‘যদি মারো কলসির কানা তাই বলে কি প্রেম দেব না।’ মার্কিন রাষ্ট্রপতি মোদীর ভারতকে যতই বিদ্রুপ করুন বা মোদীকে উপহাস-অবজ্ঞা করুন মোদী সরকার কিন্তু ট্রাম্পকে খুশি করতে ও খুশি রাখতে এতটুকুও কার্পণ্য করতে রাজি নন। ট্রাম্পের আবদার বলুন বা শর্ত বলুন মোদী সরকার এক এক করে আড়ালে আবডালে গোপনীয়তা বজায় রেখে পূরণ করে চলেছেন। ভারতীয় পণ্যে চাপানো যেকোনও দেশে থেকে (ব্রাজিল ছাড়া) বেশি আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য আলোচনার আড়ালে গত কয়েক মাস ধরে চলছে লাগাতার তোষামোদ। কিন্তু নাছোড় ট্রাম্প মুখে যতই মোদীকে প্রাণের বন্ধু বলে জাহির করুন মার্কিন স্বার্থে এতটুকুও ছাড় দিতে রাজি নন। তাই আলোচনা চললেও সন্তোষজনক কোনও সমঝোতার আলো দেখা যাচ্ছে না। মোদীরা ইতিমধ্যে বুঝে গেছেন ট্রাম্পের সঙ্গে যতই কোলাকুলি করুন বা ট্রাম্পকে ভোটে জেতানোর জন্য প্রচার করুন ট্রাম্পকে তাঁর শর্ত থেকে টলানো যাবে না। অতএব রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কেনা ধাপে ধাপে বন্ধ করার এবং আমেরিকা থেকে বেশি দামে তেল ও গ্যাস কেনা ধাপে ধাপে বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছে। সেই মতো পদক্ষেপও শুরু হয়ে গেছে। কথা দিতে হয়েছে রাশিয়ার বদলে আমেরিকা থেকে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম আমদানি বাড়ানোর। সোয়াবিন সহ মার্কিন কৃষিপণ্য, পশুজাত ও দুগ্ধজাত পণ্যের জন্য ভারতের বাজার খুলতে চান ট্রাম্প। তেমন হলে ভারতের কৃষক ও দুধ উৎপাদকরা বিপদে পড়বেন। যে মার্কিন কৃষি ও ডেয়ারি পণ্য ভারতে সস্তায় রপ্তানি করতে চায় আমেরিকা ভারতে সেগুলি উৎপাদন হয় বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে। আবার আমেরিকায় যে রাজ্যে সেগুলি উৎপাদন হয় সেগুলিও ট্রাম্পের বিপাবলিকান দল শাসিত। ফলে উভয়ের উপর রাজনৈতিক চাপ আছে। ট্রাম্প না ঝুঁকলে শেষ পর্যন্ত মোদীকেই দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে ট্রাম্পের কাছে গুড বয় হতে হবে।
আসলে ট্রাম্প মোদীদের রজানৈতিক দায়বদ্ধতাজনিত দুর্বলতা জানেন। ট্রাম্পের মতো মোদীরাও অতি দক্ষিণপন্থার রাজনীতির সেবক। বর্তমান বিশ্বে নিজেদের অবস্থান ও প্রভাব বাড়াতে মোদীদের ট্রাম্পের সান্নিধ্য ছাড়া গতি নেই। তাছাড়া প্রবল চীন বিরোধিতার অবস্থানকে অর্থবহ করতে হলে ট্রাম্প তথা আমেরিকার ছায়ায় আশ্রয় নিতে হবে। সুযোগ বুঝে আমেরিকাও তাদের সাম্রাজ্যবাদী ও স্ট্র্যাটেজিক লক্ষ্যপূরণে ভারতকে আষ্টে-পৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেলার ছক করে ফেলেছে। মোদীরা এখন প্রকাশ্যে যতই হম্বিতম্বি করুন আমেরিকার কেটে দেওয়া গণ্ডির বাইরে পা ফেলার উপায় নেই।
প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে চীনের অগ্রগতি ঠেকাতে ন্যাটো আটলান্টিক সামরিক জোটে ধাঁচে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় সামরিক গঠনের প্রয়াস চলছে অনেকদিন ধরেই। সেখানে টোপ দিয়ে ভারতকে একেবারে দাবার বোড়ের মতো সামনে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারপর একটার পর একটা সামরিক চুক্তি করে ভারতকে আমেরিকার সামরিক এজেন্ট বানিয়ে ফেলতে চাইছে। বাণিজ্য চুক্তির খুড়োর কলে ভারতকে দৌড় করিয়ে একটার পর একটা কাজ হাসিল করে নিচ্ছেন ট্রাম্প। আর ৫৬ ইঞ্চির বিশ্বগুরু এখন ধ্যানে আছেন।
Editorial
উনি এখন ধ্যানে
×
Comments :0