MODI NO CONFODENCE

মণিপুর নামমাত্র, লোকসভায় মোদীর ভাষণে ‘ইন্ডিয়া’

জাতীয়

MODI NO CONFODENCE

মণিপুর নিয়ে মাথাব্যথা বিশেষ নেই। প্রধানমন্ত্রীর মাথাব্যথা বিরোধী বিন্যাস ‘ইন্ডিয়া’ নিয়েই। অন্তত অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভাষণ দিতে গিয়ে তা-ই বোঝালেন নরেন্দ্র মোদী। 

সরকারের সংখ্যার জোর পরখ করতে আনা হয়নি অনাস্থা, প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় তা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন বিরোধী সাংসদরা। লোকসভায় তিনদিনের বিতর্কে বিরোধীরা বলেছিলেন যে মে’র গোড়া থেকে মণিপুরে ভয়াবহ পরিস্থিতির পরেও কেন নীরব প্রধানমন্ত্রী? সংসদে তিনি বলতে অরাজি কেন? তাঁর মৌনতা ভাঙাতেই বাধ্য হয়ে আনতে হয়েছে অনাস্থা। 

মোদী বুঝিয়েছেন মণিপুর নিয়ে শব্দ খরচ করতে তিনি বা তাঁর দলের মন্ত্রীরা আগ্রহী নন মোটেই। বরং একতরফা দায় চাপিয়েছেন কংগ্রেসের ওপর। মঙ্গল এবং বুধবার বিতর্ক চলাকালীন লোকসভায় প্রায় দেখা যায়নি মোদীকে। বৃহস্পতিবার তাঁর ভাষণ নির্দিষ্ট ছিল। দীর্ঘ ভাষণের শেষ পর্বে খানিক ছুঁয়েছেন মণিপুর এবং উত্তর পূর্বকে। 

মোদী বলেছেন, ‘‘মণিপুরে সূর্যোদয় হবেই।’’ তাঁর আরও প্রতিশ্রুতি, ‘‘উত্তর পূর্ব ঘিরে উন্নয়নের জোয়ার বইবে।’’ দীর্ঘক্ষণ মণিপুর নিয়ে কোনও কথা না থাকায় ভাষণের মধ্যেই ওয়াকআউট করেন বিরোধীরা। লোকসভার অধ্যক্ষ সাসপেন্ড করেছেন কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীকে। তাঁর ভাষণ ঘিরে তুমুল হট্টগোল বাঁধিয়েছে বিজেপি, এদিনই। 

বিজেপি বিরোধী প্রচারের সমন্বয়ের লক্ষ্যে গড়া ছাব্বিশ দলের বিন্যাস ‘ইন্ডিয়া’-কে আক্রমণের কেন্দ্রে রাখেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘সারা দেশে কংগ্রেস বিরোধী মনোভাব গভীর। বিপক্ষের যে বন্ধুরা কংগ্রেসকে সামনে রেখে চলছেন, তাঁরা মনে রাখবেন কংগ্রেস দেশের সংস্কৃতি, রীতি বোঝে না। আপনাদের অনেকে দেশকে বোঝার চেষ্টা করেন। বেশ বদলে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টায় শামিল হচ্ছেন কেন।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘বিরোধীদের সব নেতাই তো প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার।’’ 

কংগ্রেস সম্পর্কে এদিনও তিনি বলেন, ‘‘অহঙ্কারের কারণেই পতন হয়েছে। চারশো থেকে নেমে এখন চল্লিশ আসন।’’ মোদীর যুক্তি, ‘‘কংগ্রেসের কোনও কিছু নিজের নয়। একজন বিদেশি এই দলের প্রতিষ্ঠাতা। প্রতীক বা বিচারধারা কোনটিই নিজের নয়।’’ 

এরপরই তাঁর অভিযোগ, ‘‘কংগ্রেস সরকার ১৯৬৬’র ৫ মার্চ মিজোরামে বিমানবাহিনী দিয়ে হামলা করেছিল।’’ মোদী বলেন, ‘‘১৪ আগস্ট যন্ত্রণার দিন। দেশ ভেঙে তিন টুকরো করেছিল কংগ্রেস। তার মূলে (মুসলিম) তোষণের রাজনীতি।’’ আরএসএস’র বিচারবোধে পুষ্ট মোদী কোনও প্রমাণ ছাড়াই লোকসভায় বলেছেন, ‘‘যারা স্লোগান দেয় ‘ভারত টুকরে টুকরে হোঙ্গে’ তাদের পাশে দাঁড়ায় কংগ্রেস।’’ 

এর আগে বিরোধীরা অনাস্থা এনে বিতর্ক করেছিল ২০১৯-এ। লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি’র আসন বেড়েছিল। সেই প্রসঙ্গ টেনে মোদীর মন্তব্য, ‘‘আপনার যার বিরোধিতা করেন তার মঙ্গলই হয়। ২০২৪’র ভোটে আরও বাড়বে আমাদের আসন।’’ 

মোদীর দাবি, ভারতীয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, হিন্দুস্তান এরোনেটিকস লিমিটেড বা ‘হ্যাল’ এবং জীবনবিমা নিগম বা এলআইসি’র সর্বনাশ করার অভিযোগ করেছিল বিরোধীরা। তিনটি ক্ষেত্রেই নজিরবিহীন সাফল্য মিলেছে। কংগ্রেসের শাসনে গরিবি বেড়েছে। তাঁর মেয়াদে ডিজিটাল ইন্ডিয়া, মেক ইন ইন্ডিয়া, স্টার্ট আপ ইন্ডিয়ায় অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে। ভারত এখন জিডিপি’তে সারা বিশ্বে পঞ্চম। 

মোদী এবং বিজেপি’র এমন দাবির পালটা বহু তথ্য বারবারই হাজির করেছে বিভিন্ন অংশ। দেখা গিয়েছে বেশিরভাগ দাবিই ভুয়ো। চলতি অধিবেশনে কেন্দ্রই জানিয়েছে মোদীর ৯ বছরে ছাড় দেওয়া হয়েছে ১৪ লক্ষ কোটি টাকার অনাদায়ী ঋণ। ঘনিষ্ঠ শিল্পমহল লাভ পেয়েছে।যদিও খাতায় ব্যাঙ্কের এত বড় ধাক্কা সামলে মুনাফা দেখানো হয়েছে। চোট পড়েছে সাধারণ আমানতকারীর ওপর। যেমন দীর্ঘ মেয়াদী সঞ্চয় তহবিলে সুদের অঙ্ক সমানে কমানো হয়েছে। অবসরের পর সেই অর্থের ওপর নির্ভরশীল মানুষ বিপন্ন হয়েছেন। এলআইসি’কে দিয়ে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার কেনানো হয়েছে। শেয়ারের দাম পড়েছে। আর বিমার জন্য বাড়তি অঙ্কে কিস্তির টাকা দিতে হচ্ছে আমজনতাকে।     

Comments :0

Login to leave a comment