Ganashakti Post Editorial

মাননীয়া, পাড় তো ভাঙবেই, আমার গঙ্গা পুজো চাই

সম্পাদকীয় বিভাগ

Ganashakti Post Editorial

ধন্যবাদ, মমতা ব্যানার্জি। আপনি ক্রমশ আমার ‘আসল’ পরিচয়ের শিকড়ে পৌঁছে দিচ্ছেন। আমি হিন্দু, হিন্দুত্ব আমার সংস্কৃতি— আপনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন। সাভারকার এসেছিলেন। পারেননি। ১৯৪৬-৪৭? সেই রক্তস্নানও পারেনি জাগিয়ে তুলতে আমার ‘হিন্দু পরিচয়সত্তাকে। শ্যামাপ্রসাদ চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর সমর্থকরা তাঁর জন্য অনেক কাগজ, কালি খরচ করেছেন। কিন্তু হয়নি। দেশভাগের পরে ওপার বাংলা থেকে আসা আমার পূর্বপুরুষরা ‘হিন্দু’ হয়ে ওঠেননি। হয়ে উঠেছিলেন লাল ঝান্ডার বাহক— বিদ্রোহী।

 

 

 কী লজ্জা! স্বাধীনতার আগে থেকে রাজ্যে ঘাঁটি গেড়ে থাকা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ উত্তর কলকাতার একটি ছোট এলাকার বাইরে পা রাখতে পারেনি। তারা সংগঠক এনেছিল মহারাষ্ট্র থেকে। সেই সংগঠকরা দিনের পর দিন রাজ্যে কাটিয়েছেন। তাতেও কাজ হাসিল হয়নি। ‘হিন্দুত্ব’ আমার মনে বাসা বাঁধতে পারেনি। 
‘সিপিএম’ আর বামফ্রন্ট সরকার সব নষ্টের গোড়া। কী বলেছিল তারা? ধর্ম ব্যক্তিগত। তার সঙ্গে সরকার চালানোর কোনও সম্পর্ক নেই। ধর্মীয় অনুষ্ঠানে টাকা দেবে না সরকার। মানুষ মানে তাদের কাছে কী? সেই ‘জঘন্য’, ছোটজাতের ধারণা— গরিব আর ধনী। পিছিয়ে থাকা আর এগিয়ে থাকা। পিছিয়ে থাকা মানে? তাও ধর্মের ভিত্তিতে নয়। আর্থিক, সামাজিকভাবে পিছিয়ে থাকা। ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ গ্রাস করেছিল আমাদের মগজ। আপনি মুক্তির পথ এনেছেন। 

 

 

 

রামনবমী হলো। শাসক দলের নেতারা অস্ত্র হাতে নাচলেন। রাজ্য আগে দেখেনি। বসিরহাট, ধুলাগোড়ে সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামা হলো। পথ তৈরি হলো। দেখেছে আমার রাজ্য আগে কখনও? কক্ষনো নয়। কমিউনিস্টদের নেতারা দায়ী। ওরা বলতো, ‘দাঙ্গা করলে মাথা ভেঙে দেব।’ বলতো, ‘সরকার না চাইলে দাঙ্গা হয় না।’ যা তা কথা। হিন্দুর শক্তি প্রদর্শন অপরাধ? তার জন্য ‘মাথা ভেঙে দেবে?’ কমিউনিস্টদের এই ধারণা আমার বারোটা বাজিয়েছে। আমাদের বারোটা বাজিয়েছে। আমি ভুলতে বসেছিলাম আমার একটা মন্দির চাই। বড় মন্দির। কালীঘাট, দক্ষিণেশ্বরের মতো অনেকগুলি থাকলেও হবে না। সরকারি টাকার, সরকারি মন্দির চাই। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের মতো। বামফ্রন্ট বানায়নি। এরা বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, হলদিয়া শিল্প নগরী, সল্টলেক স্টেডিয়াম, বানতলা লেদার কমপ্লেক্সের মতো আবোলতাবোল জিনিস বানিয়েছে। কারখানা বানাচ্ছিল— সিঙ্গুরে, শালবনীতে। কোনও মানে হয়? আপনি মন্দির বানাচ্ছেন। দীঘায়। সরকারি জমিতে। জয়তু। 

 

 


