আক্রমণ হয়েছে সিপিআই(এম)’র ওপর। নেতৃত্বে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি। আহত সিপিআই(এম) কর্মীরা। আবার পুলিশ গ্রেপ্তারও করেছে সিপিআই(এম) কর্মীদের। তৃণমূলের আক্রমণ এবং পুলিশের নির্লজ্জ ভূমিকার প্রতিবাদে শনিবার তুফানগঞ্জ শহরে বিশাল মিছিল করল সিপিআই(এম)।
শনিবার এই মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, সিপিআই(এম) কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায়, পার্টি নেতা জীবেশ সরকার, তমসের আলি, মহানন্দ সাহা প্রমুখ।
শুক্রবার রাতে তৃণমূলের বালাভূত অঞ্চল সভাপতি আফতার আলির নেতৃত্বে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা ভয়াবহ আক্রমণ চালায়। দুই পার্টিকর্মী কর্মী নুর মহম্মদ এবং নজরুল হক হাসপাতালে ভর্তি। তাঁদের প্রাণ রক্ষা করতে গিয়ে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন পার্টি কর্মী। এই ঘটনার পর তৃণমূলী দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তার না করে পুলিশ আটক করেছে সংশ্লিষ্ট এলাকার সিপিআই(এম)’র চার কর্মীকে।
কোচবিহারের তুফানগঞ্জ এবং মাথাভাঙায় দু’টি কর্মীসভায় এদিন বক্তব্য রাখেন মহম্মদ সেলিম। দুর্নীতিগ্রস্ত এবং স্বৈরাচারী তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ডাক দেন। পাশাপাশি বিজেপি’র সাম্প্রদায়িক বিভাজনে খেটে খাওয়া মানুষের ঐক্যের সামনে বিপদও ব্যাখ্যা করেন। তিনি মনে করিয়ে দেন যে তৃণমূলের চুরির বিরুদ্ধে মানুষকে নিয়ে এ রাজ্যে প্রথম সোচ্চার হয়েছে বামপন্থীরাই। কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডি বা সিবিআই চুপ ছিল।
২০১১ সালের পর থেকে তৃণমূল টানা অত্যাচার চালিয়েছে বালাভূত গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। প্রতিবাদে খেটে খাওয়া গরিব মানুষ দলে দলে যোগদান করছেন সিপিআই(এম)-এ। এতেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে তৃণমূল। সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ বলেন যে এ কারণেই এই আক্রমণের পথ বেছে নিয়েছে তৃণমূল।
এদিন মিছিল শেষে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, যারা আক্রান্ত, পুলিশ তাদের ধরছে, আর তৃণমূলের যে সমস্ত নেতাদের নেতৃত্বে গুন্ডামি, মাস্তানি করা হলো, তাদের পাহারা দিচ্ছে পুলিশ, এটা চলবে না। এদিনের এই মিছিল জানান দিলো পুলিশকে নিরপেক্ষ হতে হবে। তা না হলে মানুষ যেমন চোর তাড়াচ্ছে, তেমনি পুলিশকেও তাড়াবে।এদিন সাংবাদিক সম্মেলনও করেন সেলিম। সভায় তিনি বলেন, বিজেপি আর তৃণমুলের মধ্যে ঝগড়া শুধু কে বেশি চুরি করেছে, তাই নিয়ে। আর ওদের দলের নেতারা প্রতিদিন এই ঝান্ডা থেকে ওই ঝান্ডায় যাচ্ছে, আবার ফেরত আসছে। এরা দল বদলায় নিজের উন্নতির জন্য।
মাথাভাঙার সভায় সেলিম বলেন, বিজেপি রামনবমী, হনুমান জয়ন্তীর নামে অস্ত্র নিয়ে মিছিল করছে। মসজিদের সামনে গিয়ে উস্কানিমূলক কথা বলছে,শ্লোগান দিচ্ছে। ইট-পাটকেল ছুঁড়ছে। দাঙ্গা বাঁধাচ্ছে। বিজেপি আরএসএস এখন নতুন ধর্ম শেখাচ্ছে। রামনবমী আর হনুমানজয়ন্তী করতে মন্দিরে যাচ্ছে না। ওরা সব মসজিদের দিকে যাচ্ছে। মাজারের দিকে যাচ্ছে। এতেই স্পষ্ট বিজেপি, আরএসএসের উদ্দ্যেশ্য কি! ওরা চায় সংখ্যাধিক্যবাদ। এর থেকেই জন্ম নেয় ফ্যাসিবাদ। স্বৈরতন্ত্র কায়েম করতে চায় বিজেপি। ভাবুন তো হাওড়ায় বুলডোজার নিয়ে কেউ মিছিল করতে যায়?
তিনি বলেন, বিজেপি আসলে প্রথমে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বলে, পরে উদ্বাস্তু, নিম্নবর্গের মানুষের ওপর বুলডোজার চালায়। সারাদেশ তার সাক্ষী। বিজেপি আসলে দেশের মানুষকে জাতপাত, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, যে কোনও প্রশ্নে ভাগ করতে চায়। আর এজন্য বিজেপি লালঝান্ডাকে এত ভয় পায়। কারণ লালঝান্ডা সব মানুষকে একত্রিত করে। নিজের হক যদি আদায় করতে হয় তবে ভাগাভাগি নয় জোট বাঁধতে হবে।
সিপিআই(এম) কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায় বলেন,নির্বাচন কমিশন এখনও ভোটের দিনক্ষণ ঘোষনা করে নি। আমরা পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি ও তৃণমুলকে হারাতে প্রস্তুত। এদিনের দুটি সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিপিন শীল, প্রসেনজিত সরকার, অমিত দে ও মকসেদুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন প্রবীন সিপিআই(এম) নেতা অরুন চৌধুরী ও সিপিআই(এম)জেলা সম্পাদকন্ডলীর সদস্যরা। দুটি সভায় সভাপতিত্ব করেন তমসের আলি ও হরিশ বর্মন।
Comments :0