IMA R G KAR

জানালো আইএমএ, ‘লাল জামা’ বহিরাগত, সন্দীপ ঘোষেরই ঘনিষ্ঠ

রাজ্য

 ছবিতে লাল শার্ট পরিহিত কে? গত কয়েক দিন ধরে ঘনীভূত এই রহস্য অবশেষে ফাঁস হয়ে গেল আইএমএ’র বক্তব্যে। আর তার সঙ্গে সঙ্গেই আরও একবার চুনকালি পড়ল পুলিশের মুখে। 

‘ঠিক কথা বলেছে না পুলিশ; কোনও ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞ নন, পুলিশের ছবিতে দেখানো লাল জামা পরা ব্যক্তি শুধুমাত্র ডাক্তারি পোস্ট গ্র্যাজুয়েটের প্রথম বর্ষের ছাত্র। শুধু তাই নয়, আরও কিছু কীর্তি রয়েছে তাঁর’— শনিবার পরিষ্কার করে একথা জানিয়ে দিয়েছে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, বেঙ্গল শাখা। আর তারপরেই চূড়ান্ত অস্বস্তিতে পড়েছে কলকাতা পুলিশ। লালবাজারের অন্দরে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। 

আইএমএ’র বক্তব্য, আমরা তো জানি ডাঃ অভীক দে এসএসকেএম হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের পিজিটি। আর জি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ এই ব্যক্তি তৃণমূলের ‘গুড বুকে’ আছেন। শুধু তাই নয়, তাঁর পিজি কোর্সে ভর্তি নিয়েও বেশ কিছু বিতর্ক হয়েছিল। যদিও বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের আরএমও থাকাকালীন ওই কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ কৌস্তভ নায়েক তাঁকে অন্য হাসপাতালে কাজ করার মিথ্যা সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন, যাতে সার্ভিস কোটায় তিনি পিজি কোর্সে ভর্তি হতে পারেন। এছাড়াও নানা সরকারি কাগজপত্রের হেরফের ঘটানো হয়েছে তাঁর ক্ষেত্র, যারই প্রতিদানে প্রথম ইন্টারভিউয়ের ফলাফল বের হওয়ার আগেই দ্বিতীয় ইন্টারভিউতে ডাঃ কৌস্তভ নায়েক বহু সিনিয়র ও যোগ্য অধ্যক্ষকে টপকে ডিরেক্টর অব মেডিক্যাল এডুকেশন পদে আসীন হয়েছেন। 

প্রকৃতপক্ষে আর জি কর হাসপাতালের ঘটনায় ক্রাইম সিনে অর্থাৎ সেমিনার রুমে উপস্থিত বহিরাগত তত্ত্বকে চাপা দিতে তড়িঘড়ি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে কলকাতা পুলিশ যে নতুন তত্ত্ব খাড়া করেছে, সেটা যে সর্বৈব অসত্য তা আইএমএ’র কথায় এদিন পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।  

আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসক নিগ্রহ, ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার সঙ্গে মিলছে নানা রহস্যজনক ব্যক্তির যুক্ত থাকার অভিযোগ। গত ৯ আগস্ট ঘটনার অনেক পরে ‘ক্রাইম সিন’র একটি ছবি প্রকাশ্যে আসে। তার আগেই অবশ্য নিহত চিকিৎসকের মা-বাবা পৌঁছান ঘটনাস্থলে। তাঁদের বক্তব্য, সেদিন ওই ঘরে ডাক্তাররা ছাড়াও আরও অনেক মানুষের ভিড় ছিল, অবাধে যাতায়াত করছিল তারা। তবে তারা কারা তা ঠিক বোঝা যাচ্ছিল না। অনেককেই বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যাচ্ছিল, যা দেখে মনে হচ্ছিল কিছু লুকানো হচ্ছে আমাদের থেকে। সেখানে এক লাল জামা পরা ব্যক্তি ছিলেন, তার আচরণ সন্দেহজনক ঠেকছিল। তাকে সেখানে কিছু খোঁজাখুঁজি করতে দেখা যাচ্ছিল।