এখানেই শেষ নয়। আমাদের কী শিখিয়েছিল ‘সিপিএম’? আদিবাসীদের বড় অংশ গরিব। তফসিলি জাতির মধ্যেও অনেকে পিছিয়ে থাকা। মুসলিমদের মধ্যেও অনেকেই আর্থিক, সামাজিকভাবে পশ্চাৎপদ। তাঁদের ভাতা দিতে হবে। যতদিন না তাঁরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সমাজের মূলস্রোতে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে। এ কোনও কথা হলো? এ সবই ভগবান ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরের সৃষ্টি। তারাই জাত তৈরি করে, বর্ণাশ্রম তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন উঁচু জাতের হিন্দু ব্রাহ্মণদের। সেই চার ভাগের সমাজের স্রষ্টাদের অন্যতম পুরোহিতরা। তাঁরা হলেন ঈশ্বরের সহকারী। তাঁদের ভাতা লাগবে, বামফ্রন্ট ভেবেছে একবারও? না। আপনি ভেবেছেন। দিয়েছেন। আপনি ছাড়া কেউ পারত না। আপনি শতায়ু হন। শতায়ু কেন? আপনি সহস্র বছর বাঁচুন। আপনিই এই অভাগা, নাস্তিকদের খপ্পরে পড়ে, ‘মুসলিমদের তোল্লা দিয়ে’ গোল্লায় যেতে বসা রাজ্যের আসল হিন্দু-পুনর্জাগরণবাদী।

 

 

‘সাক্ষাৎ দুর্গা’ বলেছিল আপনাকে’’ আরএসএস। তা নিয়ে কত সমালোচনা ম্লেচ্ছদের। ঠিকই তো বলেছিল। আপনিই আমার দুর্গা, পার্বতী, কালী। আপনার এবং আপনার দলবলের হাত ধরে আমরা পৌঁছে যাবো আমাদের অভিষ্ট লক্ষ্যে— হিন্দুত্বের বাংলায়। ‘পুনর্জাগরণবাদী’ বললে আবার কমিউনিস্ট, প্রগতিশীল বলে দাবি করা একদল লোক খেপে ওঠে। ওদের তো ‘ভিশন’ নেই আপনার মতো। তাই কোনও ‘মিশন’ও নেই। সিঙ্গুরে ‘কিষান ভিশন’ বন্ধ। কিন্তু তা দিয়ে তো আপনার ‘ভিশন’ বোঝা যায় না! কাজ হলো কিনা, কৃষক ফসলের দাম পেল কিনা, খেতমজুরের মজুরিতে কেন পশ্চিমবঙ্গ দেশে অনেক পিছিয়ে, কেন কেরালায় মজুরি এত বেশি, কেন রাজ্যে বেকারি গত এগারো বছরে আপনার শাসনে বেড়েছে— এসব ফালতু প্রশ্ন। কাজের ব্যবস্থা করা কি সরকারের দায়িত্ব? কারখানা গড়ে তোলা কি মুখ্যমন্ত্রীর ‘প্যাশন’ হতে পারে? 

 

 


স্বাধীনতার পরে বাংলার শিল্প যখন ধুঁকছে, মন্বন্তরে বাংলা যখন বিধ্বস্ত, তেভাগার দাবিতে কাকদ্বীপ-খাঁপুর যখন অস্ত্র তুলে নিচ্ছে, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি কি একবারও সে সব নিয়ে কিছু বলেছিলেন? না। বলার দরকারই নেই। সরকারের কাজ নয় সে সব নিয়ে ভাবার। সরকার ফিরিয়ে দেবে জনতার আত্মপরিচয়। সরকার, মানুষের করের টাকায় মনে করিয়ে দেবে— কে হিন্দু, কে মুসলিম। সরকার আমাদের নিয়ে যাবে আমাদের অতীতে। ভবিষ্যৎ? সে তো কাশীর বিশ্বনাথের মরজিতে ঠিক হবে। তিনি যা চাইবেন তাই হবে। অতীত মানে? হিন্দু পুনর্জাগরণ মানে? কমিউনিস্ট, প্রগতিশীলরা বোঝে? তা এক স্বপ্নের দেশ! পুরুতরা সমাজের মাথা হবেন। কৃষকরা চাষ করবে। শুধু চাষ করবে। জমির মালিক হবে জমিদার। কৃষকরা হাত কচলাতে কচলাতে জমিদারের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়াবে। মুসলিমরা এক প্রান্তে বসবাস করবে। তারা আর ছোটজাত আদিবাসী, তফসিলি জাতির জোয়ানগুলো হবে জমিদারের লেঠেল। আর ‘লেবার’? দূর তারা গ্রামে থাকবে কেন? বাইরে বাইরে থাকবে। ভিন রাজ্যে। পারলে বিদেশে। গ্রামে থাকবে কামারশালা, চুল কাটার দোকান, তেলেভাজার দোকান। সেখানে যারা কাজ করবে তারা শ্রমিক। কোনও প্রশ্ন করা চলবে না। বিদ্রোহ ঘোরতর নিষিদ্ধ হবে। আপনি, মাননীয়া দিদি আমাদের সেই অতীতে ফিরিয়ে যাওয়ার পথ করে দিচ্ছেন। সেই পথে কারখানা অপ্রয়োজনীয়। কিছুই দেখে না এরা। পড়েও না। গণদেবতা পড়েনি। দেখেওনি। মাথা কে সমাজের? শিক্ষক? না, না। জোতদার। ফাটকাবাজ। 

