চাকরি বাতিলের তালিকায় নাম খোদ মুখ্যমন্ত্রীর ভাইঝির!
স্কুলে গ্রুপ-সি পদে চাকরি বাতিলের তালিকায় রয়েছে ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ ডায়মন্ডহারবার পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অমিত সাহার নামও!
মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যাও বেআইনিভাবে চাকরি পেয়েছেন, ওএমআরশিট বিকৃত করে বেআইনিভাবে চাকরি জুটিয়েছেন ভাইপো সাংসদের ঘনিষ্ঠ অনুগামীও। স্রেফ এই দু’টি চিত্রেই আরও যেন স্পষ্ট হচ্ছে গত দশ বছর ধরে চলা নিয়োগ দুর্নীতির ভয়াবহ চেহারা। কার্যত সরকার-শাসক দলের যৌথ তৎপরতায় শিক্ষাক্ষেত্রে সংগঠিত এই ন্যক্কারজনক দুর্নীতির ছবি আরও একবার সামনে এল।
শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্ট ৮৪২ জন গ্রুপ-সি শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল করেছে। এই শিক্ষাকর্মীদের চাকরি বেআইনিভাবে হয়েছে, একথা আদালতকে জানিয়েছে খোদ স্কুল সার্ভিস কমিশন। গ্রুপ-সি পদে নিযুক্ত ৭৮৫ জনের চাকরির সুপারিশপত্র বাতিল করতে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-কে নির্দেশ দিলেন কলকাতা উচ্চ আদালতের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সুপারিশপত্র ছাড়াই নিয়োগপত্র প্রাপক আরও ৫৭ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশও তিনি দিয়েছেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে।
সেই তালিকা প্রকাশ হতেই দেখা গিয়েছে, তাতে রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির মামাতো দাদার মেয়ে বৃষ্টি মুখার্জির নাম। তাঁর বাড়ি রামপুরহাটের কুশুম্বায়, যে কুশুম্বা গ্রামে বেড়ে ওঠার নানা কাহিনী প্রায়শই শোনা যায় মুখ্যমন্ত্রীর গলায়। সেই গ্রামেই রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর মামার বাড়ি। সেখানে পরিবার নিয়ে থাকেন মুখ্যমন্ত্রীর মামা অনিল মুখোপাধ্যায় ও তাঁর ছেলে নীহার মুখোপাধ্যায়।
এই নীহার মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে বৃষ্টি মুখোপাধ্যায় গ্রু-সি পদে চাকরি পেয়েছিলেন বোলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। অবশ্য তিনি দিন কয়েক স্কুল গিয়ে আর চাকরি করেননি। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শারীরিক অসুস্থতার কারণেই তিনি চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়েছিলেন। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলে দিন কয়েক মাত্র গিয়েছিলেন বৃষ্টি। তারপর আর যাননি। বেতনও তিনি পাননি বলেই জানা গিয়েছে। স্কুলের এক শিক্ষকের কথায়, ‘‘সে নিয়মিত স্কুলে আসত না। দু-তিন দিন স্কুলে এসেছে। কোনও কাজ করত না। স্কুলে এসে বসে থাকত। কারও সঙ্গে তেমন কথাও বলত না। দেখে অস্বাভাবিক লাগত। তারপর হঠাৎ ইস্তফা না দিয়ে চলে যায়।’’
এই ব্যাপারে বৃষ্টির বাবা নীহার মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘‘মেয়ে বর্তমানে মানসিকভাবে অসুস্থ। কলকাতায় চিকিৎসাধীন। দু’বছর আগে চাকরি পেয়েছিল। সে চাকরি করেনি। অসুস্থ হয়ে যায়। চাকরি ছেড়ে দেয়। ভাল ছাত্রী ছিল আমার মেয়ে, রেজাল্টও ভাল। এখন চাকরি বাতিলের তালিকায় নাম কী করে এল, বলতে পারব না। কারণ, সে তো চাকরিই করেনি। তার জায়গায় তো অন্য কারও নিয়োগ হওয়ার কথা।’’ তবে প্রশ্ন, কোনও এক কারণে তিনি চাকরি করেননি ঠিকই। কিন্তু চাকরি তো পেয়েছিলেন এবং যেভাবে পেয়েছিলেন, তাকে অবৈধ বলেই চিহ্নিত করেছে উচ্চ আদালত। অর্থাৎ নিয়োগে দুর্নীতির তালিকায় রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর ভাইঝির নাম। যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে ৬০৮ নম্বরে রয়েছে তার নাম। কীভাবে এল? কার মাধ্যমে নিয়োগ? সুপারিশ ছাড়াই কীভাবে নিয়োগপত্র পেলেন? কে তার হয়ে সুপারিশ করেছিলেন, উঠছে প্রশ্ন।
একইসঙ্গে আবার ওএমআর শিট বিকৃত করে চাকরি জোটানোর অভিযোগ তৃণমূল নেতা অমিত সাহার বিরুদ্ধে। চাকরি বাতিলের তালিকায় তারও নাম। বৃহস্পতিবারই কমিশন যে ওএমআর শিটের তালিকা প্রকাশ করেছিল, তাতেই সামনে আসে তার নাম। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে ঘুরতে থাকে সেই ওএমআর শিটের ছবি।
ওএমআর শিট বিকৃত করে হটুগঞ্জ গার্লস হাই স্কুলে গ্রুপ সি পদে চাকরি পান ডায়মন্ডহারবার পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ডায়মন্ডহারবার টাউন তৃণমূল যুব সভাপতি অমিত সাহা । এদিন হাইকোর্টে মামলার শুনানি থাকায় সকাল থেকেই ডায়মন্ডহারবারে তার বাড়ি তালাবন্ধ অবস্থায় ছিল। ওএমআর শিট প্রকাশ হতেই তা ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। গোটা ডায়মন্ডহারবার শহরের মানুষের মুখে মুখে ফিরতে থাকে তৃণমূল নেতার চুরি করে পাওয়া গ্রুপ-সি পদে চাকরির কথা। এদিন সকাল থেকেই বাড়ি তালাবন্ধ থাকায় প্রতিবেশীরা তিনি কোথায়, সেই বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি। তবে কেউ কেউ বলেছেন, পরিস্থিতি বুঝে অন্যত্র চম্পট দিয়েছে।
অভিষেক ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত এই তৃণমূলী কাউন্সিলর। নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত সুবীরেশ ভট্টাচার্য যখন ডায়মন্ডহারবার কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন, সেই সময়ে এই কীর্তিমান কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা ছিলেন।
Comments :0