এই ঘটনার পর ওই সময়ের একটি ছবি প্রকাশ্যে আসে। তখনই প্রশ্ন ওঠে যে ক্রাইম সিনের সমস্ত অংশ পুলিশের ঘিরে রাখার কথা, সেখানে অত মানুষের আনাগোনা কেন। কেন তাদের আটকানো হয়নি পুলিশ বা নিরাপত্তা রক্ষীদের তরফ থেকে। ছবিতে উপস্থিত অনেককে চিনতে পারেননি জুনিয়র ডাক্তাররাও। লাল জামা পরা ব্যক্তিটি কে তার উত্তর মেলেনি। পরে জানা গিয়েছে, লালা জামা পরা ব্যক্তির নাম অভীক দে। তিনি এসএসকেএম হাসপাতালের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রথম বর্ষের ছাত্র, ফিঙ্গার প্রিন্ট বিশেষজ্ঞ নন। অথচ কলকাতা পুলিশ তাঁকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞ বলে চালিয়ে দিয়েছে। এখানেই আইএমএ প্রশ্ন তুলে বলেছে, এই অভীক দে আবার ফিঙ্গার প্রিন্ট বিশেষজ্ঞ হলেন কবে! 

উল্লেখ্য, গত কয়েক দিন ধরেই নানা প্রশ্নে তোলপাড় হয়েছে আর জি কর হাসপাতালের নৃশংস ঘটনার গতিপ্রকৃতি। ওই সেমিনার রুম সেদিন ভিড়ে ঠাসা ছিল কেন, প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা হয়েছিল কেন, তা জানতে চেয়ে সোচ্চার হয়েছে রাজ্যের মানুষ। পুলিশের পক্ষ থেকে ডিসি সেন্ট্রাল দাবি করেন সেমিনার রুমের ৪০ ফুট পর্যন্ত ঘিরে রাখা ছিল। শুধু তাই নয়, সেখানে তদন্তের সঙ্গে যুক্ত আধিকারিক এবং পদাধিকারীরাই কেবল উপস্থিত ছিলেন। তার সপক্ষে একটি ছবিও প্রকাশ করে পুলিশ। সেই ছবির ব্যক্তিদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলা হয়, সেখানে ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞ ছিলেন। লাল জামা পরা ব্যক্তিই নাকি ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞ। এতেই তৈরি হয় বিস্ময়। আইএমএ’র একটাই প্রশ্ন, ইনি আবার কবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞ হলেন!

এই প্রসঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরস, পশ্চিমবঙ্গ’র সাধারণ সম্পাদক ডাঃ উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমরা প্রথম দিন থেকেই এই প্রশ্ন তুলেছিলাম, ওইদিন ক্রাইম সিনে যাদের থাকার কথা নয় তাঁরা ছিলেন কিসের জন্য। আর জি কর হাসপাতালের সঙ্গে তাঁদের অনেকেরই সম্পর্ক নেই, তাঁরা কোনও পদাধিকারীও নন। তাহলে ওই ঘরের ভেতরে সারাদিন ধরে তাঁরা উপস্থিত ছিলেন কেন? আজ আইএমএ পরিষ্কার শনাক্ত করেই দিয়েছে তাদের একজনকে। এঁদের কুপরামর্শের ফলেই তো ওই ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালানো হয়েছে, অনেক পরে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। আসলে এখানে মেডিক্যাল কাউন্সিলেই তো লুটের ভোট হয়েছে। যাঁরা সেখানে মাথা হয়েছেন, তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধে তো অভিযোগের অন্ত নেই। স্বাস্থ্য প্রশাসনে একটা সিন্ডিকেট, দুবৃত্তায়ন তৈরি হয়েছে। বহু নাম আমরা সিবিআই’কে দিয়েছি।

Comments :0

Login to leave a comment