 


আপনি আমাদের সেই পথে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রথমে গতি ছিল ধীরে। এখন আপনার গতি বেড়েছে। যে কাজ সঙ্ঘ পারেনি, সে কাজ আপনি করছেন। আপনাকে অভিনন্দন। কেউ বলতে পারবে আপনি আসলে মোদী-আরতি করছেন? আপনি আসলে হিন্দুত্বের কর্মী? আপনি আরএসএস’র কাজই করছেন সুকৌশলে? পারবে না। কেন? এই তো সোমবার, আপনি কী বলেছেন? আপনি নবান্নে রাজ্যের স্বাস্থ্যের হাল নিয়ে ডাকা বৈঠকে বলেছেন,‘‘তপসিয়া, তিলজলা, এন্টালি থেকে সব চিকিৎসা করতে আসে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে। জমি না দিলে মুসলিম এলাকার লোকেরাই চিকিৎসা পাবে না।’’ আহা, কী চমৎকার বলেছেন। বিধান রায় ডাক্তার ছিলেন। জ্যোতি বসু ব্যারিস্টার। আর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তো নাকি কত বই পড়েছেন। তাঁদের কারো মাথায় এসেছে এই যুক্তি? আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তাঁদের প্রতিষ্ঠানের জমি দখল আটকাতে আন্দোলন করছে। আন্দোলন তো নয়, আসলে বিশৃঙ্খলা। ওই যে আমতায় মরে যাওয়া ছেলেটা। আনিস খান। সেও তো ছিল এসবের নেতা। আপনি সেই আন্দোলনে জল ঢালতে কী সুন্দর বোঝালেন? আলিয়া শুধু মুসলিমদের! জমি না দিলে শুধু মুসলিমদের ক্ষতি হবে! ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে কি রোগী ভর্তি করার আগে ডাক্তাররা রোগীর ঠিকানা, ধর্মীয় পরিচয় জেনে নেন? সংবিধান কি অনুমোদন দেয়? আমি ঠিক জানি না। হয় তো নেয়। কিংবা নেয় না। কিন্তু আপনি যখন বলেছেন, তখন সেটাই ঠিক। অসুবিধা শুধু মুসলিম প্রধান এলাকাগুলিরই হবে। 

 

 

যাদবপুর, বেহালা, শ্যামবাজার, বাগবাজারের বাসিন্দাদের কোনও অসুবিধা হবে না। তারা হিন্দু তো! যত নষ্টের গোড়া ওই ‘তপসিয়া, তিলজলা, এন্টালির’ লোকগুলির। তবে সেই এলাকাতেই আপনি ছুটে গেছিলেন রিজওয়ানুর রহমানের মৃত্যুর পরে। মনে আছে? রিজওয়ানুরের দাদা বিধায়ক হয়ে গেছে। সে এখন চুপ। রিজওয়ানুরের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরে যাদের আপনি ‘দোষী’ বলেছিলেন, সেই পুলিশ অফিসারদের প্রমোশন দিয়েছেন আপনিই। খুব ভালো করেছেন। যখন ‘তপসিয়া, তিলজলা, এন্টালি’র দরকার ছিল, তখন ব্যবহার করেছেন। এখন দরকার ‘হিন্দুত্ব’। এখন কলকাতাকে বারাণসী বানাতে হবে। বারাণসীর ‘বেনারসী শাড়ি’ শিল্প ধুঁকছে। সাংসদ খোদ প্রধানমন্ত্রী। তাতে কী? বেনারসী শাড়ির কারিগররা অন্য কাজ খুঁজছেন। মালিকরা শাড়ি বানানো ছাড়ছেন। আমাদের এখানেও তো তাই। তাঁতিরা ধুঁকছেন। তাঁত প্রায় বন্ধ। তাঁতের শিল্পীরা খেতমজুর, দিনমজুর হচ্ছেন দলে দলে। অনেকে পরিযায়ী শ্রমিক বনেছেন। একদম বারাণসী-মডেল। মোদী-মডেল। তিনিই তো আধুনিক ভারতের, এই শতাব্দীর ভারতের অবতার — যুগপুরুষ!

