‘‘আমরা কেউ সলিল, ঋত্বিক, সুকান্তর যুগে ফিরে যেতে পারব না। কিন্তু তাদের চিন্তা চেতনাকে মাথায় রেখে এগিয়ে যেতে হবে। দেশকে বাঁচাতে গেলে বাংলাকে বাঁচাতে হবে।’’
বুধবার ‘গণশক্তি প্রিন্টার্স‘ আয়োজিত ‘সুকান্ত-সলিল-ঋত্বিকের বাংলায় আজকের সংস্কৃতি’ শীর্ষক আলোচনায় একথা বলেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
এই অনুষ্ঠানে প্রকাশ করা হয়েছে ‘গণশক্তি প্রিন্টার্স’-র ডায়েরি এবং ক্যালেন্ডার প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রেখেছেন প্রবীণ সিপিআই(এম) নেতা বিমান বসু, ‘গণশক্তি’ পত্রিকার সম্পাদক শমীক লাহিড়ীও।
সেলিম বলেন, ‘‘আজকে যারা দেশকে ধর্মীয় রাষ্ট্রে পরিবর্তন করতে চাইছে তারা পরিকল্পিত ভাবে বাংলার ঐতিহ্যকে শেষ করতে চেয়েছে। তারাই মমতাকে তৈরি করেছে। আমাদের নান্দনিক চর্চার ধারাকে শেষ করার চেষ্টা হয়েছে। অতীতকে ভুলিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। সব ফ্যাসিস্ট এভাবেই আক্রমণ করে।’’
সেলিম বলেন, ‘‘ক্যালেন্ডারে ঋত্বিক, সুকান্ত, সলিলকে স্মরণ করা হয়েছে। এটাই গণশক্তির ধারা, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের স্মরণ করা।’’ তিনি বলেন, ‘‘২০২৬ এর প্রাক্কালে আমরা তাঁদের স্মরণ করছি যাঁরা আমাদের দেশের কথা, শ্রমজীবী মানুষের কথাকে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছেন।
আমাদের কাছে সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়। শ্রমজীবী মানুষের জীবন ধারার সঙ্গে সংস্কৃতি যুক্ত।’’
সেলিম বলেছেন যে ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত ‘মেঘে ঢাকা তারা’-র একটি সংলাপ ‘দাদা আমি বাঁচতে চাই‘ আজও প্রাসঙ্গিক। কান পাতলে এই কথা সব জায়গায় শোনা যাচ্ছে। আমাদের বামপন্থীদের কাজ হচ্ছে মানুষের সংগ্রামে সঙ্গে থাকা। মানুষের বাঁচার লড়াইয়ের আন্দোলন সংগ্রামকে জোরদার করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘‘দেশ ভাগ, দাঙ্গার ইতিহাস আছে। সাম্প্রদায়িক শক্তি সেই বিষয়েই উস্কানি দিচ্ছে বারবার। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর যেমন আক্রমণ হচ্ছে, এই দেশেও হচ্ছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে এই মৌলবাদী শক্তিই বলছে যে ১৯৭১ নয়, ২০২৪’র জুলাইয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। এই দেশেও সেই মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তিই সংবিধানের ৩৭০ ধারা তুলে দিয়ে বলেছিল ‘দেশ স্বাধীন হয়েছে’।
আমাদের দেখতে হবে কারা শ্রমজীবী শ্রেণির পক্ষে।’’
সেলিম বলেন, ‘‘আমরা নতুন করে সলিল সুকান্ত ঋত্বিক পাবো না কিন্তু তাদের চর্চার মধ্যে দিয়ে তাদের চিন্তা চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে হবে। সংস্কৃতির ওপর আক্রমণের মোকাবিলা করতে হবে।’’
বিমান বসু বলেছেন, ‘‘এই প্রথম আনুষ্ঠানিক ভাবে ডায়রি এবং ক্যালেন্ডার প্রকাশ করা হলো। ডায়েরি, ক্যালেন্ডার প্রথমে অল্প করে ছাপানো হতো। রাজ্য দপ্তর এবং জেলা দপ্তর গুলিতে দেওয়া হতো। পরে সেই সংখ্যা বাড়ে।’’
প্রবীণ সিপিআই(এম) নেতা এবং বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘প্রিন্টার্স একটা সময় সংকটের মধ্যে দিয়ে যায়। এখন সেই সংকট নেই। এই অনুষ্ঠান করার জন্য সবাইকে অভিনন্দন।’’ তিনি বলেন, ‘‘ঋত্বিক কখনও দেশ ভাগ মেনে নিতে পারেনি। তার সাথে স্বল্প সাক্ষাতে সেই কথা উঠে এসেছিল। সমাজে যা ঘটে তার সাথে সাহিত্য শিল্প সংস্কৃতি যুক্ত।’’
শমীক লাহিড়ী বলেন, ‘‘বস্তু জগৎ থেকেই বিকশিত হয়েছে সংস্কৃতি। পুঁজিবাদীরা সংস্কৃতিকে এমন ভাবে ব্যবহার করে যেখানে মানুষের মনে শ্রেণিবিভক্ত সমাজের পক্ষে ধারণাকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকেই চিরসত্য বলে প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই ধারণার বিরুদ্ধে ঋত্বিক-সলিল-সুকান্তের ভূমিকা অবিস্মরণীয়।’’ তিনি বলেন, ‘‘সাংস্কৃতিক আধিপত্যবাদ মানে শাসক শ্রেণির তার সংস্কৃতিকে কেবল প্রচারই করবে না, শোষিতের সংস্কৃতি এবং শিল্পে বা সাহিত্যে তার প্রতিফলনের পরিসরকেও মুছে দেবে। তা করা হয়। আমাদের লড়াই এই সাংস্কৃতিক আধিপত্যবাদের পক্ষে।’’
লাহিড়ী বলেন, ‘‘বহু মানুষ কেন দরিদ্র? কিছু মানুষ ধনবান কেন? কারণ তাদের শোষণ করা হচ্ছে। এই ব্যাখ্যা যারা করেন তারা প্রগতিশীল। মনে রাখতে হবে বুর্জোয়া সমাজ ব্যবস্থার মধ্যেও মানুষের পক্ষে সংস্কৃতি তৈরি হয়।’’ এই প্রসঙ্গে শেকসপিয়ারের উদাহরণ দেন তিনি।
লাহিড়ী বলেন, ‘‘আজকের বহুল প্রচারিত সংস্কৃতিতে মানুষের কথা কোথায়? সলিল-ঋত্বিক-সুকান্ত তাঁদের সময়ে মানুষের কথা তুলে ধরে গিয়েছেন।’’
অনুষ্ঠানে মঞ্চে ছিলেন ‘গণশক্তি প্রিন্টার্সের’ পক্ষে বিমান ব্যানার্জি, হরিলাল নাথ, জয়দীপ মুখার্জিও।
Ganashakti Printers
বাঁচাতে হবে বাংলাকে-দেশকে, আহ্বান ‘গণশক্তি প্রিন্টার্স’-র অনুষ্ঠানে
‘সুকান্ত-সলিল-ঋত্বিকের বাংলায় আজকের সংস্কৃতি’ আলোচনায় মহম্মদ সেলিম। রয়েছেন বিমান বসু, শমীক লাহিড়ী প্রমুখ।
×
Comments :0