বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লাগাতার উসকানিমূলক ভাষণ দিয়ে ভেবেছিলেন, ভোটদানের হার এবার আরও বাড়বে। কিন্তু প্রথম দফার ভোটের হারেই তাঁর সেই বেলুন চুপসে যায়। চারশো পারের ‘গপ্পে’ও কোনও কাজ হয়নি। মোদীর সরকার সরকারিভাবে ভোটের হার প্রকাশের ‘অনুমতি’ই দিতে পারছিল না নির্বাচন কমিশনকে। বিরোধীদের চাপে পরিসংখ্যান প্রকাশে বাধ্য হলেও কমিশনের তথ্যে ধরা পড়ে বিস্তর অসঙ্গতি। অন্য তিন দফার তুলনায় চতুর্থ দফায় ভোট বেশি পড়েছে বলে কমিশন দাবি করেছে পরিসংখ্যানের মাধ্যমে। সোমবারের চতুর্থ দফার ভোটের পর বৃহস্পতিবার কমিশনের তরফে চার দফার ভোটদানের হার সম্মিলিতভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু শত চেষ্টা করেও গত লোকসভা ভোটের পরিসংখ্যান থেকে বাড়িয়ে দেখানো সম্ভব হয়নি। মোদী-ম্যাজিকের কোনও প্রমাণও দেখাতে পারছে না কমিশন। ফলে পাঁচ বছরের ব্যবধানে কার্যত একই হার তুলে ধরা হয়েছে, শতাংশের হিসাব সামান্য কমিয়ে।
সোমবার রাত পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, ভোট পড়েছিল ৬৩.০৪ শতাংশ। এদিন চার দফার গড় হার প্রকাশের সঙ্গে আলাদা করে চতুর্থ দফার ভোট দানের শেষ হিসাবও জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ওইদিন ভোট পড়েছে ৬৯.১৬ শতাংশ। এই দফাতেই একমাত্র ২০১৯’র থেকে ভোট বেশি (৩.৬৫%) পড়েছে। কমিশনের এদিনের হিসাব থেকে জানা যাচ্ছে, এবার চার দফা মিলিয়ে ভোট পড়েছে ৬৬.৯৫ শতাংশ। গত লোকসভা নির্বাচনে যে হিসাব ছিল ৬৭.৪ শতাংশ। কমিশনের তথ্য বলছে, এবছর তৃতীয় দফায় শেষ পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৬৫.৬৮ শতাংশ। ২০১৯-এ তৃতীয় দফায় ভোট পড়েছিল ৬৮.৪ শতাংশ। গত মাসের ২৬ তারিখ দ্বিতীয় দফার ভোট হয়েছে। সেদিন ভোট পড়ে ৬৬.৭১ শতাংশ, কিন্তু আগের বার এই দফাতেই ভোটদানের হার ছিল ৬৯.৬৪ শতাংশ। আর এবারের প্রথম দফার ভোটের সঙ্গে গতবারের ভোটদানের হারের মারাত্মক ফারাক রয়েছে। ২০১৯’র প্রথম দফায় ভোটদানের হার ছিল ৬৯.৪৩ শতাংশ, সেখানে এবার প্রথম দফায় ভোট পড়েছে মাত্র ৬৬.১৪ শতাংশ। আরও তিন দফা ভোট বাকি রয়েছে। পঞ্চম দফার ভোট পরের সোমবার। কমিশনের বক্তব্য, বাকি তিন দফায় যাতে ভোটদানের হার বাড়ে সেজন্য মানুষকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার জানান, ‘ভোটারদের ভোট দেওয়ার জন্য সচেতন করে তুলতে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন বলেই আমরা বিশ্বাস করি।’ আরও বেশি সংখ্যায় ভোটাররা এগিয়ে আসুন, বার্তা দিয়েছে কমিশন। এই চার দফায় ২৩ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৩৭৯ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হয়েছে। বাকি তিন দফায় দিল্লি, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, লাদাখ, জম্মু-কাশ্মীর, মহারাষ্ট্র সহ বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ভোট রয়েছে। ব্যাকফুটে থাকা মোদীবাহিনী এখন এই বাকি তিন দফাকেই খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরতে চাইছে বলে মনে করছেন রাজৈনতিক বিশ্লেষকরা।
প্রসঙ্গত, নানা বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। বিশেষত একনাগাড়ে বিদ্বেষমূলক কিংবা সাম্প্রদায়িক উসকানির ভাষণ দিয়ে চললেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সহ বিজেপি’র শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে অদ্ভুতভাবে নীরব কমিশন। বিরোধীরা একযোগে বিষয়টি নজরে আনা সত্ত্বেও কমিশনের ‘ঘুম’ ভাঙানো যায়নি। এরই মধ্যে ভোট পড়ার হার নিয়ে কমিশনের তথ্যগত অসঙ্গতির প্রশ্নেও ক্ষোভ জানায় সিপিআই(এম), কংগ্রেস সহ অধিকাংশ বিরোধী দল।
Voter Turnout
চার দফার পরেও ভোটদানের হার গতবারের থেকে বাড়ল না
×
Comments :0