 

 

তাই আপনার গঙ্গা আরতির উদ্যোগ। সরকারি টাকায়। এত খুশি হয়েছি, ভাবতে পারবেন না। গঙ্গার ভাঙনে গ্রাম হারিয়ে যাচ্ছে। ভূগোল বদলে যাচ্ছে। বাড়ি, খেত উধাও হয়ে যাচ্ছে। মাটি-মানুষ — সব হারিয়ে যাচ্ছে। হাজার হাজার মালদহ-মুর্শিদাবাদবাসী ভিটে হারিয়ে দিশাহারা। কিন্তু সে সব কি সরকারের দেখার কথা? সরকার বড়জোর কিছু বালির বস্তা দয়া করে ফেলতে পারে। সেই বালির বস্তা ফেলার জন্য বরাদ্দ টাকা থেকে আপনার দলের নেতা, কর্মীরা কিছু টাকা কাটমানি খেতে পারে। সেও তো অতীতে ছিল। রাজাদের পেয়াদা, বরকন্দাজ, মুন্সিরা কিছু টাকা সরাতো না? বিলক্ষণ সরাতো। ‘হিন্দুত্ব’-এ কাটমানি নেই — এমন কথা সাভারকার কোথাও লেখেননি। আসল কথা ভাঙন নয়। আসল কথা আরতি। আসল কথা মানুষ নয়। আসল কথা ‘ঈশ্বর’। ভাঙন তো অনেক আগেও ছিল। থাকবেই। নদী থাকলে ভাঙন হবে না? কিন্তু আরতি? সে তো বাদ যেতে পারে না। তা যে খুব দরকার বাংলার। বাংলার যে ‘হিন্দুত্ব’ দরকার। নাহলে কমিউনিস্ট আর ম্লেচ্ছদের আবার দাপাদাপি শুরু হবে। যেভাবে এরা আবার গ্রামে গ্রামে পদযাত্রা, শহরে অধিকার যাত্রা শুরু করেছে, যেভাবে ‘চোর তাড়াও’ বলে চিৎকার শুরু হয়েছে, তাতে যেভাবে হিন্দু-মুসলিম-খ্রিস্টান, আদিবাসী-তফসিলি-ব্রাহ্মণ সব মাতামাতি শুরু করেছে, তাতে ‘মা গঙ্গা’ই ভরসা। আপনি ঠিক করেছেন। আমাদের আরতি চাই। প্রিন্সেপ ঘাটের সিঁড়িতে বসে পা দোলাবো আর আরতি দেখবো। দেখতে দেখতে আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসবে স্বর্গারোহনের বাসনায়। 

 

 

আমি দেখতে পাবো না, আমার সামনে দিয়ে বয়ে যাবে হাল্কা বাদামি জল। সেই জলে মিশে থাকবে মানিকচক, জলঙ্গীর হাজারও মা, বোনের চিবুক বেয়ে গড়িয়ে পড়া লোনা ক্ষীণ স্রোত। আমি ভুলে যাবো এই নদীর ধারে, মাত্র কয়েক কিমি আগে সার সার চটকল, কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে গত এগারো বছরে। সেখানকার শ্রমিক অন্য রাজ্যে প্রাণ বাজি রেখে খাবারের জোগাড় করছেন। তাঁর সন্তান গঙ্গারই ধারে, আমারই রাজ্যে, পড়ে থাকা বোমাকে বল ভেবে কুড়োতে গিয়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে। আপনাকে কথা দিচ্ছি আমি সব ‘কাজ, মজুরি, ফসলের দাম, পাকা বাঁধ’র দাবি ভুলে যাবো। আমি ক্রমশ, আপনার নেতৃত্বে ‘হিন্দু’ হয়ে উঠছি। আমার ক্লাসমেট ছিল যে তিলজলার ছেলেটা, সে আমারই সামনে ‘মুসলিম’ হয়ে উঠছে। আরতি, গঙ্গা পূজায় মুছে যাবে আমার রাবীন্দ্রিক সবটুকু বাঙালিয়ানা। জেগে উঠবেন মোদী, আমার মধ্যে— আপনার উদ্যোগে। মাননীয়া, আমার মুখ্যমন্ত্রী, এই ‘হিন্দুত্বের পুনর্জাগরণের’ পুরোহিত, সেনাপতি সব আপনি। আপনাকে সেলাম!

Comments :0

Login to leave a comment