিধি-ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। সেই বিধি ব্যবস্থাগুলি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করল। আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজির অবাধ গতিবিধি ও যত্রতত্র বিনিয়োগ সম্ভব করার লক্ষ্যে ‘নয়া উদারনীতি’ (Neo-Liberalisation)-র পথ আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজির স্বার্থে গড়ে তোলা হলো।
 আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজির স্বার্থে নয়া উদারনীতি পুঁজিবাদী দেশগুলিতে মজুরির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস করল। এককথায় বলা যায় উৎপাদনশীলতার সাথে সঙ্গতি রেখে মজুরি বৃদ্ধি ঘটল না। কর্পোরেটের স্বার্থবাহী ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠাই হলো নয়া উদারনীতি। ভারত তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
 আন্তর্জাতিক লগ্নীপুঁজি তার অবাধ গতিবিধির স্বার্থে অশান্তির পরিবেশ পছন্দ করে না। আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজির আধিপত্যের কালে বিশ্বযুদ্ধের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে না। তার অর্থ অবশ্য এই নয় যে উদারনীতির যুগে বিশ্বে অসংখ্য যুদ্ধ হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক লগ্নীপুঁজি নয়া-উদারনীতির পথ গ্রহণ করতে বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলিকে বাধ্য করে। শিক্ষা-স্বাস্থ্য সহ পরিষেবা ও জনকল্যাণমূলক ক্ষেত্র থেকে রাষ্ট্র ক্রমান্বয়ে হাত গুটিয়ে নেবে। রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রগুলি ক্রমান্বয়ে বৃহৎ পুঁজিপতিদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। ভারতের মতো দেশে নয়া-উদারবাদের প্রত্যক্ষ প্রয়োগ ঘটছে, আমরা তা প্রত্যক্ষ করছি।
 এটা সত্য যে বর্তমান বিশ্বে কোনও পুঁজিবাদী দেশই আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজিকে অস্বীকার করতে সক্ষম নয়। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, হেজ (Hedge) ফান্ড, সিকিউরিটি আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজির হাতিয়ার। এদের নির্দেশিকাকে অগ্রাহ্য করে কোনও পুঁজিবাদী দেশ স্বাধীনভাবে অগ্রসর যদি হতে চায়, তাহলে আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজির সরে যাওয়াসহ (Flight) নানা গুরুতর সংকটের সম্মুখীন সেই দেশকে হতে হবে। আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজির নির্দেশিত নয়া-উদারনীতির মূল আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু শ্রমিক-কৃষক-খেতমজুর। রুটি-রুজির অধিকার আজ আক্রান্ত। সাম্রাজ্যবাদের যুগে দেশে দেশে লগ্নিপুঁজির শোষণের বিরুদ্ধে শ্রমিকশ্রেণিকে কৃষক, খেতমজুর সহ সমস্ত শোষিত ও গণতান্ত্রিক জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে প্রতিটি জাতি-রাষ্ট্রে সর্বহারা বিপ্লবকে সফল করে সমগ্র দুনিয়ায় সর্বহারা রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে অগ্রসর হতে হবে। সাম্রাজ্যবাদের যুগে, লগ্নিপুঁজির শোষণ ও আধিপত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে শ্রমিকশ্রেণিকেই নেতৃত্ব দিয়ে শোষণ ব্যবস্থার অবসানের লক্ষ্যে এগুতে হবে। কমরেড লেনিন এভাবেই সর্বহারা শ্রেণির বিপ্লবী কর্তব্য পালনের কথা স্মরণ করিয়েছিলেন। নভেম্বর বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বিশ্ব সর্বহারা বিপ্লবের প্রক্রিয়া শুরু করলেন।
 বর্তমানে আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজির লুণ্ঠন, অমানবিক শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিটি দেশে শ্রমিক সহ শোষিত-বঞ্চিত মানুষের লড়াই চলছে। রুটি-রুজি-অধিকারসহ সার্বভৌমত্ব-স্বনির্ভরতা রক্ষার জন্য দেশে শ্রেণি ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে ঐক্যবদ্ধভাবে দৃঢ়তা সহকারে দায়িত্ব পালনে আরও বেশি করে এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিটি দেশে পুঁজির শোষণের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলা বিপ্লবী আন্দোলনের সামনে কর্তব্য। স্মরণে রাখতে হবে এই কথা।

ক্রোনি ক্যাপিটালিজম
 পুঁজিবাদের বর্তমান সময়ে ‘ক্রোনি ক্যাপিটালিজম’-এর কথা ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। যদিও পুঁজিবাদের যুগে এই এটা পূর্বে পরিলক্ষিত হয়নি; এমন বলা যাবে না। ক্রোনি পুঁজিবাদের অর্থ হলো রাষ্ট্র কর্তৃক বিশেষ পুঁজিপতি-কর্পোরেট ও কর্পোরেট সংস্থাকে বিশেষ বন্ধু-বিবেচনায় বাড়তি সুযোগ প্রদান করা। আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজির অবাধ দাপটের যুগে এটা অহরহ ঘটছে। আমাদের ভারতের দিকে তাকালে দেখা যাবে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অন্য দেশের সাথে শিক্ষা-অর্থনৈতিক-সামরিক ও শিল্প চুক্তিতে আদানি গোষ্ঠীকে বেশি বেশি করে গুরুত্ব দিয়ে ওই কর্পোরেট সংস্থার স্বার্থ দেখছেন। আদিবাসীদের জমি থেকে উৎখাত করে খনিজ পদার্থ উত্তোলনের জন্য আদানি গোষ্ঠীকে সেই জমি উপহার দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন। এই রাজ্যের সরকারও পরিষেবা-ক্ষেত্রে বিশেষ বিশেষ কর্পোরেট সংস্থাকে অবাধে লুঠ করার অনুমতি দিচ্ছেন। এগুলিই হলো ক্রোনি ক্যাপিটালিজমের উদাহরণ।
 আন্তর্জাতিক লগ্নীপুঁজির আধিপত্যের যুগে ক্রোনি পুঁজিবাদ স্বাভাবিক পরিণতি। একচেটিয়া পুঁজিবাদের যুগে শ্রমিকশ্রেণির নেতৃত্বে বিপ্লবী আন্দোলন কিভাবে পরিচালিত হবে সেই পথ উপস্থিত করেছিলেন কমরেড লেনিন। লগ্নিপুঁজি সম্পর্কিত লেনিনীয় ব্যাখ্যা অনুসরণ করেই আমরা আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজির বৈশিষ্ট্য ও চরিত্র ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হচ্ছি। দেশে দেশে শ্রমিকসহ মেহনতি জনগণ, মহিলা, তরুণ প্রজন্ম, আদিবাসী সহ অন্যান্য অংশের সংগ্রাম চলছে। এই সংগ্রামগুলির আন্তর্জাতিক সংহতি বড় বেশি প্রয়োজন। 
 আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজি আরোপিত ‘নয়া উদারবাদ’এর যুগে শোষণের রূপ আরও ভয়াবহ, নির্মম। এর বিরুদ্ধে দেশে দেশে সংগ্রামগুলিও পরিচালিত হচ্ছে। দেশে দেশে মেহনতি মানুষের সংগ্রামের আন্তর্জাতিক সংহতি গড়ে তুলেই অগ্রসর হতে হবে। এটাই লেনিনের শিক্ষা।

Comments :0

Login to leave a comment