পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও প্রশিক্ষণ ছাড়া অস্থায়ী কর্মীদের দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করানো হচ্ছে কলকাতা বন্দরে। তার ফলে ঘটছে দুর্ঘটনা। কলকাতা বন্দরের নেতাজী সুভাষ ডকে রবিবার রাতে এক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ঘটল সেখানকার মালপত্র ওঠানামা করা এক অস্থায়ী কর্মীর। ওই দুর্ঘটনায় মৃত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ আদায়ের দাবিতে অন্যান্য শ্রমিকরা বন্দরের কাজ বন্ধ রাখেন।
বন্দরের শ্রমিকরা জানাচ্ছেন, রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা নাগাদ বন্দরের ৫নম্বর বার্থে জাহাজ থেকে কন্টেনার নামানোর কাজ চলছিল। সেই সময় জাহাজের উপরে দাঁড়িয়ে ছিলেন মহম্মদ শামসুদ্দিন খান। তিনি সিকিউরিটি গার্ডের পদে যোগ দিলেও তাঁকে দিয়ে প্রশিক্ষণ ছাড়াই সিগন্যাল ম্যানের কাজ করানো হচ্ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, ক্রেনে করে জাহাজ থেকে কন্টেনার নামানোর সময় একটি ক্রেন সামান্য দুলে গিয়েছিল। তার ফলে কন্টেনারটি বেঁকে যায়, এবং শামসুদ্দিনের মাথায় ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি। পরবর্তীকালে তাঁকে সিএমআরআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
এই ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বন্দরের শ্রমিকরা। ১,২,৪,৫,৬ এবং ৭ নম্বর বার্থ সহ সমস্ত যন্ত্রচালিত এবং শ্রমিকদের দিয়ে পণ্য খালাস করানো হয় এমন বার্থে কন্টেনার ওঠানামা বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে আসেন সিআইটিইউ অনুমোদিত ক্যালকাটা পোর্ট অ্যান্ড শোর মজদুর ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ।
শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে ট্র্যাফিক ম্যানেজার, টার্মিনাল ম্যানেজার সহ কলকাতা বন্দেরর শীর্ষ আধিকারিকরাও ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। সিআইটিইউ নেতৃত্বের মধ্যস্থতায় ঠিক হয় মৃত শ্রমিকের পরিবারকে শেষকৃত্যের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ দেবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দর কর্তৃপক্ষ সেই দাবি মেনে নিয়েছে। এর পাশাপাশি নিহত শ্রমিকের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ এবং পরিবারের ১জন সদস্যকে নিয়োগের দাবিও জানান সিআইটিইউ নেতৃত্ব।
বন্দর কর্তৃপক্ষের তরফে লিখিতভাবে শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়ার পরে রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ ফের পণ্য পরিষেবার কাজ আবার শুরু হয়।
ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সমর মণ্ডল জানাচ্ছেন, ২৫ডিসেম্বরের জন্য সোমবার কাজ সম্ভব হয়নি। মঙ্গলবার ফের বন্দর আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলা হবে। আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব মৃত শ্রমিকের পরিবারের হাতে ক্ষতিপূরণ তুলে দেওয়ার এবং পরিবারের একজনের নিয়োগের ব্যবস্থা করার।
বন্দরের শ্রমিকরা জানাচ্ছেন, কলকাতা বন্দরে শ্রমিকের সংখ্যা অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। স্থায়ী নিয়োগ হচ্ছে না। শ্রমিকদের বাধ্য করা হচ্ছে ওভারটাইম করতে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম ছাড়া ওভারটাইমের ফলে দুর্ঘটনার সংখ্যাও বাড়ছে।
সিআইটিইউ নেতৃত্ব জানাচ্ছেন, চলতি বছরের ৩ জুলাই বন্দরের মধ্যে একটি পন্যবাহী ট্রলারের ধাক্কায় প্রাণ হারান মহম্মদ শফিক নামে এক স্থায়ী শ্রমিক। তিনি কার্গে ওভারসিয়ার পদে নাইট ডিউটি করছিলেন। সেই ঘটনার ক্ষেত্রেও ইউনিয়নের তরফে হস্তক্ষেপ করা হয়, এবং মৃত শ্রমিকের পরিবারের ১ সদস্য বন্দরে চাকরি পেয়েছেন।
যদিও শ্রমিকদের ক্ষোভ, লাইসেন্স ছাড়াই ট্রলার চালাচ্ছেন পণ্যবাহী চালকরা। তারফলে দুর্ঘটনা ঘটছে। বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোনও সুরাহা হচ্ছে না।
............
ক্যাপশন: দুর্ঘটনায় এক শ্রমিকের মৃত্যুর কারণে কলকাতা বন্দরে কর্মীদের বিক্ষোভ।
Comments :0